বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই বিবৃতি দেন।
অর্থনীতি, বিনিয়োগ, উন্নয়ন, যোগাযোগ ও জনগণের মধ্যে বিনিময়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারত্বের বিস্তৃত পরিসর উল্লেখ করে ভারত-বাংলাদেশের অংশীদারত্বের অনেক ক্ষেত্র তুলে ধরেন মুখপাত্র জয়সওয়াল।
তিনি বলেন, “আপনারা যেকোনো মানবিক প্রচেষ্টার নাম বলুন, তা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবিচ্ছেদ্য অংশ।”
অংশীদারত্বের গতিশীলতার ওপর আরও জোর দিয়ে জয়সওয়াল বলেন, “এতেই বোঝা যায় যে অংশীদারত্ব কতটা প্রাণবন্ত এবং এটি অব্যাহত থাকবে।”
‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা
২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ইন্ডিয়া আউট’ নামে ভারত বিরোধী এক ধরনের প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতের পণ্যসহ দেশটিকে ‘বয়কট’ করা নিয়ে বিভিন্ন ধরণের ক্যাম্পেইন চলছে।
যারা এসব প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ কিংবা সরকার-বিরোধী হিসেবে পরিচিত।
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এসব প্রচারণা ভারতেও অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এই প্রচারণার বিরুদ্ধে ভারতের অনেকে ইউটিউবে পাল্টা জবাব দিয়েছেন।
বিএনপি বলছে, ভারত-বিরোধী প্রচারণা বাংলাদেশে ‘জোরদার হচ্ছে’
বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাংলাদেশে ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন জোরদার হচ্ছে মন্তব্য করে বলেছেন, এটা দেশটির প্রভাবের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ।
২০ মার্চ (বুধবার) ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের সামাজিক মাধ্যমের আন্দোলনকে ‘সমীচীন নয়’ বলে মনে করেছেন। যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটভূমিতে ভারতের ভূমিকার প্রতি জনগণের অসন্তোষের বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে অস্বস্তির বহিঃপ্রকাশ।
রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, ভারত সরকারের সমর্থনের বিনিময়ে দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদাকে বিসর্জন দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণের ম্যান্ডেট চায় না, বরং “মোদি সরকারের সমর্থনে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে এবং পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ হয়ে ক্ষমতা দখল করে।”
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে একটি ‘ডামি রাষ্ট্র’ হিসেবে বিবেচনা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পেছনের আসল শক্তি বাংলাদেশের জনগণ নয়, ভারত। আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ভারত দেশের নাগরিকদের অধিকার লঙ্ঘন করছে।
বিদেশি প্রভাবের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “এমনটাও বিশ্বাস করতে হয় যে, ভারত বাংলাদেশ পুলিশ ও বিজিবির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের নির্দেশ দেয়, যা আমাদের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করে।”
৭ জানুয়ারির (২০২৪) জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিবৃতির কথাও উল্লেখ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্থিতিশীলতার নামে আমাদের সার্বভৌমত্বের ধারণাকে বিপদগ্রস্ত করা হচ্ছে।
ভারতের কথিত আধিপত্যকে আওয়ামী লীগের মেনে নেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ কখনোই ভারতের আধিপত্য মেনে নেবে না, এমনকি আওয়ামী লীগ নেতারা করলেও।”
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, বিএনপির বিরোধ ভারতের জনগণের সঙ্গে নয়, বরং বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারত সরকারের নীতির সঙ্গে।
ওবায়দুল কাদের: ‘ইন্ডিয়া আউট’ বলে সম্পর্ক বৈরিতার পর্যায়ে নেওয়া সমীচীন নয়
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গায়ে পড়ে ভারতের সঙ্গে তিক্ততা তৈরি করে সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। ইন্ডিয়া আউট বলে সম্পর্ককে বৈরিতার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সমীচীন নয়।
১৬ মার্চ (শনিবার) ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তিনি
এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “সম্পর্ক ভালো বলেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছেন। আমি এই কৃতিত্ব দিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীকে। দীর্ঘ দিনের অবিশ্বাস ও সন্দেহের দেয়াল তারা ভেঙ্গে দিয়েছেন। অবিশ্বাস ও সন্দেহের দেয়াল রেখে কোনো কিছু সমাধান সম্ভব নয়। … গঙ্গা চুক্তিও আমরা করেছি। তিস্তা নদী নিয়েও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে এবং এর সমাধানও অবশ্যই হবে।”
তিনি আরও বলেন, “দ্রব্যমূল্যের প্রভাব ভারতেও পড়েছে, ভারতে জিনিসপত্রের দাম কম, বাংলাদেশে বেশি বিষয়টা তো এমন নয়। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে তখন একটি মহল ভারতবিরোধী প্রচারণা চালানো শুরু করে।”
voa