আসন ভাগাভাগি নিয়ে সময়ক্ষেপণে আওয়ামী লীগের ওপর অসন্তুষ্ট ১৪–দলীয় জোটের শরিকেরা। রোববার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে এক বৈঠকে শরিকেরা আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করার ওপর জোর দেয়। জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগ আরও সময় নেওয়ার কথা বলে। একপর্যায়ে শরিকেরা অসন্তোষ প্রকাশ করলে তিন-চার দিনের মধ্যে সমঝোতার আশ্বাস দেয় আওয়ামী লীগ।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বৈঠকের শুরুতেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শরিকেরা আসনের যে তালিকা দিয়েছে, তা বিচার–বিশ্লেষণ করে আসন ভাগাভাগিতে সময় লাগছে। তখন শরিক দলের কোনো কোনো নেতা বলেন, এই বৈঠকেই শরিকদের আসন চূড়ান্ত হয়ে যাবে—এমনটা ভেবে তাঁরা বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। এই বৈঠকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়া দরকার।
এ পর্যায়ে ওবায়দুল কাদের ১৪–দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর মতামত চান। তখন আমির হোসেন আমু বলেন, ১৪ দলের তালিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি চার দিন বসেছেন। দলীয় প্রধান তথ্য-প্রমাণ দিয়ে এবং সমীক্ষা প্রতিবেদন দিয়ে দেখিয়েছেন, কোনো আসনেই শরিকদের শক্ত কোনো অবস্থান নেই। এ পর্যায়ে বিচার-বিশ্লেষণ করে আসন দেওয়ার কথা বলেছেন।
সূত্র বলছে, একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ১৭ ডিসেম্বরের আগে তো আসন সমঝোতা করা কঠিন। তখন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। কারণ, তিনি নিজে দুটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কোন আসনে সমঝোতা হবে, সেটা না জানলে প্রস্তুতি নেবেন কীভাবে? ভোটের জন্য নানা কমিটি গঠনসহ অনেক কাজ আছে। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলে ভোট করবেন কি না, সে বিষয়ে দলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এই পর্যায়ে আমির হোসেন আমু বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সবাই জানেন নৌকা নিয়ে তাঁরা ভোট করবেন। ১৪ দলের শরিকেরা তো সেটা জানে না। তাদের শঙ্কার যুক্তি আছে। তিনি ওবায়দুল কাদেরকে তিন-চার দিনের মধ্যে একটা সুরাহা করার আহ্বান জানান।
বৈঠক সূত্র জানায়, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু কাকে কাকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে, তা দ্রুত জানানোর আহ্বান জানান। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, কাউকেই যদি নৌকা না দেওয়া হয়, তাহলে সেটা এখনই বলে দেওয়া হোক। তাহলে মশাল নিয়ে তাঁর দলের একজন ভোট করবেন। অন্যরা উঠে যাবেন। তবে তিনি জানান, রাজনৈতিকভাবে ১৪–দলীয় জোট থাকবে এবং আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে যাবেন তাঁরা।
জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু তাঁর আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে জানিয়ে বলেন, আগে নৌকার প্রার্থীকে তো প্রত্যাহার করতে হবে। এরপর জয়ী করে আনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের। নতুবা বদনাম আওয়ামী লীগেরই হবে। এ সময় ওবায়দুল কাদের হেসে হ্যাঁ সূচক জবাব দেন।
বৈঠকে আসন নিয়ে সমঝোতায় জটিলতার একপর্যায়ে তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, শরিকদের তালিকা অনেক লম্বা। তাই বর্তমানে শরিকদের যে কটি আসন আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত করে ফেললেই হয়।
বৈঠকে ১৪ দলের কিছু শরিক অংশ নিলেও তাদের আসন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এর মধ্যে এক শরিক দলের নেতা নিজের জনপ্রিয়তা আছে বলার চেষ্টা করলে তাঁকে নিজ প্রতীকে ভোট করার পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ সময় এক শরিক দলের নেতা বলেন, যাদের আসন দেওয়া হবে না, তাদের এভাবে বৈঠকে ডাকাটা কতটা ঠিক?
বৈঠক শেষে হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন, ১৪–দলীয় জোট একসঙ্গে নির্বাচন করবে। জোটের যাঁরা প্রার্থী হবেন, তাঁরা নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আসন বণ্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। তারা আরও দু-এক দিন সময় চেয়েছে।
রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমার কাছে মনে হয়েছে আওয়ামী লীগ এখনো তালিকা প্রস্তুত করতে পারেনি।’
তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, এটা ভুললে চলবে না, নির্বাচনের পরে একটা কঠিন সময় আসছে। ওই সময় জোটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যাঁরা চারজন (মেনন, ইনু, মঞ্জু ও নজিবুল) সংসদে আছি, নিশ্চিত তাঁরা নৌকা নিয়েই নির্বাচন করবেন। একটু সমস্যা হয়েছে, সেটা হচ্ছে মেনন ভাই কোথায় করবেন? তবে আমরা কিন্তু সবাই জানি তিনি কোথায় করতে পারেন। এই চারজনের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত হবেন, তা নিয়েই সমস্যা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোথায় কে জিতবেন, এটাও দেখার বিষয়, বর্তমান যে জায়গাটা আছে, সেটাও দেখতে হবে। তবে আমি মনে করি, যথার্থ সুন্দর আলোচনা হয়েছে।’
প্রথম আলো