ইউএনওকে নামাজের কাতারে সরে দাঁড়াতে বলার পর ‘চাকরি গেল’ ইমামের

 

কুমিল্লার লালমাইয়ে খুতবা শেষে জুমার নামাজ শুরুর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘একটু সরে কাতারে (লাইনে) দাঁড়াতে’ বলাকে কেন্দ্র করে মসজিদের ইমামকে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের ভাটরা কাচারি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। নামাজ শেষে মাওলানা আবুল বাশার নামের ওই ইমামকে ডেকে এনে কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্নও করা হয়।

তবে নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফোরকান এলাহি অনুপম বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, তিনি ইমামকে চাকরিচ্যুত করেননি। এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেভাবে বলা হচ্ছে ইউএনও ইমামের চাকরি খেয়েছেন, এটা ঠিক না। বিষয়টি নজরে আসার পর খতিয়ে দেখছি।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৩ অক্টোবর ইউএনও ফোরকান এলাহি উপজেলার ভাটরা কাচারি কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশের পুকুরে সকাল থেকেই বড়শি দিয়ে মাছ ধরছিলেন। বেলা সোয়া একটার দিকে তিনি জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে আসেন। তখন নামাজের ইমাম খুতবা শেষ হয়। এরপর মুয়াজ্জিন পারভেজ হোসেন ইউএনওকে একটু সরে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য বলেন।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নামাজ শেষে ইউএনও মসজিদের মুয়াজ্জিন ও ইমামকে পুকুরের ঘাটলায় ডেকে নেন। এরপর ইউএনওকে চেনেন কি না জানতে চান? তখন ইমাম আবুল বাশার বলেন, ইউএনওকে চিনতে পারেননি। এ জন্য তিনি দুঃখও প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে ইউএনও উত্তেজিত হন। এরপর ইমামকে কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এ সময় পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল্লাহকে ডেকে আনেন ইউএনও। এরপর ইমামকে মসজিদের ইমামতি থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মসজিদ কমিটিকে বলে তাঁকে আর নামাজ পড়াতে নিষেধ করেন। গতকাল শনিবার বিষয়টি জানাজানি হয়।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউএনও বলেন, ‘আমি তো ওই মসজিদের অথরিটি (কর্তৃপক্ষ) না। মসজিদ চলে কমিটি দিয়ে। আমি কাউকে চাকরিচ্যুত করিনি। এটা একটা গুজব ছড়ানো হয়। এই বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞেস করেন।’ মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করার প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল্লাহ আজ বেলা একটায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইমামের চাকরি যায়নি।’ ইউএনও আপনাকে ডেকে নিয়ে ইমামকে চাকরিচ্যুতির কথা বলেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভাই আমি মোটরসাইকেলে আছি।’ এরপর তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তবে গতকাল ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন, ‘ইমামের দক্ষতার অভাব আছে। আমি মসজিদ কমিটিকে বলেছি, ইমামকে বাদ দিতে। ওরা ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কাজটা ঠিক করেনি।’

মসজিদ কমিটির সম্পাদক জহিরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রথম আলো