ঢাকা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তো ছিল জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগের। তাঁরা বিএনপি সরকারের সময় বলেছিলেন, এই মুহূর্তে দরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আর আজকের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন, “সারা জীবনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই।”’
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর কমলাপুরে শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের পাশে পদযাত্রা–পূর্ব এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস এ কথা বলেন। তিনি বিএনপির পদযাত্রাকে বর্তমান সরকারের ‘শবযাত্রা’ বলে মন্তব্য করেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজ আমরা বলছি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আর তাঁরা (সরকার) বলছেন, সংবিধানের বাইরে যাওয়া যাবে না। এই সংবিধানকে কেটেছিঁড়ে অপমান করেছেন। আপনারাই তো বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগ মিলে তত্ত্বাবধায়কের দাবি তুলেছিল।’
সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তাঁরা বলেন বিএনপি-জামায়াত। আরে, বিএনপি-জামায়াত না, আওয়ামী-জামায়াত। ওদের দাবি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আজকের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সারা জীবনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই। তাঁদের মুখের কথার কোনো ঠিক নাই। যখন যেখানে যেটা প্রয়োজন, সেটা তাঁরা ব্যবহার করেন।’
সাবেক মন্ত্রী ও ঢাকার মেয়র মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজ মানুষ বুঝে ফেলেছে, এই সরকারের কথার কোনো ঠিক নাই। বলেছিলেন, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবেন। এখন চালের কেজি ৮০ টাকা। বলেছিলেন ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়া হবে। কাল না পরশু দিন টেলিভিশনের স্ক্রলে দেখলাম, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চাকরির পেছনে ছুটে লাভ নাই, কাজকর্ম করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য করেন।’
পুলিশ মাইক দিয়ে ভোটার ডাকছে, সেরা কৌতুক
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সকাল থেকে ভোটকেন্দ্রে ভোটার নাই। মিডিয়াতে প্রচার হচ্ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি কেন্দ্রে তিন-চারটি কুকুর ঘুমিয়ে আছে। আল্লাহ বাঁচাইছে, কুত্তার ভোট দেওয়ার অধিকার নাই। যদি থাকত, তাহলে কী সর্বনাশ হয়ে যেত। একটা কেন্দ্রে কোনো ভোটার যাচ্ছে না। পুলিশ মাইক দিয়ে ভোটার ডাকছে। এ রকম সেরা কৌতুক আমার জীবনে শুনি নাই।’
সমাবেশে মির্জা আব্বাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সমালোচনা করে বলেন, ‘কথা নেই বার্তা নেই, গতকাল হঠাৎ করে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দিল। বিদ্যুৎমন্ত্রী বলে ফেললেন, মাসে মাসে সমন্বয় করা হবে। ভাবটা এ রকম, এইটা কারও একটা রাজত্ব। রাজার হুকুমমতো দেশ চলবে।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, এটা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের হুকুমে এই দেশ চলবে, কারও রাজতন্ত্রে নয়। তবে হ্যাঁ, এখন তো সরকার নাই। একটা অবৈধ দানব আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে। এই দানবকে ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।’
সরকারের শবযাত্রা
ঢাকায় বিএনপির চার দিনের পদযাত্রাকে বর্তমান সরকারের ‘শবযাত্রা’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, এই যে পদযাত্রায় সরকারের ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা যদি চিৎকার করি, আওয়ামী লীগ ভয় পায়। আমরা যদি নীরব থাকি, তা–ও আওয়ামী লীগ ভয় পায়। আমরা নীরব পদযাত্রা করব, আওয়ামী লীগের ভয়ের কী আছে? বিএনপির পদযাত্রায় যে রাস্তা প্রকম্পিত হচ্ছে, সে কারণে আওয়ামী লীগ ভয় পেয়ে গেছে।’
বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির সমালোচনার জবাবে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের একজন চাটুকার একেক রকম কথা বলছে। কেউ বলছে বিএনপির মরণযাত্রা, কেউ বলছে এইটা, কেউ বলছে সেইটা। আরে ভাই, আমাদের মিছিল মরণযাত্রা বা যা–ই হোক, তাতে তোমাদের কী আসে–যায়।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘খন্দকার মোশাররফ হোসেন (বিএনপির নেতা) একটা নাম দিয়েছেন, সরকারের বিদায়ের শোভাযাত্রা। গয়েশ্বর রায় একটা নাম দিয়েছেন। আমি আজকে বলছি, এই পদযাত্রা আওয়ামী লীগের শবযাত্রা। আপনাদের পতন শুরু হয়ে গেছে।’
সরকার পতনের আওয়াজ টের পেয়ে গেছে—এমন দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কিন্তু পায়ের আওয়াজ পেয়ে গেছে। ওই যে কারা আসছে, এরা কারা। এরা গণতন্ত্র চায়, এরা ভোটের অধিকার চায়, এ দেশের মানুষের অধিকার আদায় করতে চায়। আওয়ামী লীগ টের পেয়ে গেছে।’
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, এটা (পদযাত্রা) নাকি মরণযাত্রা। এ ধরনের কথা কেবল আওয়ামী লীগের মুখেই মানায়। আমরা কারও মরণ চাই না। আমরা এই সরকারকে বিদায়ের জন্য মিছিল করতে চাই। শেখ হাসিনাকে বিদায় না করা পর্যন্ত আমরা রাস্তায় থাকব।’
সমাবেশের পর বেলা সাড়ে তিনটায় মুগদা থেকে মালিবাগ কাঁচাবাজার পর্যন্ত পদযাত্রা শুরু হয়। কর্মসূচিতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশ নেন। প্ল্যাকার্ডে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কমানো, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়। পদযাত্রা কর্মসূচির কারণে কমলাপুর, মুগদা-খিলগাঁও সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় টিটিপাড়ার বিভিন্ন আন্তজেলা বাস কাউন্টারের যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন।