জনাথন স্টিল
ইউক্রেন ও সুদানে চলমান দুটি উত্তপ্ত যুদ্ধের কারণে এমন একটি ঘটনা সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে, যা অন্য সময় ঘটলে বড় বড় শিরোনামে খবর হতো এবং অনেক তর্কবিতর্ক হতো।
সেই ঘটনাটি হলো, সিরিয়ায় ১২ বছরের যুদ্ধ শেষ হয়েছে বলে আরব লিগের দেওয়া বিরল স্বীকৃতি। এই স্বীকৃতি হিসেবে আরব লিগের নেতারা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে আবার আরব লিগে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
আরব লিগের সিরিয়া নীতি পরিবর্তনের ধারা গত এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছিল। তবে গত মাসে সেই পরিবর্তনের গতি জোর পেয়েছে। আরব লিগের এই নীতি পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সরকারগুলোকে একধরনের বিভ্রান্তি ও সংকটে ফেলে দিয়েছে। আরব নেতারা মনে করছেন, আসাদ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করা হলে ওই অঞ্চলে শান্তি আসবে। দ্রুত সিরিয়া পুনর্গঠন করা সম্ভব হলে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া সিরীয় নাগরিকেরা আবার তাদের নিজেদের ভিটেবাড়িতে ফিরতে পারবেন।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো অবস্থাতেই সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ‘স্বাভাবিকীকরণ’ করার বিষয়ে আগ্রহী হবে না। এ বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া আরও খারাপ। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর সিজার স্যাংশন নামে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তার মেয়াদকাল ২০২৫ সালে শেষ হবে। সেই মেয়াদকাল ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য মার্কিন কংগ্রেসে একটি বিল আনা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় কোনো দেশ সিরিয়ার অবকাঠামো পুনর্গঠনে বিনিয়োগ করলে সে দেশের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা আছে।
বারাক ওবামার প্রশাসন আড়ালে–আবডালে স্বীকার করে নিয়েছিল, ২০১৫ সালে সিরিয়ায় রাশিয়া হস্তক্ষেপের পর বাশার আল-আসাদের পতন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন প্রকাশ্যেই সে কথা স্বীকার করেছে। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় অবরোধ চালিয়ে যাবে এবং সিরিয়ান কুর্দি বাহিনীর সঙ্গে জোট বাহিনী হিসেবে সেখানে ৯০০ মার্কিন সেনা অবস্থান করবে।
উইলিয়াম রোবাক নামের একজন মার্কিন কূটনীতিকের (যিনি সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন) মতে, এই নেতিবাচক মার্কিন নীতির এখন একটি ইউক্রেনীয় মাত্রা আছে। একটি ওয়েবিনারে তিনি বলেন, আসাদ ও পুতিনকে যেকোনো ধরনের জয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় থাকতে চায়।
যশুয়া ল্যান্ডিস নামের সিরিয়াবিশেষজ্ঞ ওই একই ওয়েবিনারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র মূলত সিরিয়ায় অবকাঠামো পুনর্গঠনের ওপর জোর দিয়েছে। তাঁর মতে, বাশারকে দুর্বল করে রাখতেই সিরিয়ায় বিদ্যুৎ-পানি সরবরাহ, স্কুল-হাসপাতাল ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র বাধা দিচ্ছে। তবে আরব লিগ এখন বাশারের পাশে দাঁড়াতে যাচ্ছে।
১০ বছর আগে সৌদি আরব বাশারবিরোধীদের অস্ত্র এবং অর্থ দিয়েছে। সেই সৌদি এখন সম্পূর্ণ উল্টো অবস্থানে এসেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মোহাম্মাদ বিন সালমান তাঁর নীতি পরিবর্তন করে তিনটি চমক দিয়েছেন।
প্রথম চমক হলো, ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এবং হুতিদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয় চমক হলো, ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় চালু করা এবং তৃতীয়টি হলো, সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনরায় চালু করা।
এর মধ্য দিয়ে সৌদি আরবসহ অন্য আরব দেশগুলো প্রকারান্তরে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে এবং নিজেরাই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস দেখাচ্ছে।
মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ
- জনাথন স্টিল একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক গবেষক ও লেখক