আগুন নিয়ে হাসিনার বেফাঁস কথাবার্তা, সরকারের ব্যর্থতা ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা

 আমার দেশ
১৬ এপ্রিল ২০২৩

আগুনের ঘটনা নাশকতা কি না খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে

আগুনের ঘটনা নাশকতা কি না খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধি

আগুনের ঘটনা তদন্তের আগেই শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রকৃত দোষী ও সরকারের ব্যর্থতাকে আড়াল করতেই শেখ হাসিনা বলেছেন, আগুনের ঘটনা নাশকতা কি না খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের জিম্মাদার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যতই বলুক তদন্তের আগে কিছুই বলা যাবে না, এতে কিছু যায় আসে না। শেখ হাসিনার নির্দেশের বাইরে যাওয়ার তারও কোন সুযোগ নেই। শেখ হাসিনার ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যের বাস্তবতা প্রমান করতেই এখন তাঁর যত চেষ্টা থাকবে।
দেশে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই তার পেছনে ‘বিএনপি-জামায়াত’ জড়িত বলে গড়গড় কথা বলেন শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে সুর মেলান তার দলদাস নেতা-কর্মীরা। সবশেষ রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর বিভিন্ন বিপণি বিতানে সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলো নাশকতা বা ষড়যন্ত্র কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

এদিকে শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফ্যাসিবাদের রাজনৈতিক সহযোগী জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) রোববার (১৬ই এপ্রিল) বলেছেন, আগুনের ঘটনাকে নাশকতা বলে জনগণের সঙ্গে মশকরা করছে সরকার। এই কথা বলার মাধ্যমে তিনিও মানুষের দৃষ্টি নিজের দিকে নিতে চেষ্টা করছেন। তবে সবাই জানেন, শেখ হাসিনার হুকুমের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কারও নেই।

আসাদুজ্জামান খান কামাল হাসিনার বক্তব্যের ঠিক বিপরীত মন্তব্য করে রোববার বলেছেন, ঘন ঘন আগুন লাগার কারণ নিয়ে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। শেখ হাসিনার রাজপথের বিরোধী দলকে ইঙ্গিত করে নাশকতার তদন্তের নির্দেশের পর আসাদুজ্জামান খান কামালের এই কথা মূল্যহীন। তিনি এই কথার মাধ্যমে সাধু সেজে শেখ হাসিনার বক্তব্যের বাস্তবতা প্রমাণেরই চেষ্টা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। পরবর্তীতে বলবেন, আমি তো বলেছিলাম তদন্তের পর বলা যাবে। এখন তদন্তে পাওয়া গেছে বিএনপি-জামায়াত জড়িত। শেখ হাসিনার ইচ্ছা বাস্তবায়নকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতেই তিনি সাধু সেজে বক্তব্য দিয়েছেন।

রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার পরের দিন রোববার (১৬ই এপ্রিল) তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কলোনি বাজারে সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে ঈদ সামগ্রী বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তদন্তের আগে কিছুই বলা যাবে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটা আগুনের পেছনে কারণ থাকে। ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট কিংবা এটা সেটা। নাশকতাও থাকে। আমরা এখনও সুনিশ্চিত নই। আমরা ইনকোয়ারি করছি।’

ঘন ঘন আগুন লাগার পেছনে নাশকতা আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সবার কাছে একটা প্রশ্ন জাগছে, এত ঘন ঘন এবং শেষ রাতেই কেন দুর্ঘটনাগুলি ঘটে। এটা সবাই প্রশ্ন করছে। আমরা ইনকোয়ারির আগে, সঠিক তদন্তের আগে বলতে পারব না। আমি সুনিশ্চিত না হয়ে কিছু বলছি না।’

ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকও বলেছেন, রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডে নাশকতার কোনো আলামত পুলিশ পায়নি।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমাদের মার্কেটগুলো এমনভাবে তৈরি করা আছে, যার বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস অনেকগুলো মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। আমাদের পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা সবগুলো বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করব। এগুলো নিছক দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে অন্য কোনও কারণ আছে তা খতিয়ে দেখা হবে।

শেখ হাসিনা যখন আগুনের দায় বিএনপি-জামায়াতের ওপর চাপানোর হীন ষড়যন্ত্র করছেন, ঠিক তখনই রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের মালিক সমিতির সভাপতি মো. শহিদুল্লাহ বলেছেন, সিটি করপোরেশনের লোক রাত ৩টার দিকে ব্রিজ ভাঙার কাজ করছিল। ব্রিজের ওখানে আমাদের কারেন্টের লাইন আছে সেটা তারা খেয়াল করেনি। ওই লাইনের ওপর বুলডোজার চালানোর সময়ই আগুনের সূত্রপাত হয়। তারা কোনো পরিকল্পনা না করে এই ব্রিজ ভাঙার কারণে আজ এ দশা হয়েছে।

যদিও শেখ হাসিনার আত্মীয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র ফজলে নূর তাপসের লোকজন দাবি করছে, ফুট ওভারব্রিজ ভাঙার সঙ্গে আগুন লাগার কোনো সম্পর্ক নেই।

নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী ফারুক মুন্সি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ব্রিজ ভাঙতে যাইয়া শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগছে। মার্কেটের লগে ফুট ওভারব্রিজের সিঁড়িটা ভাঙছে। সিঁড়ি ভাঙতে গিয়া মার্কেটে আগুন লাগাইছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিচে কাপড়, উপরে কাপড়, সাইডে কাপড়। ওয়েল্ডিংয়ের আগুন মার্কেটে ঢুইকা আগুন লাইগা গেছে। এটা সিটি করপোরেশনের সম্পূর্ণ দোষ। এরা যদি ব্রিজ ভাঙতে না যাইতো, আমাদের নেতা ফরমান মোল্লার কথা হুনতো, আইজকা মার্কেটে আগুন লাগে না। ব্রিজ ভাঙতে গিয়া এরা মার্কেট জ্বালাই ফেলাইছে।’

আরেক ব্যবসায়ী বাবুল মুন্সি অভিযোগ করেন, পরিকল্পনা করে এই আগুন লাগানো হয়েছে। বহুতল ভবন করার জন্য এই আগুন লাগানো হয়েছে।

নিউ সুপার মার্কেটের লিংকিং পার্কের মালিক রবিন বলেন, ‘ভোররাত সাড়ে ৪টা বাজে ব্রিজ ভাঙছে। ব্রিজটি মার্কেটের আওতায় ছিল। দোকান থেকে কিছুই বের করতে পারিনি, সবশেষ।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র মো. আবু নাসের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ব্রিজ ভাঙার কাজ ভোররাত ২টার দিকে শুরু হয় এবং ভোর ৫টার দিকে শেষ হয়। ঘটনাস্থল থেকে ৪০০ ফুট দূরে আগুন লেগেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্রিজ ভাঙার কাজে গ্যাস কাটার ব্যবহার করা হয়নি। ডিপিডিসির কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ব্রিজটির সিঁড়ির একটি অংশ ভাঙার সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তাই ব্রিজ ভাঙার সঙ্গে আগুন লাগার সম্পর্ক নেই।’

উল্লেখ্য, শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে আগুনের তথ্য জানতে পারে ফায়ার সার্ভিস। পরে একে একে ৩০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ শুরু করে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।