Minar Rashid: উদ্ভট আত্মপ্রচার এবং বিদঘুটে সাংবাদিকতা 

উদ্ভট আত্মপ্রচার এবং বিদঘুটে সাংবাদিকতা
===========================
( দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত উপ সম্পাদকীয় কলাম )

সরকারের প্রশংসায় বিদেশীরা পঞ্চমুখ। এ কথাটি সরকারের টপ টু বটম টিয়াপাখির মতো অনবরত বলে যেতে থাকে। বলার ধরন প্রায়ই বিজ্ঞাপনের মতো শোনায়। কোন বিদেশী কোন জায়গায় এ প্রশংসা করলেন- তা কখনোই উল্লেখ করা হয় না। বিদেশী রাষ্ট্র কিংবা সরকারপ্রধানরা ‘থ্যাংক ইউ’, ‘ভেরি গুড’ টাইপের সৌজন্যমূলক দু’-একটি গৎ বাঁধা প্রশংসা করলে সে কথাটিও নিজেদের রুমালে লিখে বাঁধিয়ে রাখে।

প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর শেষে যতবারই সংবাদ সম্মেলন করেছেন, প্রতিবারই একেকজন সাংবাদিকের বক্তব্য সাঙ্ঘাতিকভাবে সুপার ডুপার হিট হয়ে গেছে। সাংবাদিকতার জগতে এই মোসাহেবি নতুন মাত্রা পরিগ্রহ করেছে। এসব দেখে পুরো জাতি লজ্জা পেলেও তারা নিজেরা কোনো লজ্জা পান না। ঘেন্না পিত্তি-লজ্জা-শরম উদ্রেককারী গিলা-কলিজা তাদের ভেতরে আছে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

এমনই এক প্রীতি সংবাদ সম্মেলন যাকে প্রফেসর আসিফ নজরুল আখ্যায়িত করেছেন ‘আনন্দ মেলা’। এরকম এক মেলায় ৭১ টিভির মোজাম্মেল বাবু বলেছিলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! বিশ্ব মিডিয়া আপনাকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এ দেশের সাংবাদিকরা পরবর্তীতে আপনাকে আমাদের মাঝে পাবো কি না, তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।’ বাবুর এই সন্দেহ মিথ্যা প্রমাণ করে কয়েক দিনের মধ্যেই একজন সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীকে একই আনন্দ মেলায় একই মেজাজে পেয়ে গেলেন। পাশের দেশ থেকে এত এত পদক পাওয়ার পর তিনি এখনো কেন শান্তিতে নোবেল প্রাইজ পাচ্ছেন না তার জন্য প্রবীণ সাংবাদিক মহোদয় আবেগমথিত ভাষায় নিজের মনের কষ্ট জাতিকে শুনিয়ে দিলেন। কিভাবে লবিং করে এই পুরস্কার কব্জা করা যায়- সেই পরামর্শও বাতলে দিলেন।

সরকারপ্রধানকে প্রশ্নবাণে ঝাঁঝরা করার পরিবর্তে এই তুখোড় সাংবাদিক তখনকার চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। এই অভিযানে যারা অন্যায়ভাবে নিহত হয়েছেন, জানি না তাদের আত্মা কয়েক দিনের মধ্যেই একই পরকালে আতিথ্য গ্রহণ করা এই ব্যক্তিত্বকে কিভাবে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন।

এই কিসিমের কিছু সংবাদ জানতে পারলে এই দুনিয়ার বড্ড উপকার হতো! মানুষের জীবন-যন্ত্রণা নিয়ে অন্য মানুষের এমন নির্মম রসিকতা তখন একটু কমে যেত। র‌্যাব-পুলিশ লীগ, আদালতের গুম-খুন, জেল-জুলুম, ফাঁসি ছাড়াও একদিন এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে- এই বোধ সবার মধ্যে ফিরে এলে সত্যিই এই মুল্লুক বসবাসের আরেকটু উপযোগী হতো। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১০ বছরে ২০টি ঈদ চলে গেল, কিন্তু বিএনপির মরা গাঙে তো জোয়ার এলো না। দেশে পুলিশি শাসন প্রতিষ্ঠা করে এই কিসিমের মশকরা সত্যি অসহ্য মনে হয়। কে কেমন বাহাদুর ছিলেন, এক-এগারোর সময় তা প্রত্যক্ষ করা গেছে। যদিও সেই ‘এক-এগারো’কে নিজেদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এমন সুন্দর বোঝাপড়া থাকার পরও অগত্যা নেত্রী অ্যারেস্ট হলে একজন কর্মীকেও রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। আজকে যে ছাত্রলীগ টাইগার সেজেছে, সেদিন মতিয়া চৌধুরীও এদেরকে ইঁদুর হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন।

যারা দূর থেকে সাব-জেলের সামনে টিফিন ক্যারিয়ার হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাদের ভাগ্য জোরে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। এমনকি পটপট চাচা কোন তরিকায় সেদিন আপন প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন, সেসবের নমুনাও ইউটিউবে সংরক্ষিত আছে। যে কেউ ইচ্ছা করলেই বীরবাহাদুরের মরা গাঙে কিভাবে জোয়ার এসেছিল, তা দেখে চোখ আর মন ঠাণ্ডা করতে পারেন।

মরা গাঙে জোয়ার কিভাবে আসে- সেটি কোনো কোনো সাহেব দেখিয়েছেন এক-এগারোতে বিশেষ জায়গায় বসে চা-বিস্কুট খেতে খেতে। বিএনপি তথা বিরোধী দলের জন্য এর চেয়েও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছেন। কাজেই এই জবাবও তারা একদিন পাবেন বলে আশা করা যায়।
যাই হোক, কেউ পরকালে চলে গেলেও তার কাজ যে থেমে থাকবে না- তাও অতিসত্বর জানিয়ে দিলেন ফারজানা রূপা। তিনি যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে ‘ম্যাজিকেল লেডি’ উপাধি দিয়েছেন।

গণতন্ত্রের স্বার্থে বিরোধী দলের সাথে আলোচনা শুরু করার চাপসৃষ্টিমূলক কোনো প্রশ্ন না করে প্রধানমন্ত্রীর মুখের ওপর বেগম জিয়ার দরজা বন্ধ করার অতি প্রিয় প্রসঙ্গ টেনে আনা হলো। এটি এখন আওয়ামী মোরাল ব্রিগেডে উপাদেয় আইটেম হয়ে পড়েছে। এই মহীয়ান ও মহীয়সীরা ভুলে যান, সেদিন বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত লাইফের সাথে পাবলিক লাইফের টক্কর খাওয়ার মুহূর্ত ছিল। এমন সময় একান্ত কাছের লোক ছাড়া অন্য কাউকে কাছে যেতে দেয়া হয় না। বরং যারা যাবেন সেটা তাদের নৈতিক দায়িত্ব এটা জেনে যাওয়া যে, তিনি তাকে গ্রহণ করার মতো মানসিক অবস্থায় আছেন কি না।

সরকারপ্রধান এবং একজন সাবেক সরকারপ্রধানের সেই সাক্ষাৎটিতে মিডিয়ার আগ্রহ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নিজের নাজুক মুহূর্তের সেই দৃশ্য ও সংলাপের প্রদর্শনী বেগম জিয়ার মতো একজন পাবলিক ফিগারের জন্য চরম যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপার হতো।
বিশেষ করে তিনি খালেদা জিয়ার একান্ত বান্ধবী বা সখী নন, বরং চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। এ ঘটনার আগেও তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক প্রীতিকর ছিল না। একজন আরেকজনের সাথে দেখা হলেও কথা বলতেন না, পরস্পরকে এড়িয়ে চলতেন। এক-এগারোর পর থেকে কোকোকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য তাকেই অন্যতম দায়ী মনে করা হয়। এর পেছনে সুস্পষ্ট কারণও রয়েছে।
এসব কিছু উপেক্ষা করে দু’জনের মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক হঠাৎ ভালো হয়ে যেত, সেই সাক্ষাতে দেশের সব রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত- এটা যারা প্রচার করেন, তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উচ্চতা নিয়ে সত্যি সন্দেহ করা যায়।

জাতির জন্য রাজনৈতিক সমঝো
তার সুযোগ শুধু এই শতাব্দীতে একবারই এসেছিল কোকোর মৃত্যুর সময়। এই সুযোগ আর কখনোই আসবে না। মহা সুযোগটি বেগম খালেদা জিয়া হেলায় হারিয়েছেন। তার জন্য পুরো জাতিকেই ভুগতে হবে।

এখন সব রাজনৈতিক সমঝোতা বা আলোচনার পথ বন্ধ করার জন্য এটাকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করা হয়। এগুলোর মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক মানসের সামগ্রিক দৈন্যটুকুই স্পষ্ট হয়ে পড়ে। কেউবা এই লিগেসি রেখে গেছেন এবং কেউ কেউ সেই বিদঘুটে সাংবাদিকতাকেই সামনে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন। আমরা অসহায় চোখে এগুলো শুধু দেখছি।
২.
পাকিস্তানের একজন অজ্ঞাত বা অখ্যাত ব্যক্তির প্রশংসা নিয়ে আহ্লাদে আটখানা হয়ে পড়েছে ৭১ টিভি ও মোহাম্মদ আরাফাতরা। দেশের উন্নয়ন প্রদর্শনের নিমিত্তে তাদেরকে শেষ মেষ এক পাকিস্তানিকে সাক্ষ্য মানতে হলো! তারা এমন উন্নয়ন করেছেন যা এ দেশের মানুষ উপলব্ধি করতে পারছে না। কাজেই জাতির বিশ্বাস পুরাপুরি ফেরানোর জন্য ৭১ টিভি ও আরাফাতদের পাকিস্তান ছাড়া এখন আর বোধ হয় গতি নেই।

বর্তমান সরকার ও তার সমর্থিত মিডিয়ার আত্মপ্রচারের কারিশমা দেখলে যুগপৎ করুণা ও হাসির উদ্রেক হয়। এক লোক তার হাতের আংটি দেখানোর জন্য আঙুল ফাঁক করে আসসালামু আলাইকুম বলে। অন্য লোকও কম যান না। তার সোনা দিয়ে বাঁধানো দাঁতটি দেখানোর জন্য দাঁতের মাড়ি ফাঁক করে বলে, ওয়া আলাইকুমুস সালাম।

যে বক্তার নামও কোনোদিন এ দেশের মানুষ শোনেনি, সেই অজ্ঞাত ও অখ্যাত বক্তার বক্তব্য কেনো ৭১ টিভির কাছে এতটুকু প্রিয় হয়ে পড়লেন, তা সত্যিই গবেষণার বিষয়। এই কিসিমের বক্তার বক্তব্য নিয়ে এখন পুরো আওয়ামী অনলাইন এবং অফলাইন মাতোয়ারা!
টিভির সেই পেয়ারা পাকিস্তানি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সূচকে (corruption perception index ) বাংলাদেশের উন্নতি দেখেও প্রশংসা করেছেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখুন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের স্কোর ২৮ এবং পাকিস্তানের স্কোর ৩২। ভালোর দিক থেকে বাংলাদেশের সিরিয়াল ১৪৩ এবং পাকিস্তানের সিরিয়াল ১১৭। নিজের দেশ থেকে পেছনে থাকা কাউকে প্রশংসা করার প্রশ্নই ওঠে না। তার পরও পেয়ারা এই এই পাকিস্তানি সেই কাজটি করেছেন।

আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশে টিআইবির দায়িত্বে যারা আছেন তাদের অধিকাংশের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। কারো কারো সাথে সরকারপ্রধানের ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব রয়েছে। এই ভালো নম্বর (২৮) পাইয়ে দেয়ার পেছনে এসব সম্পর্ক কতটুকু ভূমিকা রেখেছে সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। সরকারের এমন সাগর চুরি ও লুটপাটের পরও টিআইবির পক্ষ থেকে এই আপাত ভালো নম্বর অনেককেই দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দুনিয়ার সবচেয়ে বাজে রাস্তা নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় এ দেশে, জনাব কাদেরের মন্ত্রণালয়ে। গত ১০ বছরে সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকা এ দেশ থেকে পাচার হয়েছে। এক লাখ কোটি টাকার উপরে খেলাপি ঋণ, শেয়ার বাজার লুট, দেশের ব্যাংক খালি হয়ে পড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ লুট এবং এরকম শত শত লুটপাটের ঘটনা ঘটার পরও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল থেকে তুলনামূলকভাবে ভালো নম্বরপ্রাপ্তি বিস্ময়ের উদ্রেক করে। এত কিছুর পরও আমাদের প্রাপ্ত নম্বর পাকিস্তানের চেয়েও খারাপ। বাংলাদেশের এই উন্নতি নিয়ে সেই পেয়ারা পাকিস্তানির হা-হুতাশ! তা নিয়ে আবার একটি টিভি চ্যানেল ও মোহাম্মদ এ আরাফাতদের নাচানাচি! সত্যিই সেলুকাস! কী বিচিত্র এই দেশ!
একটি সরকার যখন তার দেশের জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলে তখন এসব হাস্যকর পন্থা ব্যবহার করে সরকারের জনপ্রিয়তা তুলে ধরার চেষ্টা করে থাকে।

আওয়ামী লীগ সরকার সম্পর্কে অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য দু’টি মন্তব্য করে গেছেন, আজীবন আওয়ামী আদর্শ ধারণ করে যাওয়া দুইজন ব্যক্তিত্ব। এদের একজন সাবেক আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও প্রখ্যাত সাংবাদিক এ বি এম মুসা এবং অন্যজন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। আওয়ামী লীগ নেতা-নেত্রী দেখা মাত্রই এ বি এম মুসা বলতে বলেছেন, ‘তুই চোর।’ মরার আগে তিনি তার এই নির্দেশ উইথড্র করে যাননি। বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলে গেছেন, দেশ বাজিকরদের হাতে চলে গেছে। অর্থাৎ বাজিকররা মহা লুটপাট করেও এটার নাম দেয় ‘উন্নয়ন’। এখন এক পাকিস্তানির মুখ থেকে প্রশংসা এনে তা মহা উৎসাহে প্রচার করা হচ্ছে।

‘উন্নয়নের বাজিকর’রা সবসময় কিছু কসমেটিক উন্নয়ন দেখিয়ে মানুষকে চমক লাগানোর চেষ্টা করে থাকে। এরা সারা দেশের সুষম উন্নয়ন না করে রাজধানী শহর কিংবা প্রধান প্রধান শহরে কিছু কসমেটিক উন্নয়ন করে। দেশের ভেতরে একটা বশংবদ শ্রেণী তৈরি করে সারাক্ষণ কথিত এই উন্নয়নের কাহিনী প্রচার করতে থাকে।

বর্তমান সরকার যতটুকু কসমেটিক উন্নয়ন করেছে, তার বেশির ভাগই রাজধানী ঢাকায়। সারা শরীর থেকে রক্ত টেনে এনে মুখমণ্ডলকে মোটাসোটা দেখানোর মতো। বাস্তব অবস্থা কতটুকু করুণ যে, খোদ সেই রাজধানী শহরই বসবাসের অযোগ্যতার দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ এই জরিপ করেছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’ (ইআইইউ) বিশ্বের সবচেয়ে অযোগ্য ১০টা শহরের তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে এক নম্বরে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক (১৪০তম)। ১৪০টি শহর নিয়ে করা এ তালিকায় ঢাকার অবস্থান এবার ১৩৯তম। গত বছর এ তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল চতুর্থ। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা, অপরাধপ্রবণতা, শিক্ষার হার এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির মান বিবেচনায় নিয়ে এই তালিকা প্রকাশ করেছে ইআইইউ। বিএনপি-জামায়াত শিবিরের পক্ষ থেকে তাদের কোনো পার্টনার নেই যারা এই জরিপে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেন।

আওয়ামী লীগকে নিয়ে সবচেয়ে মুশকিল হলো কোনো জরিপ বা সার্ভে যদি তাদের বিরুদ্ধে যায়, তবে যত বড় বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন, সেখানে বিএনপি-জামায়াত টাকা খরচ করে এটা করেছে বলে প্রচার করা হয়। আর তাদের পক্ষে কোনো অজানা প্রতিষ্ঠান জরিপ পরিচালনা করলে সেটা বিনা টাকাতেই হয়েছে বলে দেশবাসীকে বিশ্বাস করানো হয়ে থাকে।

কোনো প্রতিষ্ঠান লন্ডন বা ওয়াশিংটনের ঠিকানা থাকলেই সেগুলো বাইবেলের মতো হয়ে যায় না। এর পেছনে কারা তা তলিয়ে দেখতে হয়। সারা পৃথিবীর সচেতন মানুষ এভাবেই বিবেচনা করে। সেলিমা আহমদের পার্টনার প্রতিষ্ঠান ওয়াশিংটনভিত্তিক আইআরআই বর্তমান সরকারকে ৬৬ শতাংশ জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে।

মুশকিল হলো, নিজেরা যে জরিপগুলো বিশ্বাস করেন না সেগুলোও দেশ ও বিশ্ববাসীকে বিশ্বাস করতে বলেন। এই জরিপের ওপর যদি সরকারের নিজের আস্থা থাকত তবে তো সরকার আর নির্বাচন সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে একটুও ভয় পাওয়ার কথা না। সরকারের এই ভীতি নেতা-নেত্রীদের উচ্চারণ ও আচরণে ফুটে উঠেছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকারের পতন হলে লক্ষাধিক লোকের মৃত্যু হবে। সঙ্গত কারণেই বিএনপি নেতা রিজভী আহমেদ প্রশ্ন করেছেন, এমন কী কুকাজ করেছেন যার জন্য রক্ষীবাহিনীর সাবেক প্রধান উপদেষ্টার মনে এই আশঙ্কা জেগেছে? এই বাহিনী দেখিয়েছে, বেগতিক অবস্থায় কিভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হয়।

একটা বাহিনী নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে আলগা শৌর্যবীর্য ক্ষণিকেই চুরমার হয়ে পড়ে। এসব হম্বিতম্বি আসলে সেই অনাগত ভয় ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা! চূড়ান্ত পতনের আগে আগে এই সিম্পটম দেখান অনেকে। এই সরকার শুধু দেশেরই বারোটা বাজাননি, গণতন্ত্রেরও বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, লুটেরাদের মধ্যে প্রথম কাতারের সব কাউয়া উড়াল দেবে। লোকে বলে, এদের সবার টিকিট ও ভিসা রেডি আছে। এরা যে সম্পদ আহরণ করেছে, বাকি জীবন তা উপভোগের নিমিত্তে একটা খায়েশ সবসময় কাজ করে। এরা ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ এই তত্ত্বে বিশ্বাসী। চার-পাঁচ কোটি টাকার সমমানের বিদেশী মুদ্রা থাকলে বিশ্বের যেকোনো জায়গায় শেল্টার নেয়া যায়। সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকা তো আর এমনি এমনি চলে যায়নি। অনেকেই মিসেস কাউয়া ও বাচ্চাকাচ্চা আগেভাগেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। অনেকের পতœী বাইরে থাকায় অন্য কাউকে রাখছেন। ঊর্র্ধ্বতন এক পুলিশ অফিসারসহ এরকম দুয়েকজন নেতার কাহিনী বেরিয়ে এসেছে। কাজেই প্রথম বাতাসে কিংবা তা প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথেই এই কাউয়ারা উড়াল দেবে। মন্ত্রীদের কারো কারো সাম্প্রতিক উচ্চারণে সেই আতঙ্ক আন্দাজ করা যাচ্ছে। কিন্তু কতটুকু ঠেক দিতে পারবেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।