ইশকুল খুইলাছে রে মাওলা ইশকুল খুইলাছে


আশপাশের সবকিছু কেমন যেন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে যাচ্ছে। কোনো কিছুরই হিসাব মেলানো যাচ্ছে না। জীবন-জীবিকা, রাজনীতি-অর্থনীতি, জীবন-মৃত্যুর হিসাব-নিকাশে যে চিরন্তন সূত্রগুলো আবহমানকাল থেকে কার্যকর ছিল তা ২০২২ সালের বাংলাদেশে এসে এলোমেলো হয়ে পড়েছে।

জীবন-জীবিকার অঙ্কের ফলাফল মেলোনো যাচ্ছে না। আশা-আকাক্সক্ষার মধ্যে কোনো সমন্বয় হচ্ছে না এবং চোখের সামনে যা দেখছি আর পর্দার অন্তরালে ঘটমান বিষয়বস্তু নিয়ে যা শুনছি সেগুলোর মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব দেহ-মনে যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করছে তার রেশ কাটিয়ে বেঁচে থাকা সত্যিই দুরূহ হয়ে পড়েছে।

কয়েক দিন আগে সামাজিক মাধ্যমে দেখলাম ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র আতিকুুল ইসলাম গান গাচ্ছেন। তিনি লাফিয়ে লাফিয়ে গান ধরেছেন- মন আমার দেহঘড়ি, সন্ধান করি কোন মেস্তোরি বানাইয়্যাছে। আর তার সেই গানের সাথে নেচে-গেয়ে-হাততালি দিয়ে ক্ষমতাসীনদের পোর্ট্রেট বলে পরিচিত মন্ত্রী-এমপি-ব্যবসায়ী-বুদ্ধিজীবী, নায়িকা-গায়িকাদের বিরাট একটি দল যেভাবে উল্লাস নৃত্য করেছে এমন দৃশ্য ইহজন্মে দেখিনি। বন্ধুবর আতিক সঙ্গীতপ্রিয় মানুষ। ব্যবসাবাণিজ্য-রাজনীতির সর্বত্রই তিনি সঙ্গীতের ব্যবহার করে আসছিলেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে দাবিনামা আদায়ের জন্য যখন দরাজ কণ্ঠে গেয়ে ওঠেন ‘পরের জায়গা পরের জমি- ঘর বানাইয়্যা আমি রই- আমি তো সেই ঘরের মালিক নই’। তখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।

মেয়র আতিকের উল্লিখিত দু’টি গানের ভিডিও ফুটেজ ছাড়া আরেকটি গানের দৃশ্যও ভয়ানকভাবে ভাইরাল হয়ে পড়ে যেখানে তিনি মাইজভাণ্ডারি গান বলে পরিচিত, ‘ইশকুল খুইলাছে রে মাওলা-ইশকুল খুইলাছে/গাউসল আজম মাইজভাণ্ডারি ইশকুল খুইলাছে’ গানটি গেয়েছেন। ভিডিওতে দেখা যায়, মন্ত্রী পলক মেয়র আতিককে গান ধরার জন্য অনুরোধ জানানোমাত্রই তিনি বিদ্যুৎগতিতে দাঁড়িয়ে গান গাওয়া শুরু করেন। পলক, ড. জাফর ইকবাল, আসাদুজ্জামন নূর, সাংবাদিক আনিসুল হক, সাবেক আমলা কাম কবি কামাল নাসের, নায়িকা তারিনসহ বহু সরকারি-বেসরকারি আমলা-কামলা এবং বিশেষ উর্দিধারী লোকজনের মধ্যে মুহূর্তের মধ্যে মাইজভাণ্ডারি মাজারের ভক্ত আশেকানদের চিরায়ত জোশ ছড়িয়ে পড়ে। তারা দাঁড়িয়ে বসে তালি দিয়ে যেভাবে ইশকুল খুইলাছেরে মাওলা-ইশকুুল খুইলাছে বলে নেচে-গেয়ে পুরো পরিবেশ মাতিয়ে তোলেন তাতে মনে হচ্ছে উন্নয়নের জোয়ারের ভরা কটালের পানিতে রুই-কাতলা-পাঙ্গাশ-বাঘাইড়-রাঘববোয়ালরা জলকেলি করে মাছে-ভাতে বাঙালির সুখস্বপ্ন বাস্তবায়িত করছে।

উল্লিখিত দৃশ্য দর্শনে আমার-জীবনদর্শন নিদারুণভাবে প্রভাবিত হয়ে পড়ে। আমি মার্কেটিং গুরু খ্যাত ফিলিপ বাটলারের রচনাগুলো নতুন করে অধ্যয়নের সিদ্ধান্ত নিই। কারণ গত ১০ বছর ধরে আমার নিজের ব্যবসাবাণিজ্যের নিম্নগতি এবং পরিচিত দু-একজনের উন্নতি ছাড়া বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর লোকসান ও দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার যেসব ঘটনা দেখেছি শুনেছি এবং জেনেছি সেগুলো কি সত্য নাকি স্বপ্ন দর্শন তা নিয়ে আমার মনে নিদারুণ সন্দেহের সৃষ্টি হয়। করোনা মহামারীর কারণে লাখ লাখ খুদে ব্যবসায়ীর সর্বস্বান্ত হয়ে পড়া, লাখ লাখ দোকান কর্মচারীর বেকার হয়ে পড়া, চাকরি হারানো, শহর ছেড়ে লোকজনের গ্রামে চলে যাওয়া, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং মান কমে যাওয়ার পাশাপাশি শতকরা ৪৩ ভাগ পরিবারের খাবারের ব্যয় কমিয়ে ক্রমাগত পুষ্টিহীনতা, অস্বাস্থ্য-কুস্বাস্থ্য এবং রোগ বালাইয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়ার যে তথ্য জেনে আসছিলাম তা নিয়ে নতুন করে মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে।

আমার ধারণা, সরকার যে উন্নয়নের গল্প শোনাচ্ছে তা মনে হয় সত্যি। আর পত্রপত্রিকা, সামাজিক মাধ্যম, বুদ্ধিজীবী-রাজনীতিবিদসহ সুশীলসমাজ যে গণতন্ত্রহীনতা-দারিদ্র্য-অভাব অভিযোগ, জীবনমানের নিম্নগামিতা, অপরাধপ্রবণতা-দুর্নীতি-অনিয়ম, চুরি-ডাকাতি-রাহাজানি-নিষ্ঠুরতা বেড়ে যাওয়া নিয়ে যা বলছে তা সম্ভবত সরকারবিরোধী চক্রান্ত। তা না হলে এত বড় বড় বুদ্ধিজীবী, এত নামকরা সাংবাদিক, অভিনেতা-মন্ত্রী-এমপি-আমলা-কামলাদের শিরোমণিরা কি করে সহাস্য বদনে, উল্লসিত দেহ দুলিয়ে, প্রচণ্ড শব্দে তালি বাজিয়ে সম্মিলিত কণ্ঠে গাইতে পারেন- ‘মেকার যদি হইতাম আমি! ঘড়ির জুয়েল পাল্টাইতাম। জ্ঞান নয়ন খুলিয়া যাইত-দেখতে পাইতাম চোখের সামনে- মন আমার দেহঘড়ি-সন্ধান করি- গড়াইয়াছে কোন মেস্তোরি।’

আমার আরো মনে হতে থাকল যে, সঙ্গীতপ্রেমিক মেয়র আতিক তার সহজাত অভ্যাস ও শিল্পীসুলভ মনোভাবের জন্য যেকোনো সময় যেকোনো গান গাইতেই পারেন; কিন্তু মন্ত্রী পলক যখন তাকে সহাস্য বদনে গান ধরার আবদার জানান তখন আমার বুঝতে বাকি থাকে না যে, পলকের মনে পুলক পুলক ভাব না থাকলে তিনি গান ধরার আবদার জানাতেন না। দ্বিতীয়ত, নাচ-গান-আনন্দ, হাস্যরস-কৌতুক একটি উঁচু মার্গের বিনোদন। কোনো স্থানে যদি আনন্দ ফুর্তির সর্বোচ্চ মার্গ সৃষ্টি না হয় তাহলে সেখানে উপস্থিত সব বয়সের নর-নারী স্থান-কাল-পাত্র ভুলে গিয়ে একসাথে নাচন-কুদন করতে পারে না। পূর্ণিমার ভরা জোয়ারে মনের আনন্দে বড় মাছ-ছোট মাছ অর্থাৎ রুই-কাতলা-রাঘববোয়ালের সাথে ট্যাংরা, পুঁটি-কাচকি যেভাবে মনের সুখে লাফ মারে তেমনি মনুষ্য সমাজে উন্নয়নের জোয়ারে যখন পূর্ণিমা ও ভরা কটাল একই বিন্দুতে অবস্থান করে তখন সবার মনে নৃত্যকলা ও সঙ্গীতের সুর মূর্ছনার আবেশ সৃষ্টি হয়ে থাকে।

মেয়র আতিকের সঙ্গীত প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে এবার বিমান বৃত্তান্ত নিয়ে কিছু বলি। আমাদের রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমানের দুর্নীতি, অনিয়ম, লোকসান ইত্যাদি নিয়ে হিমালয়সম অভিযোগ যখন প্রতিষ্ঠানটির জন্য অনিবার্য পরিচয় হয়ে পড়েছে ঠিক সেই সময়ে যখন করোনা মহামারীর ধাক্কা বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। ভারতের ঐতিহ্যবাহী রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া দেউলিয়া হয়ে পড়ে এবং মোদি সরকার রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে এয়ার ইন্ডিয়াকে বিক্রি করে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু দেশী-বিদেশী কোনো সংস্থাই কয়েক লাখ কোটি রুপি মূল্যের সংস্থাটি পানির দামে ক্রয় করার জন্য এগিয়ে এলো না। এ অবস্থায় সরকার এয়ার ইন্ডিয়ার আদি মালিক টাটা গ্রæপকে বহু অনুনয় বিনয় করে শেষ পর্যন্ত সংস্থাটিকে রতন টাটার মালিকানায় হস্তান্তর করে।

এয়ার ইন্ডিয়ার মতো থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় সংস্থা থাই এয়ারওয়েজসহ বিশ্বের নামী-দামি শত শত যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী বিমান কোম্পানি দেউলিয়াত্বের কবলে পড়ে যাদের বিরাট অংশই হলো আমেরিকা-ইউরোপের ধনী দেশগুলোর রাষ্ট্রীয় সংস্থা। কিন্তু এসব বিবেচনায় বাংলাদেশ বিমানের যে হালনাগাদ অবস্থা দেখতে পাচ্ছি তাতে গর্বে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে এবং আবেগে রীতিমতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আমাদের বিমানের লোকসান হয়েছে বটে তবে জনগণের করের টাকা এবং দেশী-বিদেশী ঋণের টাকা দিয়ে এটিকে যেভাবে স্ফীত করা হয়েছে তার নমুনা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে দ্বিতীয়টি নেই। এর বাইরে করোনার কারণে দেশের বিমানবন্দরে বসে থেকে বিমানগুলোর যেন মন খারাপ না হয় কিংবা নিঃসঙ্গতা, অন্য দেশের বিমান-বিমানিদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ার কারণে যেন যন্ত্রগুলোর সাইকোলজিক্যাল ও প্যাথলজিক্যাল বিপত্তি না ঘটে সে জন্য মাঝে মধ্যে হাওয়া পরিবর্তনের জন্য তাদের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে নিয়ে যেভাবে ঘুরিয়ে আনা হয়েছে তাও সৌরজগতের অন্য কোনো গ্রহে ইতঃপূর্বে ঘটেনি।

বিমান নিয়ে সর্বশেষ কিংবদন্তির প্রতিবেদন হলো, সংস্থাটি ঢাকা থেকে কানাডার মন্ট্রিয়লে নিয়মিত ফ্লাইট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে নতুন গন্তব্যে গিয়ে বিমান যেন নববধূর শ্বশুরালয়ে গমনসংক্রান্ত বিপত্তিতে না পড়ে এ জন্য কর্তাব্যক্তিরা পরিবারপরিজন নিয়ে একটি পরীক্ষামূলক যাত্রার মাধ্যমে বিমানকে মন্ট্রিয়লে নিয়ে গিয়ে সব কিছু হাতে-কলমে শিখিয়ে দেয়ার জন্য একটি অভিনব পরিকল্পনা করেছে। আর অন্য দিকে ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালীর সাগরতীরে একটি বৃহত্তম তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের জন্য সশরীরে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে তিনি বর্তমানের উন্নয়নের জোয়ার এবং সব কিছুতে যন্ত্রপাতির ব্যবহারের বাইরে অসংখ্য পাল তোলা নৌকা দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং ভাসমান সারি সারি পাল তোলা নৌকার দৃশ্য নিজ মোবাইলে রেকর্ড করেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী যে দিন দেশের বৃহত্তম পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন সে দিন সরকারের পক্ষ থেকে সগর্বে ঘোষণা দেয়া হয় যে, আজ থেকে বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হলো। বাংলাদেশের মানুষের সব বিদ্যুৎ চাহিদার বিপরীতে সরকার যেভাবে শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছে তা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশ করতে পারেনি বলে উন্নয়নের জোয়ারের উদ্যোক্তা প্রবক্তা এবং সুবিধাভুক্ত গোষ্ঠী সজোরে প্রচার করতে থাকে। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো ২১ মার্চের পরের দিন অর্থাৎ ২২ মার্চ সারা দেশে নজিরবিহীন লোডশেডিং শুরু হয়, যা গত ১০-১২ বছরের মধ্যে হয়নি। কাজেই ২১ মার্চের উন্নয়নের গল্প এবং ২২ মার্চের বাস্তবতা আমাকে নিদারুণ দ্বিধাদ্ব›েদ্বর মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

আমরা আজকের নিবন্ধের একদম প্রান্তসীমায় পৌঁছে গেছি। সুতরাং শিরোনাম প্রসঙ্গে সংক্ষেপে কিছু বলে উপসংহারে পৌঁছে যাবো। শিরোনামে বর্ণিত গানটি যেভাবে মেয়র আতিক গেয়েছেন এবং যেভাবে তার সঙ্গীসাথীরা নাচ-গান করেছেন এবং তালি বাজিয়েছেন তা বেশ কিছু দিন আমাকে আবেগাপ্লুত করেছে। কিন্তু আমাদের সামাজিক মাধ্যমে হঠাৎ আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে। মেয়র আতিকের গানের সাথে সরকারের উন্নয়নবিরোধী লোকজন টিসিবির ট্রাকের পেছনে ছুটন্ত মানুষ, টিসিবির ট্রাকের সামনে এক বোতল তেল, এক কেজি চিনি-ডাল-পেঁয়াজ কেনার জন্য অভাবী মানুষের দৌড়, ঝাঁপ, লাফ, হাত উপরে তুলে পণ্য কাড়াকাড়ির দৃশ্য যেভাবে জুড়ে দিয়েছে তা দেখার পর জীবনের হিসাব-নিকাশ মেলাতে পারছি না। ভিডিওর এক দিকে মহাজ্ঞানী জাফর স্যারের হাততালি, রাজকীয় সাহিত্যিক ও কবি আনিসুল হকের সহাস্য গুনগুনানি, এমপি আসাদুজ্জামান নূর ওরফে বাকের ভাইয়ের নৃত্য ইত্যাদির সাথে মেয়র আতিকের গান ও নায়িকাদের রঙ্গরসের হাততালি এবং অপর পাশের দৃশ্যে অভাবী মানুষের আহাজারি আর্তচিৎকার ক্ষুণ্ণিবৃত্তির যন্ত্রণার লাফ-ঝাঁপ ও দৌড় যে কী বীভৎস দৃশ্য সৃষ্টি করতে পারে তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না।

আমাদের দেশকে বলা হয় সব সম্ভবের দেশ। এখানে মরুভ‚মি নেই কিন্তু মরুঝড় সাইমুমের হাজারো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানের প্রকৃতি ও পরিবেশে বরফ জমে না বা আকাশ থেকে তুষারপাত হয় না। কিন্তু বরফের দেশের শ্বেত ভাল্লুকের মতো প্রাণী কিংবা বরফের ঘরে বসবাসরত এস্কিমো প্রকৃতির মানুষের অভাব নেই। আমাদের দেশটি ভ‚-মধ্যসাগরের মধ্যে অবস্থিত কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়; কিন্তু ইতিহাসের নির্মমতম ও জঘন্য প্রকৃতির জলদস্যু দ্য পাইরেটস অব ক্যারিবিয়ানদের চেয়েও নিষ্ঠুর দস্যুরা আমাদের জমিনে তাণ্ডব চালায়। আমাদের ভ‚-খণ্ডে ভারতের উত্তরপ্রদেশের চম্বলের মতো দুর্গম ঘন জঙ্গল নেই; কিন্তু দস্যু বিরাপ্পন, কুসুমা নাইন ও বাবু গুজ্জরের চেয়েও ভয়ঙ্কর বনদস্যু আমাদের মনুষ্য বাঘরূপী বিবেককে হত্যা করে পুরো জনপদকে ভয়াল বনভ‚মি বানিয়ে ফেলছে। ফলে আমি বা আমরা দিবালোকে যা দেখছি তা অন্তর্লোকে অনুভব করতে পারছি না। পরস্পরবিরোধী কাহিনী, দৃশ্যপট ও প্রেক্ষাপট আমাদের সবকিছু কেমন যেন তছনছ করে দিচ্ছে।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য