ঈদের আগে জামিন পেতে ভিড়

ঈদের আগে প্রতিদিনই আদালত পাড়ায় জামিনপ্রার্থীদের ভিড়। সকাল থেকেই হাইকোর্ট ও ঢাকার নিম্ন্ন আদালতে আসছেন কারান্তরীণদের স্বজনরা। কেউ জামিন পাচ্ছেন, আবার কেউ পাচ্ছেন না। যেসব আসামি জামিন পাচ্ছেন তাদের স্বজনরা আনন্দে আত্মহারা হচ্ছেন। কিন্তু যারা জামিন পাচ্ছেন না তাদের স্বজনরা মন খারাপ করছেন। এ সময় কারাবন্দিদের মায়েদেরকে কান্না করতেও দেখা গেছে। প্রায় চার মাস ধরে নাশকতার এক মামলায় কারাগারে থাকা মা হাফসা আক্তারের জামিন চাইতে হাইকোর্টে আসে শিশু বর্ষা ও নূরী। সমপ্রতি মায়ের মুক্তির জন্য মানববন্ধনে হৃদয়স্পর্শী এক বক্তব্য দিয়ে বেশ আলোচনায় নূরী

আইনজীবীর তথ্যমতে, গত সোমবার নাশকতার এক মামলায় চার মাস ধরে কারাগারে থাকা মায়ের জামিনের খবর নিতে হাইকোর্টে আইনজীবীর চেম্বারে এসেছিল দুই শিশু বর্ষা ও নূরী। বাবা বিএনপি’র কর্মী আবদুল হামিদ ভূঁইয়া পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বাবাকে না পেয়ে মা হাফসাকে আটক করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

এরপর গত ২৭শে নভেম্বর থেকে মা হাফসা আক্তার কারাগারে আছেন। গত ৬ই মার্চ মায়ের জামিনের জন্য হাইকোর্টে আসে দুই শিশু। হাইকোর্ট মায়ের জামিন দেন। কিন্তু গত ১০ই মার্চ চেম্বার আদালত দুই শিশুর মা হাফসা আক্তারের জামিন স্থগিত করে দেন। এরপর ৩১শে মার্চ ওই স্থাগিতাদেশ তুলে নিতে আবেদন করেছেন হাফসার আইনজীবী। আজ ওই আবেদনের ওপরে শুনানি হওয়ার দিন ধার্য রয়েছে।

এদিকে, ঢাকা রেলওয়ে ও বংশাল থানার মামলায় কারাগারে আছেন ইখতিয়ার কবির। তিনি ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট। ছেলে আয়াছ ও স্ত্রী জুঁইকে নিয়ে তিনি রায়েব বাজারে থাকতেন। হঠাৎ নাশকতার মামলায় আটক করা হয় তাকে। ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী জুঁই-এর দিন কাটছে নিদারুণ কষ্টে। কয়েকদিন পরপরই ছোট্ট ছেলে আয়াসকে নিয়ে স্ত্রী জুঁই স্বামীর জামিনের খবরাখবর নিতে যান আদালতে। বিচারিক আদালতে বহু চেষ্টা করেও কোনো কাজ হয়নি। তাই শেষ ভরসা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। জুঁই মানবজমিনকে বলেন, আমার স্বামী মিথ্যা মামলায় জেল খাটছেন। ছেলেকে নিয়ে খুব কষ্টে কাটছে আমাদের দিন। ছোট্ট ছেলে বাবা বলে কান্না করে। জুঁই আরও বলেন, আমার বৃদ্ধ শাশুড়ি কান্না করতে করতে শেষ। ছেলের চিন্তায় পাগলপ্রায়। শাশুড়ি তার ছেলের জামিন কবে হবে বার বার জানতে চান। কিন্তু কিছুই বলতে পারি না। এই কয়েকদিন আগেও ছেলের জন্য কী কান্না। বাধ্য হয়ে বলেছি ঈদের আগে জামিন পাবে আপনার ছেলে। সেই থেকে প্রতিদিনই আমরা শাশুড়ি জানতে চান, কবে জামিন হবে আমার কবিরের। আমি তাকে এখন আর এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পরছি না।

নাশকতার আরেক মামলার আসামি মো. জামাল হোসেন। তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। গত বছরের নভেম্বর মাসে গাড়িতে আগুন দেয়া চেষ্টার অভিযোগে আটক হন তিনি। তার স্বজনরা জামিনের জন্য বিচারিক আদালতে দৌড়াদৌড়ি করে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন তার স্বজনরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। জামালের ১৬৪ ধারার জবানবন্দি সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী জামালের বোন টেইলার্সের ব্যবসা করতো। বোনের জন্য ইসলামপুর থেকে কাপড় কিনে গ্রামে পাঠিয়ে দিতো। গত বছরের ৫ই নভেম্বর বিকালে তিনি ইসলামপুর মার্কেটে যান। পরে নয়াবাজার থেকে গুলিস্তানে যাওয়ার জন্য একটি বাসে ওঠেন জামাল। তার পিছনের সিটে হেলপার একটি ব্যাগ পায়। হেলপার ব্যাগের বিষয়ে তার কাছে জানতে চায়। একপর্যায়ে হেলপার বাসের ড্রাইভার ও কন্ডাক্টরকে ডেকে বলে, তিনি বাসে আগুন দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এরপর তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সেই থেকে কারাবন্দি আছেন জামাল।

ইখতিয়ার কবির ও জামালের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান খান মানবজমিনকে বলেন, এই দুই জনের জামিনের জন্য আবেদন করেছি। ছেলের জামিন করিয়ে দেওয়ার জন্য দুই পরিবারের বৃদ্ধ বাবা-মা ফোন করে শুধু কান্নাকাটি করেন। ঈদের আগে জামিন আবেদন লিস্টে এলে শুনানি হবে। তা নাহলে ঈদের পরে শুনানি হবে।

manabzamin