আপনাদের বিবেকের কি দংশন নেই, প্রশ্ন সিইসিকে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
জুলাই ২৪, ২০২৩
আপনাদের বিবেকের কি দংশন নেই, প্রশ্ন সিইসিকে
ঢাকা: ন্যায়কে অন্যায় আর অন্যায়কে ন্যায় করা হচ্ছে এমন মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) উদ্দেশ্যে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী প্রশ্ন রেখেছেন, ‘আপনাদের বিবেকের কি দংশন নেই?’

সোমবার (২৪ জুলাই) নির্বাচন ভবনে প্রতিবাদলিপি জমা দিতে এসে এবি পার্টিকে নিবন্ধনের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ায় এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।

সোলায়মান চৌধুরী বলেন, দুঃখ এবং বেদনার সঙ্গে বলছি, ইসির কাছে ন্যায়বিচার পাব আশা করেছিলাম।

তবে বাস্তবে দেখলাম ন্যায়, অন্যায়ের পার্থক্য বুঝতে অনেকের কষ্ট হচ্ছে। ন্যায়কে অন্যায়, আর অন্যায়কে ন্যায় করার বিষয়টি দেখতে পাচ্ছি। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং বিবেককে জাগ্রত করার অনুরোধ করছি।

 

তিনি বলেন, সকল নির্বাচন কমিশনার এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলছি, আপনাদের বিবেকের কি দংশন নাই? আপনাদের বিবেক কি আপনাদের দংশন করে না? আপনারা যে পরপর  এতোগুলো অন্যায় করে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, লোকজন পাঠিয়ে মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে মানুষের ছোটখাটো ত্রুটি কোথায় আছে, এগুলো বের করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যাদের নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তাদের বিশাল বিশাল ক্রটি। কোনো বাস্তবতা নাই। তারা দেশের কোনো রাজনৈতিক দল, মানুষ, সুশীল সমাজ, জনগণ কেউ জানে না। আর আমরা সকল শর্ত অক্ষরে অক্ষরে পূরণ করেও নিবন্ধন পাইনি। আমাদের নিবন্ধন দেন আমরা বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করব।

এদিকে বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির (বিএমজেপি) সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলাম। বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি প্রাথমিক বাছাইয়ের ১২টি দলের মধ্যে ছিল। ৩১ টি উপজেলায় চিঠি দেওয়া হয়েছে কার্যালয় দেখার জন্য।

তিনি যোগ করেন, প্রত্যেকটা উপজেলায় তারা গেছেন। একটাতে সমস্যা হয়েছে। সকাল সাড়ে নয়টা বা দুপুর পৌনে ১২টায় ফোন করা হয়েছিল যে আপনাদের অফিস পরিদর্শনে এসেছি। আমি বলেছিলাম যেটা এটা তো অন্য কোনো অফিস না, রাজনৈতিক দলের অফিস। এতো সকালে যে আসলেন। এতো সকালে আসলে কি করে খোলা পাবেন! আর যদি আসতেই হয় আমাদের কোনো কমিটি দুই ঘণ্টা আগে জানাইতে হবে যে আসছি। আপনারা এসে যদি বলেন আসছি… একটা উপজেলা তো অনেক দূরের ব্যাপার। দেখা যায় শেষ সীমানায় অফিস। তারপরেও তারা বলছে যা আছে অসুবিধা নেই।

তিনি বলেন, সমর্থকদের বলা হয়েছে, কেন সমর্থক হয়েছেন, কবে হয়েছেন সদস্য! যে নিয়ম কানুন আছে আ.লীগ, বিএনপিকেও যদি বলি তাদের পক্ষেও নিবন্ধন পাওয়া সম্ভব না। আর যে দুটো দলকে দিয়েছে তাদেরও কোনো না কোনো সমস্যা আছেই।

এর আগে এবি পার্টি ইসির সিদ্ধান্তের লিখিত প্রতিবাদলিপি এবং বিএমজেপি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য লিখিত দাবি জানায়।

এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী স্বাক্ষরিত লিখিত প্রতিবাদে বলা হয়েছে, মাঠপর্যায়ে এই যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে বিভিন্ন জেলার এবং বেশ কিছু উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে রহস্যজনকভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এবি পার্টির প্রতি বিদ্বেষ ও হয়রানিমূলক আচরণ করতে দেখা যায়।

সেখানে আরও বলা হয়েছে, আমরা মনে করি মাঠে ময়দানে সক্রিয়, কার্যকর এবং নিবন্ধনের নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত সকল শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও এবি পার্টিসহ একাধিক রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন না দিয়ে অপরিচিত, ভুঁইফোড়, অকার্যকর দলকে নিবন্ধন দিয়ে নির্বাচন কমিশন চরমভাবে বিতর্কিত হয়েছে। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের এমন পক্ষপাতমূলক ও বাস্তবতা বিবর্জিত সিদ্ধান্ত আমাদেরকে ক্ষুব্ধ করেছে এবং জাতির কাছে এই কমিশনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের নিকট এরকম অগ্রহণযোগ্য, বৈষম্যমূলক, অনিয়মতান্ত্রিক অন্যায্য সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এবি পার্টিসহ কার্যকর দলগুলোর নিবন্ধন দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।

অন্যদিকে বিএমজেপি সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডলের চিঠিতে বলা হয়েছে, বিএমজেপির নিবন্ধন সম্পর্কিত বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন। যারা এদেশের নিপীড়িত মানুষের কথা রাজনৈতিকভাবে তুলে ধরার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী এ দলের দিকে তাকিয়ে আছে, তাদের একটি কথা বলার জায়গা হবে এটা আশা করে। তাদের সেই চাওয়াকে বঞ্চিত করবেন না আশা করি। এটা বিশ্বাস করতে চাই যে, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হয়ে এ দলের মর্মকথা বুঝতে সমর্থ হবে।

নিবন্ধনের জন্য এবার ৯৬টির মতো দল আবেদন করলে প্রাথমিক বাছাইয়ে ১২টি দল টেকে। এরপর সেখান থেকে অধিকতর বাছাইয়ে বাদ পড়ে আটটি দল। অবশিষ্ট চারটি দলের জন্য চারটি পৃথক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) নামের দল দুটিকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।

তবে এদের বিরুদ্ধেও কারো কোনো আপত্তি থাকলে ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে জমা দিতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে সংস্থাটি।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আপত্তি শুনানির পর সিদ্ধান্ত হবে কোন দল নিবন্ধন পাবে। আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। এক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিবন্ধন পাবে না। আর প্রমাণিত না হলে নিবন্ধন পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৩
ইইউডি/এসএএইচ