দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি এবং ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি-সমঝোতার প্রতিবাদসহ নানা ইস্যুতে কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি। এসব কর্মসূচিকে শুরুতে জনসম্পৃক্ততামূলক এবং পরে সময়-সুযোগমতো এক দফার আন্দোলনে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। আন্দোলনের ধরন-প্রকৃতি নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন দলের হাইকমান্ড। একই সঙ্গে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গেও বৈঠক করে নেওয়া হচ্ছে মতামত। সবার মতামতের ভিত্তিতে নতুন কর্মসূচি নির্ধারণ করবে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। আজ সোমবার কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা চলছে। এ অবৈধ সরকার অপসারণের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই চলমান আন্দোলন আরও গতিশীল করতে এবং সফল সমাপ্তির দিকে নিয়ে যেতে তারা আলোচনা করছেন। কর্মসূচি কী হবে তা পরে ঠিক করা হবে।
জানা গেছে, আগামী শুক্র অথবা শনিবার ঢাকায় সমাবেশ করার চিন্তা করছে বিএনপি। এজন্য গত দু’দিন ঢাকার পাশের জেলাগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে প্রস্তুতি সভা করেছেন সাংগঠনিক নেতারা। এ সমাবেশ থেকে একগুচ্ছ কর্মসূচির ঘোষণা আসবে, এমনটাই বলছেন তারা। কর্মসূচি বাস্তবায়নে এরই মধ্যে জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন দায়িত্বশীলরা।
সূত্র জানায়, বৈঠকে কেউ কেউ এক মাসের কর্মসূচি নিয়ে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার পরামর্শ দেন। সেখানে কেউ কেউ আন্দোলনকে আরও গতিশীল করতে ডান-বামসহ ইসলামী দল বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীকে যুগপৎ আন্দোলনে নেওয়ার প্রস্তাব করেন। বেশির ভাগ নেতা ৩ মাসের কর্মসূচির রোডম্যাপ করার পরামর্শ দেন। তবে কতদিনের কর্মসূচি দেওয়া হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। তাদের প্রস্তাবিত কর্মসূচির মধ্যে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ এবং জাতীয় সংলাপ করার প্রস্তাব দিয়েছেন কেউ কেউ। ভারতের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী যেসব অঞ্চল দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে রেল করিডোর দিয়ে চলাচল করবে, সেসব স্থানে বিক্ষোভ মিছিল এবং কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি দেওয়ারও প্রস্তাব দেন তারা। পাশাপাশি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও কর্মসূচি হাতে নিতে বলা হয়। সমমনাদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচিত ইস্যুগুলোতে লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ, পদযাত্রা, লংমার্চ, রোডমার্চসহ একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
১২ দলীয় জোটের শরিক বিএলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম সমকালকে বলেন, আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে ইসলামী দলসহ সরকারবিরোধী আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে যুগপতে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে কর্মসূচি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
বিএনপি নেতারা জানান, কর্মসূচি নির্ধারণে দলের সিনিয়র নেতা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গত শনিবার দুই দফায় বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে সমাবেশ, বিক্ষোভ, পদযাত্রা, গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচির প্রস্তাব দেন নেতারা।
সূত্র জানায়, একই সঙ্গে সমমনা দল ও মিত্রদের কাছ থেকেও মতামত নেওয়া হচ্ছে। দুই দফায় দলের যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষনেতা ছাড়াও ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভায় এসব প্রস্তাবনা উত্থাপন এবং কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। এসব কর্মসূচির মধ্যে যুগপৎ বেশ কিছু কর্মসূচি আসতে পারে।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জনগণ সোচ্চার। এ সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি ও ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তির প্রতিবাদে দেশের মানুষ আন্দোলন করছে। ভারতীয় ট্রেনের জন্য যে করিডোর চুক্তি হয়েছে তা জাতির জন্য অমঙ্গল বয়ে আনবে। এটা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। দেশের স্বার্থেই বিএনপি কর্মসূচি দেবে। শিগগির নতুন কর্মসূচি আসবে।
samakal