ইসি’র ২২ সিদ্ধান্ত – নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কা

logo

স্টাফ রিপোর্টার

১১ নভেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার mzamin

facebook sharing button

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য এই ভোটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাশকতার সৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে ২৮ হাজারেরও বেশি সংখ্যক ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ৪২ হাজার ৭৬১ টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে ৮ হাজার ২২৬টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং ২০ হাজার ৪৩৭টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা এসবি (স্পেশাল ব্রাঞ্চ)। এদিকে নির্বাচন ঘিরে সার্বিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ২২টি পদক্ষেপ নিয়েছে ইসি। এসব পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে এবং সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠান করা। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে মাঠে নামবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৮ হাজার ২২৬টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, ২০ হাজার ৪৩৭টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট ভোটকেন্দ্রের ৬৭ শতাংশই এক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। গোয়েন্দা সংস্থাটি ভোটকেন্দ্রের ভৌত অবকাঠামো, থানা থেকে দূরত্ব, কেন্দ্রের নিকটবর্তী প্রভাবশালীদের বাসস্থান ইত্যাদি বিবেচনায় কেন্দ্রের ধরন নির্ধারণ করেছে। এ ছাড়া, সীমান্তবর্তী ভোটকেন্দ্র, সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত ভোটকেন্দ্রের তালিকাও শনাক্ত করেছে।

এসবি বলেছে, মাঠ কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনে বাহিনীর আন্তঃকমান্ড নির্বাচন কমিশন হতে নির্ধারণ করা যেতে পারে। নির্বাচনকালীন সময়ে অবৈধ অস্ত্রের জোগান আসতে পারে। তাই অবৈধ অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সিআইডিকে দায়িত্ব প্রদান করা যেতে পারে।

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর প্রেক্ষিতে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসবি’র দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তারা ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় ফোর্স মোতায়েন করে থাকেন। তারা ঝুঁকিপূর্ণ শব্দটির পরিবর্তে গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। আগের নির্বাচনগুলোর মতো এবারো এসবি’র প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই বিভিন্ন বাহিনীর কতোজন সদস্য ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবে তা নির্ধারণ করা হবে। উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাড়ে ১০ হাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। এতে তিনজনের মতো অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছিল। এবার সেভাবেই বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।

এদিকে গত ২০শে অক্টোবর নির্বাচনের প্রাক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ইসি। এ সময় ভোটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংক্রান্ত নানা শঙ্কার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে পরামর্শ দেন সাংবিধানিক এই সংস্থাটিকে। সেই সভার আলোকে রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এন এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে কমিশনে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার লক্ষ্যে ২২টি পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এসব পদক্ষেপ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও অনুলিপি দেয়া হয়।

যে ২২ পদক্ষেপ ইসি’র
১. ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে মতামত, সুপারিশ ও প্রস্তাবসমূহ লিখিতভাবে কমিশনকে দিতে হবে।
২. নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে বাহিনীগুলোকে নিরাপত্তা পরিকল্পনা যথাসময়ে পাঠাতে হবে।
৩. থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট করে ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যান করতে হবে। রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে বিভক্ত করে পরিকল্পনা করতে হবে।
৪. জুলাই সনদ অনুযায়ী গণভোট করতে গেলে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিতে পরিবর্তন আসতে পারে। বিষয়টি সমন্বয় করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে।
৫. গোয়েন্দা তথ্যসহ নির্বাচন সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য নিয়মিত সংগ্রহ করতে হবে এবং প্রাপ্ত তথ্য কমিশনকে নিয়মিতভাবে অবগত করতে হবে। প্রয়োজনে বাহিনীগুলোর মধ্যেও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করা যাবে।
৬. নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কিছু অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, এজন্য বাহিনীগুলোকে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
৭. যেকোনো অপতৎপরতা রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৮. নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার সুবিধার্থে সবাইকে এখন থেকেই কাজ করতে হবে।
৯. যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে যে বাহিনী ঘটনাস্থলের কাছে থাকবেন, তাকেই সর্বপ্রথম রেসপন্স করতে হবে।
১০. সক্ষমতা ও উন্নয়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার, কন্টিনজেন্সি ম্যানেজমেন্ট, সামাজিক মাধ্যম ও নির্বাচনে এআইয়ের ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে।
১১. নারীদের প্রতি সাইবার বুলিং প্রতিরোধ ও সংখ্যালঘু ইত্যাদি ইস্যু মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে।
১২. মানুষের ভয়েস ক্লোন করে বা চরিত্র হননের ঘটনা ঘটতে পারে, এটি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে।
১৩. খারাপ তথ্য প্রতিরোধে নিয়মিত ও দ্রুততার সঙ্গে ভালো তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
১৪. অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার, তফসিল ঘোষণার পর থেকে চেক পয়েন্ট বসিয়ে রেন্ডম চেক করা, প্রয়োজনে বর্ডার ও সি-রুট সিল করা, বৈধ অস্ত্র জমা নেয়া- ইত্যাদি বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১৫. নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্যাবোটাজ এর ঘটনা ঘটতে পারে- এর প্রতিরোধে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
১৬. তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিদেশি নাগরিকদের তালিকা করে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৭. কালোটাকার ব্যবহার রোধে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
১৮. পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে আউট অব কান্ট্রি ভোটিংকে (ওসিভি) নিয়েও স্যাবোটাজের ঘটনা ঘটতে পারে, যা মোকাবিলার আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে আগত ও সংরক্ষিত পোস্টাল ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১৯. বাহিনীর যেসব সদস্য দীর্ঘদিন একইস্থানে পদায়ন আছেন, নির্বাচনের আগে তাদের বদলির ব্যবস্থা নিতে হবে।
২০. অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও সাধারণ ভোটকেন্দ্র শনাক্ত করে তালিকা যথাসময়ে কমিশনে দাখিল করতে হবে।
২১. আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিস ও উপজেলা নির্বাচন অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
২২. ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সুসমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here