আজ ২০ আগস্ট। বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী।

 

20 August 2022
আজ ২০ আগস্ট। বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানের থাট্টায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তিনি শাহাদত বরণ করেন।
দেশের এই মহান সন্তান জন্মেছিলেন ২৯ নভেম্বর ১৯৪১ সালে ঢাকার আগাসাদেক রোডের পৈতৃক বাড়িতে। প্রাথমিক পড়ালেখা শুরু হয় ঢাকার কলেজিয়েট স্কুলে।
এরপর ভর্তি হন সারগোদায় বিমানবাহিনী পাবলিক স্কুলে। এখান থেকে তিনি ডিস্টিংশনসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। বিমানবাহিনী অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালের জুন মাসে পাইলট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। মিগ কনভারশন কোর্সের জন্য তিনি সারগোদায় যান। সেখানে ১৯৬৭ সালের ২১ জুলাই একটি মিগ-১৯ বিমান চালনার সময় আগুন ধরে যায়। এ সময় প্রায় দুই হাজার ফুট ওপরে থাকা অবস্থায় প্যারাস্যুট নিয়ে দক্ষতার সাথে মাটিতে অবতরণ করেন তিনি। কিছু দিন পর পাকিস্তান সফররত ইরানের রানী ফারাহ দিবার সম্মানে যে বিমান মহড়া অনুষ্ঠিত হয়, তাতে তিনিই একমাত্র বাঙালি পাইলট ছিলেন।
করাচির বিমানঘাঁটিতে বদলি হয়ে আসেন জেট ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর হয়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত হন। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটিতে বাড়ি আসেন মতিউর রহমান। পারিবারিক বাধার মুখে মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারলেন না। স্ত্রী ও দুই কন্যাকে সাথে নিয়ে আবার করাচির কর্মস্থলে যোগ দিলেন।
সিদ্ধান্ত নিলেন যে কোনোভাবে জঙ্গিবিমান হাইজ্যাক করবেন এবং সেটা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেবেন। এলো ২০ আগস্ট। দুর্দান্ত সাহসী মতিউর করাচির মসরুর বিমানঘাঁটি থেকে টি-৩৩ জঙ্গিবিমানটি হাইজ্যাক করে নীল দিগন্তে উড়াল দিলেন।
বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য প্রশিক্ষক মতিউর ও তরুণ পাইলট অফিসার মিনহাজ রশীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। মতিউরের স্বপ্ন পূরণের আগেই ভারতীয় সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। মতিউরের লাশ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় আধমাইল দূরে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে মতিউরকে বিমানঘাঁটির কর্মচারীদের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
অনন্য দেশপ্রেম ও চরম আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সামরিক খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ দিয়ে তাকে সম্মানিত করা হয়। পরে মতিউরের দেহাবশেষ সরকারি উদ্যোগে এনে ঢাকায় মিরপুর বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আবার দাফন করা হয়।
পাকিস্তানে একটি কবরের উপর লেখা ছিলো ‘ইধার শো রাহা হ্যায় এক গাদ্দার’!
বাংলা অর্থ – ‘এখানে শুয়ে আছে এক বেঈমান’
পাকিস্তানের সেই গাদ্দারটি কে তা কি আমরা জানি?
তিনি বাংলাদেশের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান!!
দীর্ঘ ৩৫টি বছর পাকিস্তানের মাটিতে চরম ঘৃণাভরে শায়িত ছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এই নায়ক। ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের দেহাবশেষ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়,এবং পরিপূর্ণ মর্যাদায় দেশের মাটিতে দাফন করা হয়। বাংলাদেশে তার মৃতদেহ আসা পর্যন্ত খালেদা জিয়া এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করেছিলেন।
হে মৃত্যুঞ্জয়ী! তোমার আত্ম বলিদানের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন মানচিত্র।
তোমাকে আমরা ভুলি নাই। ভুলবো না। তুমি আছো লক্ষ কোটি বাঙালির হৃদয়ের গভীরে। শ্রদ্ধাঞ্জলি।
(জন্মঃ২৯ অক্টোবর ১৯৪১-মৃত্যুঃ২০ আগস্ট ১৯৭১)