- অনলাইন প্রতিবেদক
- ০৫ মার্চ ২০২২
আওয়ামী লীগ দেশকে একটি ভয়াবহ নরকে পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি বলেন, তারা যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে এ জন্য প্রত্যেকটি দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে।
শনিবার (৫ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের উদ্যোগে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠান তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ৩৫ লাখ লোকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আমরা যখন কোর্টে যাই চারিদিকে আমাদের লোক আর কিছুই দেখা যায় না। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এমনকি ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের ছোটখাটো যে সকল নেতা রয়েছে তারাও এই মিথ্যা মামলায় জর্জরিত। এমনও আছেন যারা নেতাও নন সমর্থকও নন, তাদের বিরুদ্ধেও অসংখ্য মামলা চলছে। তারা দেশকে নরকে পরিণত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এতদিন যে কথাগুলো বলে এসেছি, গুম হওয়া পরিবারের শিশুদের এই কান্না, তা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে গেছে। দেশের প্রশাসনের যে সকল কর্মকর্তাদের উপর আমেরিকা যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেখানে স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে। গুম করা বিনাবিচারে হত্যা করার জন্যে আজকে একটি প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো একটি দেশ যেখানে আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছি। দেশ যখন স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেছে তখন এই ধরনের একটি নিষেধাজ্ঞা পুরো জাতির উপর একটি কলঙ্ক লেপন করা হয়েছে। এর জন্য দায়ী সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগ সরকার। অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য চরম জঘন্য অমানবিক কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার।’
গুম হাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে এই পরিবারগুলোর দিকে তাকালে নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হয়। তারা আজ মানসিক, সামাজিক, আর্থিকভাবে খুবই কষ্টে রয়েছে। এসমস্ত পরিবারের বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে অসুবিধা হচ্ছে, চিকিৎসার খরচ যোগাতে অসুবিধা হচ্ছে। আমরা তো ঠিক সেইভাবে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি না।’
ফখরুল বলেন, ‘মানুষ জেগে উঠছে, জেগে উঠবে ইনশাআল্লাহ। এই অন্ধকার কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ। আওয়ামী লীগ যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে এ জন্য প্রত্যেকটি দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হবে এবং তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে। জনগণের কাঠগড়ায় তাদেরকে দাঁড়াতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের তরুণ-যুবক যারা কাজ করছে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই অন্ধকার অবসান ঘটাবে। একটি গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে। আসুন আমরা সবাই সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাই। ঐক্যবদ্ধ হই, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করি এবং এই ফ্যাসিবাদী সরকার যারা গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে খারখার করে ধ্বংস করে দিয়েছে তাদেরকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যখন গণতন্ত্র থাকে না তখন এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকে। আমাদেরকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তাকে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে। তাকে আটকে রাখার একটিমাত্র কারণ- তিনি বাইরে থাকলে তাদের ক্ষমতা টিকে থাকা সম্ভব হবে না। তাই তাকে এভাবে আটকে রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। এই অবস্থা থেকে আমাদেরকে পরিত্রাণ পেতে হবে দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে।’
যারা গুম হয়েছে তাদের পরিবারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘তোমরা একা নও, তোমাদের সাথে সারাদেশ রয়েছে। দেশের মানুষ রয়েছে।’
আন্দোলন-সংগ্রামে যারা আহত হয়েছেন তাদেরকে সম্মাননা স্মারক এবং আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে যারা প্রাণ হারিয়েছেন এরকম একাধিক নেতার পরিবারকে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল সালাম, তাহসিনা রুশদীর লুনা, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিকুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।