Prothom Alo | লেখা:
এই মুহূর্তে তালেবানের সামনে তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও কোন্দল সামাল দেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাবুল দখলের আগে দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়া শীর্ষস্থানীয় তালেবান নেতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার, মোহাম্মাদ আব্বাস স্তানিকজাই, মোল্লা আবদুল সালাম জাহিফসহ আরও অনেক নেতা অন্তর্কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছেন। এই অন্তর্কোন্দলের মূল কারণ হলো হাক্কানি নেটওয়ার্কের যোদ্ধাদের কর্তৃত্ববাদী মনোভাব।
হাক্কানি নেটওয়ার্কের ক্ষমতার অপব্যবহার ও কর্তৃত্ববাদী আচরণ নিয়ে গত মাসে কাবুলে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান ও উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানির সঙ্গে মোল্লা গনি বারাদারের ঝগড়া হয়। হাক্কানি নেটওয়ার্কের ওপর বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং বিশেষ করে সিরাজুদ্দিন হাক্কানিকে বিভিন্ন দেশ কালো তালিকাভুক্ত করার বিষয়টি তালেবান সরকারের জন্য এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর বাইরে ইসলামিক স্টেট খোরাসান বা আইএস-কের বিধ্বংসী পুনরুত্থানও তালেবানের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের আগে তালেবান ক্ষমতায় ছিল না। এখনকার মতো দায়দায়িত্বও তখন তাদের কাঁধে ছিল না। তারা তখন মার্কিন সেনা ও সরকারের বিরুদ্ধে সহিংস পন্থায় নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারত। এখন রাষ্ট্রক্ষমতা তাদের কাঁধে, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক স্বীকৃতি অর্জনের দায় তাদের ওপর। এ অবস্থায় তারা চাইলেই আগের মতো হঠকারী কোনো প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে পারে না।
বৈশ্বিক বৈধতা পাওয়া তালেবান সরকারের প্রথম এবং প্রধান চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এখন পর্যন্ত তালেবান সরকারকে কোনো দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। এই স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত সরকারের কূটনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক তৎপরতা—কিছুই তারা চালাতে পারছে না।
আইএস-কে এখন রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরের শক্তি হিসেবে সেই সুবিধা নিচ্ছে এবং আক্রমণাত্মক আচরণ করছে। কাবুল পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত আইএস-কে কাবুল, জালালাবাদ, কুন্দুজ ও কান্দাহারে ভয়াবহ কিছু হামলা চালিয়েছে। এ কারণে আইএস-কে তালেবানের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।
তালেবানের জন্য আরেকটি সমস্যার বিষয় হলো মেধাবী ও শিক্ষিত বহু আফগান দেশ ছেড়ে চলে গেছেন এবং দেশটি মেধাশূন্য প্রজন্মে ভরে যাচ্ছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে এবং নিপীড়নের শিকার হয়ে আফগানিস্তান থেকে ৬০ লাখের বেশি মানুষ বিদেশে পালিয়ে গেছে। এ বছরের শেষ নাগাদ আরও পাঁচ লাখ মানুষ আফগানিস্তান ছাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া এসব নাগরিকদের একটি বড় অংশ শিক্ষিত। এ কারণে দক্ষ জনশক্তির অভাব দেশটিতে প্রকট হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি দপ্তরের প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজ করতে যে শিক্ষিত জনবল দরকার, তা পাওয়া যাচ্ছে না। এটি তালেবান সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে।
বৈশ্বিক বৈধতা পাওয়া তালেবান সরকারের প্রথম এবং প্রধান চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এখন পর্যন্ত তালেবান সরকারকে কোনো দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি। এই স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত সরকারের কূটনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক তৎপরতা—কিছুই তারা চালাতে পারছে না। তালেবান ক্ষমতায় এসেছে সামরিক শক্তি দিয়ে এবং তারা সব সময়ই তাদের কট্টর ইসলামি শাসন জারি রাখতে চায়। নারী ও শিশুদের ওপর তাদের নিবর্তনমূলক আচরণ, নারীশিক্ষায় বাধা দেওয়া, বাক্স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা—ইত্যাদি তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পথে বড় অন্তরায় হয়ে আছে।
এর বাইরে তালেবান সেই সব লোককে খুঁজে খুঁজে বের করছে, যারা ন্যাটো বাহিনীকে কোনো না কোনোভাবে সহায়তা করেছিল কিংবা এর আগের সরকারগুলোর জন্য কাজ করেছে। এসব লোকের একটি বড় অংশ শিক্ষিত এবং তারা এখন তালেবানের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। অনেকে আগেই চলে গেছে।
এসব সমস্যা আফগানিস্তানের জন্য মহাসংকট বয়ে আনতে পারে। দেশটি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। সেটি হলে গোটা অঞ্চল আবার অস্থির হয়ে উঠতে পারে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে তালেবানকে তাদের কট্টর মতাদর্শ থেকে সরে আসতেই হবে। সব দল–মতের মানুষকে ডেকে একটি জাতীয় সমঝোতার চেষ্টা করতে হবে। জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা না গেলে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
● রহিম নাসের ইসলামাবাদভিত্তিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক