আজিজের বিচার সেনাবাহিনী করবে বেনজীরের ব্যবস্থায় সরকার সম্মত

সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির তথ্য থাকলে তার বিচার সেনাবাহিনী করবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। একই সঙ্গে সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত যে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে সরকারের সমর্থন রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। রোববার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পরিচালক কৃষ্ণামূর্তি ভেনকারা সুবরামানিয়ানের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা জানান।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আমি ঋণখেলাপিদের ধরতে চাই।এ সময় সাংবাদিকরা বলেন, ঋণখেলাপিরা অনেক শক্তিশালী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আপনি পারবেন কিনা? জবাবে মন্ত্রী বলেন, দেখা যাক পারা যায় কিনা। এরপর মন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখছেন সাবেক পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তার কি ক্ষমতা কম ছিল? অনেকেই বলে এটা আইওয়াশ, এখানে কি সরকারের সমর্থন ছিল? তার ওপর তারা বড়ও হয়েছে সরকারের সমর্থন নিয়ে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অর্থমন্ত্রী বলেন, সমর্থন না থাকলে পারবে? আর্মি চিফের বিষয়ে সরকার কিছু করেনি (ব্যবস্থা নেয়নি)- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার করেনি, আর্মি করবে। আর্মিতে না থাকলেও আর্মি করতে পারবে।

বাজেটে তিন চ্যালেঞ্জ: অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটে তিনটি চ্যালেঞ্জ আছে- মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভ বৃদ্ধি ও বাজস্ব আয় বাড়ানো। আগামী বাজেটে চেষ্টা করবো কীভাবে মানুষকে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে স্বস্তি দেয়া যায়।

এ ছাড়া আমাদের অর্থনীতিতে বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে, সেগুলো ওভারকাম করতে হবে এবং আগামী বাজেটে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

 

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গভর্নর চেষ্টা করছেন। তিনি তো সরকারের অংশ, বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করছে। তিনি আগে অর্থসচিব ছিলেন। অথচ কিছু হলেই তাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলা হয়। বলা হয় তার কোনো আইডিয়া নেই। কিছু না জানলে তো আর এমনি এমনি অর্থসচিব হননি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণকে যে ইশতেহার দিয়েছিল, সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী জানান, আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি জুন মাসেই ছাড় করা হবে।

অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন দেশের অর্থনীতি দুর্যোগের মধ্যে পড়েছে- এটা কি আপনি স্বীকার করেন। এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন আমি বুঝলাম না। বিরুদ্ধে বললেই কি সে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল? আসলে তারা তো বিরোধী পক্ষের লোক। কিছুই হয় নাই, সব নষ্ট হয়ে গেছে! এগুলো কী? সরকারবিরোধী কথা বললেই কি বিরোধী পক্ষ হয়ে যাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, না, তবে তার টোনটা দেখতে হবে। কেউ কিছু বললেই দেশে অর্থনীতি শেষ হয়ে যাবে!

বাজেট ব্যয় সংকোচনমূলক হবে কিনা, জানতে চাইলে আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, সংকোচনমূলক তো ইতিমধ্যে হয়েছে। ওটা পার হয়ে যাচ্ছি আমরা। সংকোচন থেকে আমরা ফেরত আসবো। কীভাবে এক্সপানশন করা যায়, সেটাই চেষ্টা করছি। এই বাজেট থেকেই সেটি চেষ্টা করবো।

আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি পাওয়া যাবে জুনে:আইএমএফ থেকে ঋণের তৃতীয় কিস্তি এই জুনেই পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, যাতে ডলারের প্রবাহ বাড়ানো যায়। এখানে অনেক নেগোসিয়েশন আছে। আমরা যেটা আশা করছি, এ সমস্যা সমাধান করতে পারবো। আমরা কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, আইএমএফের নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, আপনারা সঠিক পথে আছেন। আপনারা যে কাজ করছেন, সমস্যা সমাধানে সেটাতে আমাদের সমর্থন আছে। জুনে আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির টাকা পাওয়া যাবে কিনা, সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, জুনেই তারা দেবে। সেখানে বাধা তো নেই।

বাজেটে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকবে: আগামী বাজেটে কোন খাতে আপনার বা সরকারের প্রাধান্য থাকছে- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য অর্থনীতি অনট্র্যাকে ফিরিয়ে আনা। একই সঙ্গে নিত্যপণ্য যাতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে এগুলো নিশ্চিত করা। মানুষের জীবনযাত্রার মান এটাও যেন সীমার মধ্যে থাকে। সর্বোপরি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার একটা প্রতিফলন বা প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন আগামী বাজেটে। একই সঙ্গে সরকার যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিল, সেটার একটা রিফ্লেকশন (প্রতিফলন) দেখতে চাই।

তিনি বলেন, আমাদের অনেক অসুবিধা আছে, সেগুলো তো ওভারকাম করতে হবে। আমরা আশা করবো আস্তে আস্তে এগুলো থাকবে না। মানে নির্বাচনী ইশতেহারে মানুষকে যে আশ্বাস দেয়া হয়েছে সেটার একটা প্রতিক্রিয়া থাকবে। কিন্তু অনেক বাধা আছে, সেটা অতিক্রম করতে হবে। এরই মধ্যে অনেকগুলোর কাজ হচ্ছে।

manabzamin