‘আল জাজিরা যা প্রমাণ করতে পেরেছে, তা বলছে না বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম’

বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে কেন শুধু আল জাজিরার ভুল-ত্রুটি আলোচিত হচ্ছে, সেপ্রসঙ্গে এমনটা বললেন নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিল৷    

DW Khaled Muhiuddin Asks 050 

ইউটিউবে ডয়চে ভেলের ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ টকশো-তে এবারের পর্বে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান এবং সুইডেন থেকে নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিল৷ এবারের আলোচনার বিষয় ছিল আল জাজিরার সাম্প্রতিক তথ্যচিত্র ও তার প্রেক্ষাপটে দেশের সাংবাদিকতার হালহকিকত৷

এ প্রসঙ্গে নাঈমুল ইসলাম খান প্রথমেই স্পষ্ট করে বলেন, ‘‘সাংবাদিকতা কোনো বিপ্লবী পেশা নয়৷” নির্দিষ্টভাবে আল জাজিরা নির্মিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ তথ্যচিত্র ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে এখানে প্রকাশিত তথ্য নতুন মনে হয়নি৷ এগুলি আমরা আগেই জানতাম৷ আর বিশেষ করে, সেনাবাহিনীর কেনাকাটা নিয়ে খবর করার পরিবেশ ও সংস্কৃতি কোনোদিন বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল বলে আমার জানা নাই৷ এছাড়া, আল জাজিরার স্টোরির ভিত্তি আমার কাছে কিছু জায়গায় ক্রেডিবল (বিশ্বাসযোগ্য) মনে হয়নি৷ যা প্রকাশিত হয়েছে, তার নিউজ ভ্যালু হয়তো আছে, কিন্তু এটা কোনো অসাধারণ তদন্তমূলক সাংবাদিকতা না৷”

অনুষ্ঠানের আরেক আলোচক তাসনিম খলিলও তথ্যচিত্রটির ঘাটতির প্রসঙ্গে কথা বলেন৷ সঞ্চালক প্রশ্ন করেন তথ্যচিত্রে প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে কথা বলার সময় ‘মহামান্য’ শব্দটির ব্যবহার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির বিষয়ে৷ এ প্রসঙ্গে খলিল বলেন, ‘‘এখানে একটি অস্পষ্টতা রয়েছে৷ তারা (আল জাজিরা) দুইটা ইভেন্টকে একসাথে উপস্থাপন করেছে৷ এখানে সমালোচনার জায়গায় আমি একমত যে এখানে আল জাজিরার স্পষ্ট করা উচিত ছিল যে, দুইটা ঘটনা আছে, একটা রাষ্ট্রপতির সাথে প্রধানমন্ত্রীর  দেখা আর দ্বিতীয়টি আজিজের সাথে প্রধানমন্ত্রীর দেখা৷ দু’টি আলাদা করার দরকার ছিল৷”

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম কেন এই তথ্যচিত্রের বিষয়ে আলোচনায় দ্বিধান্বিত, এ প্রসঙ্গে নাঈমুল ইসলাম খান বলেন ‘‘ জেনারেল আজিজ শুধু না, যে-ই যা করুক, দ্যাট নিডস টু বি ডেলট উইথ৷ আল জাজিরার এই স্টিঙের কোথাও অনৈতিকতা আমি দেখিনি৷ কিন্তু বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম হিসাবে আমাদের অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়৷ আমরা দেশে নানা ধরনের বাধ্যবাধকতার মধ্যে কাজ করছি৷ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথা মাথায় রাখতে হয়৷ আমরা আশা করি, এমন একটা আন্তর্জাতিক মাধ্যম আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে কাজ করবে যা আমাদের সমৃদ্ধ করবে৷ বাংলাদেশে আমরা চেষ্টা করবো৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক মাধ্যমে যদি এত ভুলত্রুটির সাথে কিছু সত্য প্রকাশ করা হয়, তা ঠিক না৷ কিছু জিনিস এমনভাবে সিনেমাটিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন আমরা মাফিয়া রাষ্ট্রে বাস করি৷ মাস্তানি এই দেশে অনেক রকমের আছে, দুর্নীতি আছে, কিন্তু এটা একটা স্ট্রং স্টেটমেন্ট৷ এই তিন ভাই (যাদের কথা তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে) বাংলাদেশের কিছু করতে পারবে না৷ কখনো না৷”

এক পর্যায়ে  বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনামের সম্পাদকীয়র কিছু অংশ পড়ে শোনান নাঈমুল ইসলাম খান, যেখানে আল জাজিরার প্রতিবেদন সম্পর্কে লেখা হয়েছে ‘‘এটি সর্বোচ্চ মানের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নয়৷ এর কিছু শক্তিশালী চমক আছে, সাথে দুর্বলতার বোঝাও আছে৷ অনেক কিছু দাবি করলেও খুব কমই পরিবেশন করতে পারা গেছে৷ (ইট ইজ নট এ টপক্লাস ওয়ার্ক অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম৷ ইট হ্যাজ ইটস স্পার্কলস অফ স্ট্রেংথস, অ্যান্ড এ প্লেথোরা অফ উইকনেসেস৷ টু মাচ ওয়াজ ক্লেইমড, টু লিটল সার্ভড৷)”

তাসনিম খলিল প্রশ্ন করেন সংবাদমাধ্যমের আংশিক বক্তব্যকে৷ ডেইলি স্টারে প্রকাশিত সম্পাদকীয়র জবাবে তিনি বলেন, ‘‘মাহফুজ আনাম কি বলতে পারবেন যে আল জাজিরা এই এই জায়গায় অসাধারণ করেছে? তিনি বলতে পারবেন যে কিছু জিনিস আল জাজিরা প্রমাণ করতে পেরেছে? তিনি কি লিখতে পারবেন যে ইন্টারপোলের রেড নোটিশে থাকা এক সন্ত্রাসীকে বাংলাদেশের বিজিবি প্রধান স্পনসর করে, নথি স্বত্তায়িত করে হাঙ্গেরিতে ব্যবসা করতে তুলে দিয়েছে? অনেকে লিখতে বসে তারপর বলেন যে সব কথা বলতে পারবেন না, কারণ, কোনো না কোনো ঝুঁকি রয়েছে৷ লিখতে বসে ভয়ের কথা বলেন অনেকে৷ এই তথ্যচিত্র দেখে দর্শক হিসাবে আমি বুঝেছি যে, এটি আন্তর্জাতিক দর্শকের জন্য ছিল৷ যারাই দেখবেন, তারাই বুঝবেন যে, বাংলাদেশ মাফিয়া স্টেট হবার দিকে যাচ্ছে৷ এখানে চার ভাইয়ের কথা বলা হয়েছে৷ এই চারভাইয়ের আহমেদ ফ্যামিলি ইজ নট দ্য অনলি প্রাইম মিনিস্টারস মেন৷ এমন আরো অনেক আছে৷ সাংবাদিকরা যাতে প্রাইম মিনিস্টারস পুডল না হয়ে যান, সে উদ্দেশ্যে এই জায়গা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে এবং জনগণের জন্য সাংবাদিকতা করতে হবে৷”

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তিদের বিষয়ে তথ্যচিত্রে উল্লেখিত তথ্য ও বিভিন্ন পক্ষের অভিযোগ, অসন্তুষ্টির প্রসঙ্গও উঠে এসেছে আলোচনায়৷

এসএস/এসিবি

নির্বাচিত প্রতিবেদন