আওয়ামী লীগ চায় না ভোটাররা কেন্দ্রে আসুক : বিএনপি

Daily Nayadiganta


ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। প্রচারণায় বাধা, পুলিশের অসহযোগিতা ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে বিএনপি। বুধবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম এ কথা বলেন।

আব্দুস সালাম বলেন, সিরাজগঞ্জ-১ আসনের আমাদের প্রার্থীকে ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না আওয়ামী লীগের কর্মীরা। তারা কোনো প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। শুধু তাই নয়, আমরা বৈঠক করার সময় ঢাকা-১৮ আসনের প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীরের স্ত্রী খিলক্ষেতের একটি এলাকায় প্রচারণায় গেলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে অসদাচরণ করেছে। আওয়ামী লীগ চায় না ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসুক।

এ সময় নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, বিএনপির প্রতিনিধি দল মোটাদাগে তিনটি অভিযোগ করেছেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- পুলিশের অসহযোগিতা, প্রচারণায় বাধা এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীর আচরণবিধি লঙ্ঘন। আমরা তাদের অভিযোগগুলো শুনেছি। এ বিষয়ে কমিশন থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে বিকেল ৩টায় বিএনপির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দলের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ঢাকা-১৮ আসনের বিএনপির প্রার্থী এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিএনপিসহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম।

এদিকে বুধবার সকালে উত্তরায় নিজ বাসায় ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, নেতাকর্মীদেরই নয়, প্রার্থী হিসেবে আমাকেও গণসংযোগে আওয়ামী লীগ বাধা দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ ঝামেলা করলেও আমরা কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাই না। কারণ, আমাদের সঙ্গে সাধারণ ভোটাররা আছেন। তারা আগামী ১২ নভেম্বর ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। যেখানেই ধানের শীষের গণসংযোগের ন্যূনতম সুযোগ হচ্ছে, সেখানেই গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণেই আওয়ামী লীগ ভীত হয়ে এ সব হামলা করছে। নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

ঢাকা-১৮ আসনের বিএনপি নেতারা ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, নেতাকর্মীরা জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন এবং শেষ পর্যন্ত নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবেন, ভোটারদের নিজের ভোট স্বাধীনভাবে পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারেন সেই সুযোগ করে দেবেন। আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপি সরকার এই এলাকায় বিগত সময়ে যে উন্নয়ন করেছে তার জন্যই ভোটাররা ধানের শীষে ভোট দেবেন। প্রতীক পাওয়ার পর গত ২৩ অক্টোবর জুমার নামাজ আদায় করে উত্তরা-৭ নম্বর সেক্টরের ১ নং সড়ক থেকে ধানের শীষের পক্ষে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করি।

তিনি বলেন, এরপর থেকে প্রতিটি গণসংযোগে আওয়ামী লীগ বাধা দিচ্ছে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমাদের নেতাকর্মীদের প্রচারে বাধা দেয়া হচ্ছে। আপনারা দেখেছেন প্রার্থী হিসেবে আমাকেও বাধা দেয়া হচ্ছে। তাহলে এটা কেমন নির্বাচন? অথচ প্রতিটি কর্মসূচি নেয়ার আগে পুলিশের অনুমতি নেয়া হচ্ছে। এই জোনের পুলিশের ডিসিকে গত দুই দিন ধরে ফোন দিয়ে যাচ্ছি তিনিও রিসিভ করছেন না। আসলে আওয়ামী লীগ চাচ্ছে যাতে করে ভোটের দিন ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট না দিক।

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে জাহাঙ্গীর বলেন, ঢাকা-১৮ আসনে ধানের শীষের যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে-এটা দেখে যদি তারা মনে করে এখানে তারা পরাজিত হবে তাহলে সমস্যা কোথায়? সরকারে তো তারাই থাকছেন। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনী বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঢাকা-১৮ আসনে মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। আমরা যেখানে কর্মসূচি দিচ্ছি সেখানে তারা পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছেন। আমাদের বক্তব্য, যতই বাধা দেয়া হোক শেষ পর্যন্ত আমরা মাঠে আছি। আমরা গণতন্ত্র ফিরেয়ে আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা মনে করি, ক্ষমতা পরিবর্তনেরও একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচন। আশা করি, নির্বাচন কমিশন তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ভয়হীন নির্বাচনী পরিবেশ উপহার দেবেন।

আওয়ামী লীগ গায়ে পড়ে ঝামেলা করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর বলেন, গতকাল আমার বাসার সামনে এসে অনেকক্ষণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল করেছে। তখন সেখানে আমাদের কয়েক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিল। আসলে আওয়ামী লীগ গায়ে পড়ে ঝামেলা করতে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার নির্দেশ দেয়া আছে। আমাদের একমাত্র শক্তি হচ্ছে জনগণ। অতএব, আমাদের কোনো চিন্তা নেই। ভোট হলে ধানের শীষই এ আসনে জয়লাভ করবে। ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে বারবার প্রচারণায় বাধা দেয়া, নেতাকর্মীদের ওপর হামলাসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আজ বিকেল ৩টায় বৈঠক করবেন বলে জানান এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের উত্তরের সভাপতি ফকরুল ইসলাম রবিন, সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রিয়াজ প্রমুখ।