আন্তর্জাতিক শক্তি সাহস জোগাচ্ছে, বললেন মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এখন আমরা একা নই। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি যারা গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ তারা সবাই একই কথা বলছে। সেই অঙ্গীকার আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে, সাহস জোগাচ্ছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। একই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে- এখানে যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে, সংগ্রাম করছে সামনে তাদের আরও দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।’

রোববার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশিয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা ও এই মুহূর্তে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার ও ‘নো কমেন্টস’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী চাইলেও এবার ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে পারবেন না বলে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিনা ভোটারের মাধ্যমেই শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন সেটা এবার হবে না। ২০১৪ সাল, ২০১৮ সালে যেটা করেছেন সেটা ২০২৪ সালে করতে পারবেন না। কারণ এবার মানুষ যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাতে সেটা সম্ভব হবে না।

‘যেভাবেই হোক এ দেশে নির্বাচন হবেই’ গত শনিবার ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রোববার এক সেমিনারে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, যারা এভাবে কথা বলে তারা জনগণকে তোয়াক্কা করেন না। নির্বাচন হতে হবে জনগণের জন্য। সেখানে জনগণ তার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আসল কথা হচ্ছে, শেখ হাসিনা বলে দিয়েছেন- তোমরা যে যা বলো ভাই আমার সোনার হরিণ চাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যাই বলুক, তার সোনার হরিণ চাই। ক্ষমতায় কাউকে যেতে দেবেন না। পুরো সংকটটা ওই জায়গায়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিছু কিছু লোক আছেন যারা সবসময় হতাশায় ভোগেন। মাঠে থাকলে এই হতাশা আসে না। তবে বিএনপির কোনো মানুষের মধ্যে, কর্মীদের মধ্যে, নেতাদের মধ্যে কোনো হতাশা দেখেন না। আন্দোলন যারা করছেন তাদের মধ্যে কোনো হতাশা দেখেন না।’

প্রধানমন্ত্রী সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ক্ষমতা জরবদখল করে রেখেছেন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘জোর করে ক্ষমতায় বসে আছেন। এবারও তিনি একই কায়দায় তপসিল পর্যন্ত নিয়ে যাচ্ছেন। এখন সিদ্ধান্ত এদেশের জনগণের। বিজয় তাদের সুনিশ্চিত।’

সেমিনারের শুরুতে একটি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৮ সালের নির্বাচন কেমন ছিল তা তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে ‘নো কমেন্ট’ সম্পাদিত গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন বিএনপি মহাসচিব। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেন আলোকচিত্রী সাংবাদিক বাবুল তালুকদার। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন লেখকের লেখা নিয়ে এ গ্রন্থটি প্রকাশ করা হয়।

সেমিনারে সূচনা বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনে কার্যত ভোট হয়েছে আগের রাতে। এটা দুঃখজনক, কলঙ্কময়। বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। এই বইটি বাংলাদেশের ভুয়া নির্বাচন নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সংকলন। এর মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের নামে বাংলাদেশে যে চরম প্রতারণা হচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়েছে।

নির্বাচনে জালিয়াতি করা নিয়ে সরকারি দলের লজ্জাবোধ নেই মন্তব্য করে আবদুল মঈন খান বলেন, ‘গত নির্বাচনের সময় সরকারি দলের সদস্য ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মনে কোনো লজ্জা বা অপরাধবোধ ছিল না। ভোটের আগের রাতে অহংকারের সঙ্গে প্রশাসনিক শক্তি ব্যবহার করে জালিয়াতি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ আরেকটি নির্বাচনের চেষ্টা করছে, সে কারণে অতীতের অন্যায় নতুন করে তুলে ধরা হচ্ছে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেন, ‘পিটার হাসকে (বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত) ধন্যবাদ জানাই। তিনি এ দেশের জন্য অবতার হয়ে এসেছেন। তাকে আরও সাহস দেওয়া দরকার।’

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা বিরোধীদের জন্য আটকে থাকা দরজা খুলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘সামনে যেতে পারছিলাম না। সেই আটকে থাকা দরজা খুলে দিয়েছে ভিসা নীতি ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা। এই দরজা দিয়ে সামনে যেতে হবে।’

মান্না বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওরা (যুক্তরাষ্ট্র) আমাকে চায় না। ওরা না চাইলে কেউ থাকতে পারে না। ফলে আশা তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমেরিকা, ইউরোপকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এর জবাব আমেরিকা কীভাবে দেবে? আমেরিকা গায়ে পানি লাগাবে না, কিন্তু গোসল করতে চায় ‘

পূজার পরে বৃহত্তর আন্দোলন করার ঘোষণা দিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শক্তি সহায়তা করবে, কিন্তু এখানে বেল (ঘণ্টা) তাদেরই বাজাতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বক্তব্য দেন।

বিএনপির মনিরুল হক চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, ফজলুর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, ইসমাইল জবিউল্লাহ, নাসের রহমান, হারুনুর রশীদ, শামা ওবায়েদ, এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার খন্দকার লুতফুর রহমান প্রমুখ নেতারা ছিলেন।

সমকাল