ইতিহাসটি নৃশংস অসভ্যতার ও অরাজকতার

 

Jatiyo Rakkhi Bahini

ফিরোজ মাহবুব কামাল  12 September 2022

শিকার ধরার পর নিহতের লাশটি কোন পশুই ড্রেনে ফেলে না। ধর্ষণে পশুরা সেঞ্চুরি করে না। এক লাশের বদলে বিপক্ষের দশ লাশ ফেলে না। যাত্রীভর্তি বাসে আগুন দেয় না। পশুরা শিকার ধরে শুধু বেঁচে থাকার স্বার্থে, ক্ষুধা মিটে গেলে অন্য শিকার ধরে না। তাই জঙ্গলে লাশ পড়ে থাকে না। কিন্তু যুদ্ধ ছাড়াই বাংলাদেশে লাশের ছড়াছড়ি। পবিত্র কুর’আন মহান আল্লাহতায়ালা এমন মানুষদের পশুদের চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন।

 শেখ মুজিব একাই তার শাসানামলে বহু হাজার লাশ ফেলেছিলেন। সিরাজ শিকদারের হত্যার পর সংসদের দাড়িয়ে “কোথায় আজ সিরাজ শিকদার” বলে আস্ফালন করেছেন। শেখ মুজিব বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের কথাবলা, লেখালেখী ও রাজনীতির স্বাধীনতা যেমন দিতে চাননি, তেমনি দিতে চাননি বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। গণতন্ত্রকে পাঠিয়েছেন কবরে। শেখ হাসিনা নিজেও জোরেশোরে লাশ ফেলার রাজনীতি করছেন। বিরোধী দলে থাকা কালে তিনি ঘোষণা দেন এক লাশের বদলে দশ লাশ ফেলার। ক্ষমতায় বসে গণহত্যা চালিয়েছেন শাপলা চত্বরে। এসবই আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিচ্ছেদ্য অংশ।

শত শত লাশ ফেলেছে জাসদ ও তার গণবাহিনী। শ্রেণী শত্রু নির্মূল ও সর্বহারার রাজনীতির নামে বহু হাজার লাশ ফেলছে মার্কসবাদী সন্ত্রাসীরা। পিলখানায় ৫৭ জন অফিসারসহ ৭৪ জনকে লাশ বানিয়েছে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষিত সেপাইরা। বার বার লাশ পড়ছে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে। বার বার সেটি হচ্ছে রাজনৈতিক মিছিলে। বহু মানুষ মারা যাচ্ছে বাসের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে। বাংলাদেশের ইতিহাস পূর্ণ হচ্ছে এরূপ গ্লানিকর ব্যর্থতা দিয়ে। কিন্তু দেশের পত্র-ত্রিকায়, টিভি আলোচনায়, নাটকে ও সিনেমায় বা পাঠ্যপুস্তকে এ ব্যর্থতার কোন আলোচনা নেই। বিস্ময়ের বিষয় হলো, এসব ব্যর্থতা চেপে রেখে দেশকে যারা তলাহীন ভিক্ষার ঝুলিতে পরিণত করলো, বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বানালো এবং প্রতিষ্ঠা দিল নৃশংস ফ্যাসিবাদ -তাদেরকে বাংলার ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ রূপে চিত্রিত করা হচ্ছে।

রাষ্ট্র যখন দুর্বৃত্ত বা পাপাচারীদের হাতে অধিকৃত হয় তখন তাদের দুর্বৃত্তি ও পাপাচারের নিন্দা হয় না, বরং প্রশংসিত হয়। ডাকাতপাড়ায় এজন্যই ডাকাতি কর্মের নিন্দা হয় না। জেনারেল এরশাদের সামরিক ক্যু’র পর তার সে অবৈধ সামরিক দখলদারীকে নিন্দা করাও অপরাধ গণ্য হত। বরং সে দুর্বৃত্তকে অনেকে পল্লীবন্ধু বলতো। একই কারণে পতিতাপল্লীতে নিন্দিত হয় না অশ্লিলতা, দেহব্যবসা ও ব্যভিচার। বরং পাপাচার-কবলিত সমাজে পাপাচারের নেতা-নেত্রীগণ বরং বীর বা বীরাঙ্গনা রূপে চিত্রিত হয়। নমরুদ, ফেরাউন, আবু জেহেল ও আবু লাহাবের মত দুর্বৃত্তগণ তো সে কারণেই নিজ নিজ দুর্বৃত্তকবলিত সমাজে নেতা রূপে সম্মান পেয়েছে। একই কারণে বাংলাদেশে নেতৃত্বের আসন পেয়েছে ইসলামবিরোধী নেতাকর্মী ও বুদ্ধিজীবীগণ। শুধু রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানই তাদের দখলে যায়নি, দখলে গেছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও স্কুল-কলেজের শ্রেণীকক্ষ গুলোও। ইতিহাসের পাঠ্য বইগুলোতে তাই দুর্বৃত্ত নেতাদের কুকীর্তিগুলোকে গৌরবময় করে দেখানো হয়।

জঙ্গলে কেউ নিহত হলে সে খুনের বিচার হয় না এবং খুনির শাস্তিও হয় না। কারণ জঙ্গলে আদালত নাই। সেখানে বিচারক, উকিল এবং পুলিশও নেই। এক পশু আরেক পশুকে ধরিয়ে দেয় না, সাক্ষিও দেয় না। একই রূপ অরণ্যের অরাজকতা নেমে এসেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে বহুশত আদালত আছে। বহুহাজার পুলিশ, বহুহাজার উকিল এবং বহুশত বিচারকও আছে। তাদের পালতে রাজস্বের বিশাল অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু দায়িত্ব পালনে তাদের সামর্থ্যটি কোথায়? সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে প্রকাশ, দেশে প্রতিদিন এগারো জন খুন হয়। কিন্তু দেশের আদালতগুলোর কয়েকশত বিচারক সবাই মিলে দিনে একজন খুনিরও কি শাস্তি দিতে পারছে? বিচার গুরুত্ব পাচ্ছে রাজনৈতিক প্রয়োজনে।

বিচার ব্যবস্থার এ ব্যর্থতার কারণ, জনগণকে সুবিচার দেয়া সরকারের প্রায়োরিটি নয়। সরকারের প্রায়োরিটি তার নিজের গদির নিরাপত্তা। খুনি, ধর্ষক, চোর-ডাকাত ও সন্ত্রাসীগণ জনগণের শত্রু, কিন্তু তারা সরকারের শত্রু নয়।ফলে তাদের বিচার নিয়ে সরকারের মাথাব্যথা নেই। পুলিশ এবং আদালত ব্যস্ত সরকার বিরোধীদের দমনে। প্রকৃত খুনিরা তাই অভয় অরণ্য পেয়েছে বাংলাদেশকে।

পিলখানা হত্যাকান্ডের খুনিদের গ্রেফতারে সরকার ঘটনার দিন কোন উদ্যোগই নেয়নি। ফলে দিন-দুপুরে রাজধানীর মধ্য দিয়ে শত শত খুনি অনায়াসে পালিয়ে যেতে পেরেছে, যেন তারা খেলা দেখে ফিরছে। দুষ্টের নির্মূল, ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠা এবং শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ আছে এমন কোন দায়িত্বশীল সরকার কি অপরাধীদের গ্রেফতারে এতটা নিস্পৃহ থাকতে পারে? পাশেই ক্যান্টনমেন্ট, সেনাবাহিনীকে বললেও তারা সমগ্র পিলখানা ঘিরে ফিলতে পারতো।

 সরকার নিজের গদিরক্ষায় সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়, কিন্তু ৫৭ জন সেনা অফিসারদের বাঁচানোর জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়নি।এটিকে স্রেফ সরকারের দায়িত্বহীনতা বললে ভূল হবে, এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। অথচ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ে সরকারের কোন আলসেমী নেই