অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এ নিয়ে টানা ১২ টেস্টে জয়শূন্য ইংল্যান্ড। ব্রিসবেনের পর অ্যাডিলেডেও বড় ব্যবধানের হারে দুই টেস্ট পরই সিরিজ হারের শঙ্কায় তারা। দল নির্বাচন, ফিল্ডিং, বোলিং এবং ব্যাটিং—প্রশ্ন আছে সবকিছু নিয়েই। অ্যাশেজ শুরুর আগে এ দলটিকে ‘সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া দল’ বলা হলেও বাস্তবে তেমন কিছু দেখছেন না অ্যালিস্টার কুক।
ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও তাদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক বলছেন, দুই ম্যাচে করা অসংখ্য ভুলের মাশুলই দিচ্ছে ইংল্যান্ড। আর সাবেক উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ম্যাট প্রায়রের ভাষ্য, বোলিংয়ের লেংথ বা এমন কিছু নিয়ে কথা বলার আগে ফিল্ডিংয়ের মতো ‘বেসিক’ জিনিস নিয়েই ভাবা উচিত তাদের।
ব্রিসবেনে জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রড—দুই অভিজ্ঞ বোলারকে ছাড়াই নেমেছিল ইংল্যান্ড। টসে জিতে আবার বোলিং সহায়ক কন্ডিশনে নিয়েছিল ব্যাটিং। অ্যাডিলেডে আবার তারা নেমেছিল স্বীকৃত কোনো স্পিনার ছাড়াই। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইংল্যান্ডের সর্বশেষ জেতা অ্যাশেজের (২০১০-১১) সিরিজসেরা খেলোয়াড় কুক বিটি স্পোর্টসের বিশ্লেষণে বলেছেন, গ্যাবায় ব্রডকে না খেলানোর কোনো কারণই দেখেন না তিনি, ‘আমার মনে হয় না জেমস (অ্যান্ডারসন) সে ম্যাচ ফিট ছিল, ফলে সেটা নিয়ে কিছু বলার নেই। ফলে গ্যাবায় যার ভালো রেকর্ড, সে স্টুয়ার্ট ব্রডের দিকেই এগোবেন আপনি। যে এমন পরিস্থিতি সামলাতে পারে, ইংল্যান্ডকে অতীতে জিতিয়েছে। কিন্তু আপনি তাকে খেলালেন না। আমি বসে বসে ভাবছিলাম, “সত্যি? মানে আসলেই সত্যি? এমন সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হলো!” আমার কাছে তো ব্রডকে না খেলানোর কোনো কারণই নেই!’
ইংল্যান্ডের ভুলের সংখ্যা অসংখ্য, কুক বলেছেন এমনও, ‘এ দুই ম্যাচে ইংল্যান্ডকে অসংখ্য ভুলের জন্যই আক্ষেপ করতে হচ্ছে। তাদের ফিল্ডিং অস্ট্রেলিয়ার মতো ততটা ভালো নয়। এখন পর্যন্ত মাঠের বাইরে নেওয়া সিদ্ধান্ত যথেষ্ট ভালো নয়। আর এমন সফরে আপনি ভুল করতে পারেন না। এমনিতেই অনেক কঠিন সফর এটা।’
এ অ্যাশেজকে ঘিরে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বেশ আগে থেকেই বলে আসছে ইংল্যান্ড। বছরজুড়েই বিভিন্ন সংস্করণে অ্যাশেজের সম্ভাব্য খেলোয়াড়দের ‘রেস্ট অ্যান্ড রোটেশন’ বা ‘ক্রমান্বয়ে বিশ্রাম’ পদ্ধতিতে খেলোনো হয়েছে। যেটা নিয়ে সে সময় সমালোচনাও হয়েছে। তবে বারবারই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও অ্যাশেজের জন্য সবাইকে প্রস্তুত রাখার কথা বলা হলেও মাঠের পারফরম্যান্সে সেসবের প্রতিফলন দেখা যায়নি এখনো। সে প্রসঙ্গ টেনে কুক বলেছেন, ‘ম্যাচ শেষে এখন হয়তো অনেক কিছু বলাই যায়। তবে এ সফরের আগেই ক্রিস সিলভারউডকে আমরা বলতে শুনেছি, “আমরা সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া ইংল্যান্ড দল”, “আমরা এটার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি”, “আমরা সেটার জন্য, ওটার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি”। হ্যাঁ, কোভিড পরিস্থিতি বা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সূচি বদলে যাওয়া, অথবা (অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে) আবহাওয়ার ব্যাপারগুলো হয়তো হাতে নেই।’
তবে দুই ম্যাচে সিলভারউডের বলা পরিকল্পনার ছাপ দেখেননি কুক, ‘কিন্তু তারা অ্যাশেজের সবচেয়ে বড় ম্যাচ—প্রথম ম্যাচে, এমন বোলিং আক্রমণ খেলাল, যারা এর আগে কখনো একসঙ্গে খেলেইনি! পরিকল্পনা কোথায় গেল? আমরা পরিকল্পনার কথা বলছি, তবে সে পরিকল্পনা দেখতে পাচ্ছি না।’
আর প্রায়র বলছেন, ইংল্যান্ড ছোটখাটো জিনিসগুলোই ঠিকঠাক করতে পারছে না, ‘দুই দলের ব্যাটিং-বোলিংয়ের পার্থক্য দেখার আগে এটা দেখুন—ইংল্যান্ডের এড়ানো যায় এমন ভুলগুলো। দুই টেস্টে সাতটি ক্যাচ ছাড়া, এটা চরম নেতিবাচক। অনুশীলন করে এসব এড়ানো যায়, এ পর্যায়ে এমন ভুল হওয়া উচিতও নয়। আবার নো বলে উইকেট নেওয়া, ইংল্যান্ড দলের এতগুলো নো বল করার ব্যাপারটা! অস্ট্রেলিয়ার মতো ভালো না করা, ফুল লেংথে বোলিং না করার মতোই হতাশাজনক এগুলো। লোকে ১ শতাংশ নিয়ে কথা বলে, তবে এগুলো তো ২০ শতাংশ! ইংল্যান্ড এগুলোর দিকে নজর দিচ্ছে না। আগে ২০ শতাংশ ঠিক করুন, এরপর অন্যদিকে তাকানো যাবে।’