কিশোরগঞ্জ
দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পঞ্চমবারের মতো বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে সাবেক সাংসদ মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানকে। বরাবরের মতো এবারও দলের এই সিদ্ধান্ত খুব একটা গায়ে মাখছেন না এই রাজনীতিক। তাঁর এলাকা কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর মানুষের প্রশ্ন, আখতারুজ্জামানের বিষয়ে বিএনপির এটা শেষ বহিষ্কারাদেশ কি না।
কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড–লাগোয়া সবজি বাজারের কাছে আজ সোমবার দুপুরের দিকে কয়েকজন যুবক দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তাঁদের আলোচনার কেন্দ্রে ছিল আখতারুজ্জামানকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার। উপজেলার চান্দুপুর ইউনিয়নের পূর্ব চান্দুপুর গ্রামের ইলিয়াস কবির বলেন, ‘এখন আমাদের জানার আগ্রহ, এটিই শেষ বহিষ্কার কি না? নাকি এই রাজনীতিকের জীবনে আরও বহিষ্কৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’ তাঁদের ধারণা, বিএনপি টেনে নেবে আখতারুজ্জামানকে।
কটিয়াদীর বাসিন্দা আখতারুজ্জামান কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে টানা দুবার সাংসদ নির্বাচিত হন। তখন আসনটি কেবল কটিয়াদী উপজেলা নিয়েই ছিল। এখন এই আসনে যুক্ত করা হয়েছে পাকুন্দিয়া উপজেলাকেও। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান পুলিশের সাবেক আইজিপি নৌকার নূর মোহাম্মদের কাছে।
বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্য ও কার্যক্রমের জন্য কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক এই সভাপতিকে এর আগে চারবার বহিষ্কার করে বিএনপি। কিছুদিন না যেতেই আবার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়। তাই এবারও বহিষ্কারের পর আখতারুজ্জামানের রাজনৈতিক এলাকায় বা জেলা বিএনপির নেতা–কর্মীদের মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।
দলের একাধিক সূত্র জানায়, কয়েক বছর পর পর আখতারুজ্জমান বহিষ্কার হবেন, নেতা–কর্মীদের মধ্যে এমন ধারণা আগে থেকেই রয়েছে। শুধু বহিষ্কার নয়, আবার তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে—সেটাও বিশ্বাস তাঁদের।
‘দল কেন বারবার আমার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়, আবার কেনই বা ফিরিয়ে নেয়—সেটা দল ভালো বলতে পারবে।’
বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আখতারুজ্জামানের বহিষ্কার হওয়ার তথ্যটি প্রকাশ পাওয়ার পর থেকে আমরা মুঠোফোনে একে অপরের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করছিলাম। সবার আলোচনা এক জায়গায় গিয়ে ঠেকেছে। আর সেটি হলো দলই তাঁকে বহিষ্কার করে, আবার দলই তাঁকে ফিরিয়ে নেয়।’
কটিয়াদী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া তাঁদের কিছু করার নেই। কারণ, দল সবার আগে। তবে লোকজন জানতে চাচ্ছে, এই বহিষ্কারের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে।
দলীয় সূত্র জানায়, আখতারুজ্জমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি স্পষ্টবাদী ও একরোখা স্বভাবের মানুষ হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় দলীয় রাজনীতিতে তাঁর তেমন কোনো বদনাম নেই। সব বহিষ্কারের পেছনে কাল হয়েছে টিভি টক শো। প্রতিবারই টক শোতে দলের বিরুদ্ধে যায় এমন কথা বলে কেন্দ্রের রোষানলে পড়েন।
আখতারুজ্জামান প্রথম বহিষ্কৃত হন ১৯৯৬ সালে। সেই সময় জাতীয় সংসদের একটি অধিবেশন থেকে বিএনপি ওয়াকআউট করে। সেদিন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে সংসদে থেকে যান। এর কিছুদিন পরই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। দ্বিতীয়বার বহিষ্কার হন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে। বিএনপি এই সরকার পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছিল। সেই সময় তিনি টিভি টক শোতে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জনগণের। বিএনপির উচিত ওই দাবি মেনে নেওয়া।
তৃতীয়বার বহিষ্কারাদেশ আসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক জিয়ার আপত্তিকর এক মন্তব্যের কয়েক দিন পর। সেই সময় তিনি তারেক জিয়াকে ‘বেয়াদব’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন আখতারুজ্জামান। চতুর্থবার বহিষ্কৃত হন দলীয় জ্যেষ্ঠ নেতাদের সমালোচনা করে। সর্বশেষ বহিষ্কার হতে হলো বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে দলীয় নেতাদের ব্যর্থতার বিষয়টি সামনে এনে।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন খানের ভাষ্য হলো, কিছুদিন পর পর বহিষ্কারের কারণে তাঁদের বিব্রত হতে হয়। তবে এটা যেহেতু দলীয় সিদ্ধান্ত, তাই এখন থেকে আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সাংগঠনিক বিষয়ে আর যোগাযোগ রাখার সুযোগ নেই। পারিবারিক আমন্ত্রণ পেলে হয়তো দেখা হবে।
পুরো বিষয় নিয়ে আজ বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘দল কেন বারবার আমার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়, আবার কেনই বা ফিরিয়ে নেয়—সেটা দল ভালো বলতে পারবে।’ রাজনৈতিক জীবনে এটাই শেষ বহিষ্কারাদেশ হবে কি না, এ বিষয়ে স্থানীয় লোকজনের জানার আগ্রহের কথা জানতে চাইলে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক বলেন, ‘সবকিছু দল জানে।’