আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে গণতন্ত্রের ‘গ’ও থাকবে না

আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে গণতন্ত্রের ‘গ’ও থাকবে নাছবি: সংগৃহীত

আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে প্রকৃত অর্থে নির্বাচন বলা যায় না। এতে সব দল অংশগ্রহণ করছে না। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কৃত্রিম আবহ তৈরি করার চেষ্টা করা হলেও নির্বাচনে মূলত কোনো প্রতিযোগিতা নেই; বরং যারা অংশ নিচ্ছে, তারা প্রায় সবাই পরস্পরের মিত্র। যিনিই জয়লাভ করবেন, তিনিই সরকারের লোক। কারণ, নির্বাচন হচ্ছে আওয়ামী লীগ আর স্বতন্ত্র লীগের মধ্যে। নির্বাচনের ফলাফল আগেই নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এরপরও আচরণবিধি ভঙ্গের মহোৎসব চলছে।

বৃহস্পতিবার ভাচুর্য়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এ সময় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণের ফল তুলে ধরা হয়।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ক্ষমতার সঙ্গে জাদুর কাঠি জড়িত। দেখা যাচ্ছে, যে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ছিল, সেখানে প্রার্থীদের মধ্যে আয়বৈষম্য কম ছিল। একতরফা নির্বাচনে এই বৈষম্য বেড়ে যায়। কারণ, এসব নির্বাচনে যেনতেন প্রার্থী দিলেও জিততে সমস্যা হয় না।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের নানা বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের ২৬৫ প্রার্থীর মধ্যে ১৭০ জন (৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ) পেশায় ব্যবসায়ী। জাতীয় পার্টির ২৬২ প্রার্থীর মধ্যে ১৭৩ জন (৬৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ) ব্যবসায়ী। ৪৩৩ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ব্যবসায়ী ৩০২ জন (৬৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ)। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার ব্যবসায়ী প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। গত নির্বাচনে ব্যবসায়ী প্রার্থী ছিলেন ৫২ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ৯১৫ জন (৪৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ) আয়কর দেন। এর মধ্যে লাখ টাকার ওপরে আয়কর দেন ৩৫২ জন।

দিলীপ কুমার সরকার বলেন, নির্বাচনটি আইনগতভাবে বৈধতা পেলেও মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বলে তারা মনে করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সুজনের নির্বাহী সদস্য ড. শাহ্দীন মালিক বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতাদের কার্যকলাপে মগের মুল্লুকও লজ্জা পাবে। এই নির্বাচন হচ্ছে আওয়ামী লীগ বনাম স্বতন্ত্র লীগের। নির্বাচনে জিতলে অধিকাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থীই আওয়ামী লীগে যোগ দেবেন। ফলে আগামী সংসদে ২৮০ জনই সরকারি দলের হলে আশ্চর্য হবো না। গণতন্ত্রের যে ‘গ’ আছে, সেটাও আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে থাকবে না।”

অনুষ্ঠানে সাবেক বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, ‘জনগণ এখন সংসদ থেকে কিছু আশা করে না। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তো জিতেই গেল। তবে এই নির্বাচন কেউ মেনে নেবে না। টানেলের শেষে নিশ্চয়ই আলো আসবে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ভালো নির্বাচন হবে, এই আশা করি।’

সংবাদ সম্মেলনে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ভোটের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের আগেই নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হলফনামার তথ্যের সঠিকতা যাচাই ও অসত্য তথ্য প্রদানকারীদের ফলাফল বাতিল করা; যেসব প্রার্থীর আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ বা সন্দেহজনক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তাদের তথ্যের সঠিকতা যাচাই ও অসত্য তথ্য প্রদানকারীদের ফলাফল বাতিল করা; হলফনামার ছকে পরিবর্তন আনা, বিশেষ করে সম্পদের তথ্য ছকে পরিবর্তন আনা– এ ক্ষেত্রে অস্থাবর ও স্থাবর সম্পদ বর্তমান বাজারমূল্যে উল্লেখ বাধ্যতামূলক করা। নির্বাচনের পর দ্রুত সরকারের উদ্যোগে সব দলের মধ্যে সংলাপ, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে সমঝোতায় আসা ইত্যাদি।

সমকাল