পাকিস্তান আরও রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে নিজেদেরকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন সাবেক দুই ঘোর বিরোধী প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ও ইমরান খান। কারারুদ্ধ ইমরান খানের সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনে সবাইকে চমকে দিয়ে সবচেয়ে বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছেন। তাদের সংখ্যা ৯৯। কিন্তু নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) প্রার্থীরা তার থেকে অনেক পিছিয়ে আছেন। তার চেয়েও পিছিয়ে আছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) সমর্থিত প্রার্থীরা। এই নির্বাচনে ইমরান খান যেন ম্যাজিক দেখিয়েছেন। তাকে রাজনীতি থেকে মুছে দেয়ার জন্য সব রকম প্রচেষ্টা হয়েছে। তা সত্ত্বেও জেলে বসে তিনি প্রমাণ দিয়েছেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে তিনিই দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয়। ফলে তিনি নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে নওয়াজ শরীফের দল।
কিন্তু ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফকে (পিটিআই) নির্বাচনে অযোগ্য, নির্বাচনী প্রতীক কেড়ে নেয়া, ইমরান খান সহ দলের বড় বড় নেতাদের জেলে ঢোকানো, ভীতি প্রদর্শনের মুখে প্রথম সারির কিছু নেতার পক্ষত্যাগের ফলে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে পিটিআইয়ের প্রার্থীরা ঝলক দেখিয়েছেন। তারা দল হিসেবে নয়, স্বতন্ত্র হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসনে এখন পর্যন্ত বিজয়ী। নওয়াজ শরীফ বলেছেন, তার দল যেহেতু নিজে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি, তাই তারা একটি জোট সরকার গঠনের জন্য অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন। ২৬৫ আসনের মধ্যে কমপক্ষে তিন-চতুর্থাংশ আসনের ফল ঘোষণার পরই নওয়াজ শরীফ এ ঘোষণা দেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে এককভাবে কেউ বিজয়ী হবে না। ফলে অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিমজ্জিত পাকিস্তান আবার গভীর রাজনৈতিক মেরুকরণের মধ্যে পড়বে। বৃদ্ধি পেতে পারে উগ্রপন্থা। নওয়াজ শরীফ শুক্রবার লাহোরে তার বাসভবনের বাইরে সমবেত সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন- পাকিস্তানে সবচেয়ে বড় একক দল হলো পিএমএলএন। দেশকে ঘূর্ণাবর্ত থেকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। যারাই ম্যান্ডেট পাক- হোক সেটা স্বতন্ত্র বা কোনো দল, তারা যে ম্যান্ডেট পাবেন তার প্রতি আমাদের সম্মান থাকবে। তাদেরকে আহ্বান জানাবো আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুন। ক্ষতবিক্ষত এই দেশটাকে তার পায়ের ওপর দাঁড়াতে সহায়তা করুন।
অন্যদিকে ইমরান খানের দল পিটিআই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল ম্যাসেজ তৈরি করে তা এক্সে প্রকাশ করেছে। এতে ইমরান খানের আইনজীবীর মাধ্যমে নওয়াজ শরীফের বিজয়ী হওয়ার দাবিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। নির্বাচনে নিজেদের বিজয়ের জন্য সমর্থকদের অভিনন্দন জানানো হয়েছে। তাদেরকে এই বিজয় উদ্যাপন এবং তাকে সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে- আমি বিশ্বাস করি আপনাদের গণহারে ভোট দেয়ায় সবাই হতবাক হয়েছে।
mzamin