ইসি সদস্যদের মতভেদ চাপা থাকছে না

ছাইচাপা থাকছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি) সদস্যদের মতভেদ। জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ইসি সদস্যরা বিভিন্ন ইস্যুতে ততই রেষারেষিতে জড়াচ্ছেন। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে সাংবিধানিক পদধারীদের এমন আচরণ ‘অশনিসংকেত’ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিভিন্ন ছোটখাটো ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়িয়েছে। সম্প্রতি ‘জাতীয় নির্বাচনের প্রত্যাশিত পরিবেশ’ আছে কি নেই– সেই ইস্যুতে প্রকাশ্য বিতর্কে জড়ায় কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন।

এর আগে বিতর্কিত রাজনৈতিক বক্তব্যের কারণে জামালপুরের ডিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠানো এবং দ্বিতীয় দফা সংলাপের আয়োজন নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। এ ছাড়া ইভিএমের ত্রুটি চিহ্নিত করতে পারলে বিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হবে– একজন কমিশনারের এমন বক্তব্য নিয়েও নিজেরা বাগ্‌যুদ্ধে জড়ান ইসি সদস্যরা। 

বৃহস্পতিবারের কর্মশালায় আমন্ত্রণ জানিয়ে গত ১৮ অক্টোবর গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের একটি চিঠি পাঠায় ইসির জনসংযোগ শাখা। ওই চিঠির সঙ্গে পাঠানো ধারণাপত্রে ‘জাতীয় নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ না থাকা’র বিষয়ে কমিশনের বক্তব্যের সঙ্গে দুই কমিশনার দ্বিমত পোষণ করেন। তাদের দাবি, নির্বাচন কমিশনারের অজান্তেই ইসির কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের কাছে ওই ধারণাপত্র পাঠানো হয়েছে।

এ নিয়ে কমিশনার মো. আনিছুর রহমান সোমবার গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘কমিশনের সদস্য হলেও আমাদের অজান্তেই অংশগ্রহণকারীদের কাছে ওই ধারণাপত্র পাঠানো হয়েছে। আমরা কিছুই জানি না। এটা ঠিক হয়নি।’ তবে দ্বিমত পোষণকারী কমিশনের আরেক সদস্য মো. আলমগীর এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি হননি। ধারণাপত্রে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা তিনি সঠিক বলে মনে করেন না– এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা দু’জনই এ বক্তব্যকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের ব্যক্তিগত মত বলে মনে করেন। এটি কমিশনের সম্মিলিত বক্তব্য হিসেবে মানতে নারাজ।

গতকাল মঙ্গলবার একই ইস্যুতে সিইসির পক্ষে অবস্থান নিয়ে কমিশনের আরেক সদস্য ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা আহসান হাবিব খান বলেন, ‘প্রত্যাশিত যে পরিবেশ, তা এখনও সৃষ্টি হয়নি। এটা কিন্তু এখন না, প্রতিটি নির্বাচনের সামনে এমন ঘটনা ঘটে, কেউ বলার সৎসাহস রাখেননি। সবার এমন সাহস থাকে না।’

এ বক্তব্যের পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, ইসি সদস্যদের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা নেই। মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসির দুই সদস্যের দ্বিমত পোষণের বিষয়ে আহসান হাবিব খান আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা নেই। অবশ্যই নির্বাচনের পরিবেশ আছে।’

তিনি বলেন, ‘অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেটা এখনও হয়ে ওঠে নাই বলা হচ্ছে (ধারণাপত্রে)। সব সময় কি একই রকম পরিবেশ থাকে? অতীতে যে ভোটগুলো হয়েছে, আপনি কি দেখেছেন শতভাগ পারফেকশন পরিবেশ কি সব সময় ছিল? আপনারা কিন্তু একজন কমিশনারকে আরেকজন কমিশনারের মুখোমুখি করিয়ে দিচ্ছেন। অবশ্যই তারা যুক্তিসংগতভাবে বলেছেন।’

গতকাল পটুয়াখালী উপনির্বাচনের তপশিল নিয়ে বৈঠক শেষে নির্বাচন ভবন ছাড়ার সময় এ বিষয়ে সিইসির বক্তব্য জানার চেষ্টা করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। তবে সিইসি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। এর আগে সোমবার কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছিলেন, ওই ধারণাপত্র কীসের ভিত্তিতে লেখা হয়েছে, তা তিনি জানেন না। নির্বাচনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইসি সদস্যদের প্রকাশ্যে মতবিরোধ হওয়াটা সুখকর কোনো খবর নয়। পাঁচ সদস্যের কমিশনে মতবিরোধ হতেই পারে। সবাই সব ইস্যুতে একমত হবেন না। তবে সেটি নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়া সমীচীন নয়।

একইভাবে সাবেক কমিশনার রফিকুল ইসলাম মনে করেন, এমন বিরোধ প্রকাশ্যে হওয়াটা অশনিসংকেত। কারণ, এমনিতেই রাজনৈতিক বিরোধের ফলে বিদেশিরা নাক গলাচ্ছে। এখন ইসি সদস্যদের প্রকাশ্যে বিরোধ হলে তা কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।