রাজশাহী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা এক কোটি মানুষের জন্য টিসিবির কার্ড করে দিয়েছি। যাঁরা একেবারে দুস্থ, তাঁদের জন্য বিনা পয়সায় ৩০ কেজি চালের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বিএনপি ছিল, এরশাদ ছিল, কেউ এসব করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণ কিছু পায়, এটা বাস্তব কথা।’
আজ রোববার রাজশাহীতে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় বেলা ৩টা ৫৩ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী। ৪টা ২২ মিনিটে বক্তব্য শেষ করেন।
বক্তব্যের শুরুতে ’৭৫-এর ট্র্যাজেডির কথা উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ও আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম। আমরা দেশে ফিরতে পারিনি। ছয়টি বছর আমাদের বিদেশে থাকতে হয়েছিল। আমি এমন একটি দেশে ফিরে আসি, যেখানে আমার বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। জাতির পিতার খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়ে বিচারের হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছিল। পুরস্কৃত করা হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীরা—যাদের বিচার শুরু করেছিলেন জাতির পিতা, তাদেরও দেশে এনে ক্ষমতায় বসানো হয়। সেই অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করার জন্য।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি, তখন দেশে ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যঘাটতি ছিল। জিয়া-এরশাদ সরকার কেউ দেশের খাদ্যনিরাপত্তা দেয়নি। চিন্তাও করে নাই। আওয়ামী লীগ সরকার এসে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে।’ তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে “টি বাঁধ” নির্মাণ করে পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রাজশাহীকে রক্ষা করেছি। রাজশাহীর মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য অনেকগুলো ব্যবস্থা নিয়েছি। জাতির পিতা যে সুগার মিল চালু করেছিলেন, জুট মিল চালু করেছিলেন; গোদাগাড়ীতে ডেইরি ফার্ম, রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী রেশম কারখানা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা এখন সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করি। রাজশাহী আমে ভরপুর। রাজশাহীর অনেক ঐতিহ্য ছিল। এই ঐতিহ্যগুলো যেন আবার ফিরে আসে। সে জন্য আমের ওপর গবেষণা হচ্ছে, বারোমাসি আম। এখন বিদেশে আম রপ্তানি হচ্ছে। আগামী মৌসুমে ট্রেনে করে যাতে আম চলে যায়, রেলের যোগাযোগ আমরা বাড়িয়েছি। আমরা গ্যাসের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমরা ১০০টি শিল্পাঞ্চল করেছি। কোনোখানে বেকার থাকবে না। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। যমুনা সেতু, পদ্মা সেতু, বন্ধ বিমানবন্দর চালু করে দেশের সব যোগাযোগ নেটওয়ার্ক চালু করেছি।’
সদ্য উদ্বোধন করা প্রকল্পের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৪ বছরে রাজশাহী জেলা ও মহানগরে ১০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করে দিয়েছি। শুধু এই রাজশাহী মহানগরে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। ১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকার ২৬টি প্রকল্প আজ উদ্বোধন করলাম। ৩৭৫ কোটি টাকার ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম। এই প্রকল্পগুলো আমি আপনাদের জন্য উপহার হিসেবে দিয়ে গেলাম। করোনাকালে আপনাদের মাঝে আসতে পারিনি। এবার এসেছি। গত নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’
বিএনপির বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা নাকি পালাব, পালানোর পথ পাব না। আমি বিএনপির উদ্দেশে বলি, আমরা কখনো পালাই না। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ পালায় না। পালায় আপনাদের নেতারাই।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কাকে নিয়ে বিএনপি লড়াই করবে? দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যে নাকি ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল, আর কোনো দিন রাজনীতি করবে না। তাদের পাচার করা ৪০ কোটি টাকা আমরা দেশে ফেরত এনেছি। বিএনপি নেতারা এর কী জবাব দেবে।’
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশের কোনো মানুষ গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না, কোনো মানুষ যেন কষ্ট না পায়, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলাম বলে বিনা পয়সায় সারা দেশের মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েছি। উন্নত দেশে তো দেয় নাই কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে।’
আন্দোলনের নামে বিএনপি মানুষ পুড়িয়ে মারে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারাই বিবেচনা করুন। এই বিএনপি-জামায়াত কীভাবে জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে মেরেছে। এই রাজশাহীতে নির্মমভাবে পুলিশকে পিটিয়েছে। আমার এক বোন গিয়ে সেই পুলিশকে উদ্ধার করেছে। কী রকম অমানবিক চরিত্র তাদের। তারা মানুষ চেনে না। তারা মানুষের জন্য কিছু করতে পারে না।’
রাজশাহীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা বাচ্চা মেয়েকে গ্যাং রেপ করা হলো। তার বাবা-মা নৌকায় ভোট দিয়েছিল তাই। নৌকায় ভোট না দিলে তো দেশ স্বাধীন হতো না। দেশ স্বাধীন না হলে জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেল প্রমোশন পেতেন না। এটা তারা ভুলে যায়। দেশ স্বাধীন না হলে কোনো দিন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসতে পারত না। প্রধানমন্ত্রী তো হতেই পারত না। সেই নৌকার ওপর এত রাগ কেন?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আমরা যে ওয়াদা দিই, সেই ওয়াদা আমরা রক্ষা করি। ২০০৮-এর নির্বাচনে আমরা বলেছিলাম, রূপকল্প–২০২১ বাস্তবায়ন করব। আমরা তা করেছি। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা সচল রাখার জন্য আগামী ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাই।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচন হবে। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন কি না, ওয়াদা চাই।’ তখন মাঠভরা জনতা হাত তুলে সম্মতি জানান। ‘নৌকা, নৌকা’ বলে স্লোগান দেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আগামীতে আবার দেখা হবে। আমাদের উন্নয়নের এই জয়যাত্রায় আগামী ২০৪১ সালে যেন স্মার্ট বাংলাদেশ যেন গড়তে পারি, এ জন্য নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।’