সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইনে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) তুমুল লড়াই চলছে। অনবরত গোলাগুলিতে হচ্ছে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা। দুই পক্ষের চলমান সংঘাতে উত্তপ্ত বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকাও। মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেল গতকালও বাংলাদেশে এসে পড়েছে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বান্দরবান জেলা প্রশাসন। দুই পক্ষের চলমান সংঘাতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ২৬৪ সৈন্য। এ ছাড়াও ২৩ জন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যও অনুপ্রবেশের সময় আটক হয়েছেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, সীমান্ত এলাকা বিজিবি’র নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারা অনুপ্রবেশ করেছে তাদের পুশব্যাকের চেষ্টা চলছে।
থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরাবতির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনের ম্রাউক ইউ ও কিয়াকতাও শহরে জান্তা বাহিনীর আরও দুটি ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর দখলে নেয়ার দাবি করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। গোষ্ঠীটি বলেছে, সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর দখলের অভিযানের সময় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে মিয়ানমার জান্তার অনেক সৈন্য হতাহত হয়েছে। আরাকান আর্মির দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তিনটি ব্যাটালিয়ন ম্রাউক ইউ শহরের ঐতিহাসিক রাজধানী, ম্রাউক ইউ প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর, শহরের আবাসিক এলাকা এবং আশপাশের গ্রামগুলোতে গোলাবর্ষণ করেছে। আকাশ ও সমুদ্র থেকে জান্তা বাহিনীর বোমাবর্ষণের মাঝেই রাথেডং, পোন্নাগিউন, রামরি এবং অ্যান শহরে সংঘর্ষ চলছে। মংডু শহরের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া টাং পিয়ো সীমান্ত ফাঁড়িতে হামলা চালিয়েছে আরাকান আর্মি।
এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট জুড়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অব্যাহত গোলাবারুদ বর্ষণে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। মঙ্গলবার বিকালে ঘুমধুম-তুমব্রু পরিদর্শন শেষে এ নির্দেশ দেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন। ইতিমধ্যে প্রশাসন বিরূপ পরিস্থিতিতে অতি ঝুঁকিতে থাকা সীমান্তের অর্ধ-সহস্রাধিক পরিবারকে সরিয়ে নিতে প্রাথমিকভাবে নির্দেশনা দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। গতকাল দুপুরে বিষয়টি প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমের কাছে নিশ্চিত করে বলেন, সীমান্ত এলাকায় ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনায় রেখেছি। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিজিবি ও পুলিশসহ সীমান্ত সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় জরুরিভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে আশ্রয় দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
অন্যদিকে সীমান্তের ওপারে চলমান সংঘাতের প্রভাব পড়েছে কক্সবাজারের টেকনাফেও। দুই পক্ষের গুলি ও মর্টারশেল উড়ে এসে পড়ছে এখানে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে এ এলাকার মানুষের মধ্যে। ওদিকে চলমান সংঘাতে এ পর্যন্ত দেশটির ২৬৪ সৈন্য বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। যেখানে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি), মিয়ানমার সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন সদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সদস্য রয়েছে। যাতে বিজিপি’র কমান্ডারও রয়েছে। এ ছাড়াও বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ২৩ সদস্যকেও আটক করেছে স্থানীয়রা। কক্সবাজারের উখিয়ার সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর চৌধুরী বলেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে চলমান সংঘর্ষের কারণে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয় নিতে আসছিল। এ সময় তাদের দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা করে। এতে কয়েকজন স্থানীয় আহত হয়েছেন। পরে স্থানীয়রা ধাওয়া করে তাদের আটক করেন। তাদের পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়েছে।
manabzamin