ইসরায়েলে প্রবেশের পর তারা মোটরসাইকেল নিয়ে পূর্ব দিকে অগ্রসর হন। প্রতিটি মোটরসাইকেলের আরোহী দু’জন করে বন্দুকধারী। যেতে যেতে পথচারী ও গাড়ির ওপর গুলি চালাতে থাকেন তারা। ১০ মাইল অতিক্রমের পর একটি বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাওয়া সড়কের দিকে তারা গতি পরিবর্তন করেন এবং সেনাঘাঁটির বেনামি ফটকের সামনে থামেন। ছোট বিস্ফোরণের মাধ্যমে তারা ফটকটি ভেঙে দেন এবং ঘাঁটির ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা কয়েকজন মিলে গ্রুপ সেলফি তোলেন। তারপর টি-শার্ট পরা ইসরায়েলের এক নিরস্ত্র সেনাকে গুলি করে হত্যা করেন।
সাময়িক সময়ের জন্য হামলাকারীদের দেখে মনে হয়েছে, তাদের গন্তব্য অনিশ্চিত; তারা জানেন না কোথায় যাবেন। পরে তাদের একজন পকেট থেকে কিছু একটা বের করেন– ভবনের একটি রঙিন মানচিত্র। তারা একত্রিত হয়ে সুরক্ষিত ভবনে একটি খোলা দরজা আবিষ্কার করেন। এক পর্যায়ে একটি কক্ষে প্রবেশ করেন, যেখানে অনেকগুলো কম্পিউটার রাখা আছে। এটা সামরিক গোয়েন্দাদের আস্তানা।
এখানে একটি কক্ষে তারা দুই সেনাসদস্যকে বিশ্রাম নিতে দেখেন। বন্দুকধারীরা তাদের দু’জনকে গুলি করে হত্যা করেন।
বন্দুকধারীদের প্রধান নিজেই এসব দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করেছেন। পরে ওই হামাস কমান্ডার গুলিতে নিহত হন। ভিডিও ফুটেজটি যাচাই করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। পরে এ নিয়ে ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছে গণমাধ্যমটি। এতে হামাস কীভাবে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর ঘাঁটিতে প্রবেশ করল, সীমান্ত অতিক্রম করল, ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিল এবং দেড়শ মানুষকে জিম্মি করল– তার বিস্তারিত ও বিস্ময়কর তথ্য জানা গেছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকাশ, স্থল ও নৌপথে হামাসের চালানো সমন্বিত হামলায় নিহত হন ১ হাজার ৩০০ জন। এটা গত ৭৫ বছরের মধ্যে ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় হামলা।
ইসরায়েলের গোপনীয়তা ও দুর্বলতা সম্পর্কে সাবধানী পরিকল্পনা ও অসাধারণ সচেতনতা ছিল হামাস ও তার মিত্রদের। ভোরের দিকে চালানো ওই হামলা ইসরায়েলকে হতবাক করেছে। কারণ, ইসরায়েল তাদের সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দাদের ওপর যথেষ্ট আস্থাশীল। ড্রোন ব্যবহার করে হামাস গাজা সীমান্তের কাছে থাকা গুরুত্বপূর্ণ নজরদারি পোস্ট ও যোগাযোগ টাওয়ার ধ্বংস করে দিয়েছিল। এ কারণে ইসরায়েল একটি অংশে কী ঘটছে, তা দেখতে পারেনি। বিস্ফোরক আর ট্রাক্টর ব্যবহার করে সীমান্তের বেড়া ভেঙে ফেলে তারা। এতে প্রথমে ২০০ হামলাকারী প্রবেশ করেন এবং পরে দিনের অন্য সময়ে আরও ১ হাজার ৮০০ জন ভেতরে যেতে সক্ষম হন। মোটরসাইকেল ও পিকআপ ট্রাকে করে তারা ইসরায়েলে হত্যার অভিযান পরিচালনা করেন। এতে কমপক্ষে আটটি সামরিক ঘাঁটি ও ১৫টি গ্রাম ও শহরের বেসামরিক মানুষ হামলার শিকার হয়েছেন।
হামাসের পরিকল্পনা নথি, হামলার ধরনের ভিডিও ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকারে এটাই প্রতীয়মান হয়, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর হতবাক করার মতো অনেক কিছুই তারা জানে। কোথায় সামরিক বাহিনীর ইউনিটের অবস্থান, কোন সময়ে তারা একসঙ্গে জড়ো হয়– এসবের ধারণ আছে হামাসের কাছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, যুদ্ধ শেষ হলে তারা তদন্ত করবে, কীভাবে হামাস এত সহজে হামলা চালাতে পারল।
সামরিক বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিট গোয়েন্দা আস্তানায় হামাসের সঙ্গে লড়াই করে। এতে অনেক প্রাণহানি ঘটে। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট ইসাক হেরজগ বলেন, এটা হলোকাস্টের পর এক দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইহুদি হত্যার ঘটনা।
সমকাল