আন্দোলন জোরদারের তৎপরতা বিএনপি’র

আন্দোলনের কর্মসূচি সফল করতে আরও কৌশলী হচ্ছে বিএনপি। এ মুহূর্তে সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে বিএনপি। হরতাল ও অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন তারা। আগামী রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতাল ডেকেছে। এই কর্মসূচি সফল করতে ইতিমধ্যে ঢাকাসহ সারা দেশের নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি’র হাইকমান্ড। কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়াতে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংসদীয় আসনকেন্দ্রিক সমন্বয়ক করতে বলা হয়েছে। নির্বাচনে যে নেতা যে আসনের প্রার্থী হন, সেসব আসনের প্রার্থীদের কর্মসূচিতে থেকে সম্পৃক্ত করতে বলা হয় এবং তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচিতে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় নেতাদের গ্রেপ্তার এড়িয়ে এসব কর্মসূচি সফল করতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতেও বলা হয়েছে। যাতে ভবিষ্যৎ কর্মসূচিতে কোনো প্রভাব না পড়ে।

তবে হরতাল-পরবর্তী কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শিগগিরই দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই কর্মসূচি ঠিক করা হবে। কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য মানবজমিনকে বলেন, হরতালের পর কি কর্মসূচি দেয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। তবে পরবর্তী কর্মসূচি অবরোধ কিংবা হরতাল দেয়ারই চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এরমধ্যে আগামী মঙ্গলবার কোনো কর্মসূচি থাকবে না। অর্থাৎ বুধবার থেকে পরবর্তী কর্মসূচি আসতে পারে।

বিএনপি’র জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতির সংখ্যা কম। কর্মসূচিগুলোতে কিছু সমস্যা হচ্ছে। এর মূল কারণ, বাড়িতে-বাড়িতে পুলিশি অভিযান এবং ভয়-ভীতি প্রদর্শনের জন্য তারা কর্মসূচিতে আসছে না। এরপরও জেলা পর্যায়েরর শীর্ষ নেতারা ভার্চ্যুয়াল মিটিং এবং হোয়াটসঅ্যাপে কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ লোকসমাগম করার চেষ্টা করছেন। জেলা পর্যায়ের বিএনপি’র দুই শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে বলেন, কেন্দ্র থেকে গ্রেপ্তার এড়িয়ে কর্মসূচি সফল করতে নির্দেশনা দিয়েছে। এজন্য বিভিন্ন কৌশলও অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। এরমধ্যে এক ফোন নম্বর বেশিদিন ব্যবহার করতে মানা করা হয়েছে এবং রাতে নিজেদের বাড়িতে না ঘুমাতেও বলা হয়েছে। এসব ছাড়াও আন্দোলন সফল করতে আরও বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান মানবজমিনকে বলেন, যে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, সেটা একতরফা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে। আমরা বলেছিলাম, সরকারের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ইচ্ছা নেই। আমরা মনে করি, এটা প্রমাণিত হয়েছে। আমরা দেখেছি, সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা বিজয় মিছিল করেছেন। এটা স্পষ্ট যে, সরকার বারবার এটাই চেয়েছিল। বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্রকে ধোঁকা দিয়ে আসলে তারা একদলীয় বাকশালী সরকারই দীর্ঘায়িত করবে। আর আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এর প্রতিবাদ করে এসেছি। যার অংশ হিসেবে আমরা ২৮ তারিখের সরকারি তাণ্ডবের পরে শান্তিপূর্ণ অবরোধ ও হরতালে যেতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের এই প্রতিবাদ চলতে থাকবে। যতদিন না সরকার একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ খুলে দেয় এবং এদেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার পায়।

দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখন হরতাল কর্মসূচি দেয়া আছে। এই কর্মসূচি শেষে হলে পরবর্তীতে কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া হবে, সেটা তখনই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানবজমিনকে বলেন, সামনে সর্বাত্মক কর্মসূচি আসবে। এই কর্মসূচিতে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়বে। সেই কর্মসূচি হবে তীব্র থেকে তীব্রতর। গাজীপুর জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান মানবজমিনকে বলেন, পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এখন শুধু হরতাল পালনের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন বলেন, কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি সফল করতে কমবেশি সবাই কাজ করছেন। সামনে হরতাল কর্মসূচিতে লোকসমাগম আরও বাড়বে।

যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, বিএনপি ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচিতে যুবদলের নেতাকর্মীরা রাজপথে সর্বাত্মকভাবে আন্দোলন করছেন। ভবিষ্যতেও তারা রাজপথে থেকে প্রতিটি কর্মসূচি সফল করবেন। আর আমরা এই অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে ঘরে ফিরবো না।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ছাত্রদলের প্রতিটি নেতাকর্মী তাদের জীবন বাজি রেখে সরকার পতনের প্রতিটি কর্মসূচি সফল করছেন। আর একদফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা রাজপথে সর্বোচ্চ আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। রোববার ও সোমবারের হরতালেও আমাদের নেতাকর্মীরা রাজপথে থাকবে। এরপরে বিএনপি যে কর্মসূচির ডাক দেবে আমরা আমাদের জীবন দিয়ে হলেও সেসব কর্মসূচি সফল করবো এবং সরকারের পতন ঘটাবো।

মানব জমিন