আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বড় হচ্ছে বিভেদ দেয়াল

আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বড় হচ্ছে বিভেদ দেয়াল 

আওয়ামী লীগের তৃণমূলে আরও বড় হচ্ছে বিভেদের দেয়াল। গেল সংসদ নির্বাচনে নেতাকর্মীর মধ্যে মনোমালিন্যের যে বাঁক বদল হয়েছিল, আসছে উপজেলার ভোটে তা আরও নতুন মাত্রা পাচ্ছে বলে আভাস মিলেছে। আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে যেসব এলাকায় কখনোই মনান্তর ছিল না, সেখানকার নেতাকর্মীরাও হয়ে উঠছেন পরস্পরের চক্ষুশূল। কোনো কোনো এলাকায় দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) এবং স্বতন্ত্র এমপিরা নিজেদের একক কর্তৃত্ব ধরে রাখতে বিরোধের আগুনে ঘি ঢালছেন। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিত গত সংসদের এমপিরা। তারাও দলের ভেতরে নিজেদের বলয় তৈরির কৌশল খুঁজছেন। কোথাও জম্পেশ চলছে ‘দলীয় এমপি বনাম স্বতন্ত্র এমপি’ লড়াই। যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে হেরেছেন, তারাও আছেন গ্রুপিং রাজনীতির অশুভ প্রতিযোগিতায়।

আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, বিএনপির ভোট বর্জনের পটভূমিতে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে গত জাতীয় নির্বাচনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উৎসাহ দেওয়ার পর বিবাদে জড়ান স্থানীয় নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের পর বেশির ভাগ স্বতন্ত্র এমপি দলে ‘চালকের আসনে’ বসতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এতে করে তাদের সঙ্গে সাবেক এমপিদের লাগছে ঠোকাঠুকি। এ পটভূমিতে দলের দুটি ধারা চলে এসেছে সর্বসমক্ষে।

সাধারণত সংসদের ভোট এলে দলীয় বিরোধ মেটে। এবার হয়েছে উল্টোটা। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় পরিষ্কার দুই বলয়ে, দুই পথে হেঁটেছেন নেতাকর্মীরা। কোনো কোনো এলাকায় ছাইচাপা পুরোনো দ্বন্দ্বও সামনে চলে আসে। বিভিন্ন স্থানে এ বিরোধের অবসান হয় রক্তারক্তি আর খুনাখুনির মতো নির্মমতায়। বিচ্ছিন্ন সংঘাত, হামলা, মামলা-পাল্টা মামলা এখনও চলছে। এ নিয়ে অস্থির, অশান্ত হয়ে আছেন দলের নেতাকর্মীরা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, নতুন করে কত যে গ্রুপ তৈরি হচ্ছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যেসব এলাকায় কখনোই বিরোধ ছিল না, সেসব এলাকায়ও গ্রুপিংয়ের রাজনীতি শুরু হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মতো দলের নেতাকর্মীকে ঘায়েল করা হচ্ছে।

দ্বন্দ্ব-বিবাদের বিষয়টিকে দুঃখজনক হিসেবে দেখছেন সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কোনোভাবেই দলীয় গ্রুপিং মেনে নেওয়া যায় না। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, দলের ভেতরে ভুল বোঝাবুঝি ও হাঙ্গামা বাড়ছেই। সংঘাত তৈরি হচ্ছে। এটা কমছে না। রাজশাহীর মেয়র ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ঈদের পর তৃণমূলের সম্মেলন শুরু হবে। আর এর মধ্য দিয়ে নেতাদের মধ্যে দূরত্ব কমে আসবে।

এদিকে গৃহদাহ নিরসনে তৃণমূল নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চাচ্ছেন। এজন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও শুরু করেছেন। জানা গেছে, বিভেদের দেয়াল ভেঙে দলকে সুসংগঠিত ও গতিশীল করতে সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন করার প্রস্তুতি রয়েছে। ঈদের পর এ উদ্যোগ শুরু হতে পারে। পাশাপাশি দেশজুড়ে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ানোরও চিন্তা চলছে।

ঢাকা বিভাগ

কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর আওয়ামী লীগ বহুধা ধারায় বিভক্ত। ডা. সৈয়দা জাকিয়া নুর লিপি এমপির সঙ্গে বিরোধ কমছে না তাঁর ভাই মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলামের। তিনি সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন।

মুন্সীগঞ্জ সদর ও গজারিয়ার পরিবেশ অশান্ত হয়ে আছে। এজন্য নেতাকর্মীর বড় একটি অংশ স্বতন্ত্র এমপি ফয়সাল আহমেদ বিপ্লবকে দুষছেন। এখানে সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মৃনাল কান্তি দাসের সমর্থক নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে আছেন।

নেতাকর্মীর মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে ঢাকা-৪ আসনে। স্বতন্ত্র এমপি ড. আওলাদ হোসেন ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সানজিদা খানমের নেতৃত্বে সক্রিয় রয়েছে দুটি গ্রুপ। ঢাকা-৫ আসনেও একই হাল। স্বতন্ত্র এমপি মশিউর রহমান মোল্লা সজলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে দলের যাত্রাবাড়ী শাখার সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্না ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের।

ঢাকা-১৪ আসনের এমপি মাইনুল হোসেন খান নিখিলও স্বস্তিতে নেই। এখানে ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিনের আলাদা বলয় রয়েছে। তিনিও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। ঢাকা-১৮ আসনের স্বতন্ত্র এমপি এবং দলের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক খসরু চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি অংশ সক্রিয় থাকলেও তাদের ছাড় দিচ্ছেন না আসনটির সাবেক এমপি হাবিব হাসান।

ঢাকার সাভারে দলীয় রাজনীতি তিন টুকরো হয়ে আছে। আসনটির এমপি আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। তিনি দলীয় প্রার্থী ও সাবেক এমপি ডা. এনামুর রহমান এনাম এবং আরেক সাবেক এমপি তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং মুরাদকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছেন। তবে নির্বাচনের পর সেই চমক আর থাকেনি। এখন তিন নেতার নেতৃত্বে ত্রিমুখী অবস্থানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

ধামরাইয়েও একই ছবি। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ এমপির সঙ্গে দূরত্ব কমছে না সংসদ নির্বাচনে তাঁর দুই স্বতন্ত্র প্রতিপক্ষ সাবেক এমপি আবদুল মালেক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাদ্দেস হোসেনের। ফলে দলে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়ায় এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে।

গাজীপুর সদর ও শ্রীপুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে আছেন। এ ক্ষেত্রে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি ইকবাল হোসেন সবুজের পাল্লা বেশ ভারী হলেও খুব একটা পিছিয়ে নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসি। এই দুই নেতা গত নির্বাচনে পরস্পরের প্রতিপক্ষ ছিলেন। সবুজ ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। কালীগঞ্জে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি মেহের আফরোজ চুমকির দীর্ঘদিন একচ্ছত্র প্রাধান্য থাকলেও সংসদ নির্বাচনের পর তা ফিকে হয়ে আসছে। দলের মনোনয়ন পেলেও জয় পাননি তিনি। স্বতন্ত্র প্রার্থী ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক এমপি আখতারউজ্জামান চুমকিকে হারিয়ে এখন এলাকায় আলাদা বলয় গড়ে তুলছেন।

নরসিংদী সদরের রাজনীতিতে রদবদল আসেনি। তবে বিরোধ আরও বেড়েছে। গত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হিরু বীরপ্রতীক জয়ী হন। হারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল। এ দুই নেতাকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে আছেন। মনোহরদী-বেলাবতে নির্বাচনের পর রাজনীতির অনেকটাই বাঁক বদল হয়েছে। দলের অনেকেই নির্বাচনে শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ হুমায়ূনের বিরুদ্ধে গাঁটছড়া বাঁধলেও এখন সেই প্রেক্ষাপট নেই। এখন সবাই মুখে কুলুপ দিলেও মনোহরদীর সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরুকে ঘিরে যে কোনো মুহূর্তে ক্ষোভ দানা বাঁধতে পারে।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও চরভদ্রাসনে দলের চিনাচেনা বিরোধ এক চুলও কমেনি। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের রেষারেষি একই দূরত্বে আছে। নিক্সন গত নির্বাচনেও কাজী জাফরকে হারিয়েছেন।

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে গৃহদাহ না থাকলেও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাবির মিয়াকে ঘিরে দলের ভেতরে আলাদা বলয় তৈরি হচ্ছে। গত নির্বাচনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপির বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন কাবির মিয়া।

মাদারীপুর সদর ও কালকিনির রাজনীতি স্পষ্ট দুই ধারা। সাবেক এমপি ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ গত নির্বাচনে হারার পর বর্তমান এমপি তাহমিনা বেগমকে ঘিরে নতুন বলয় তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগ

কুমিল্লা-২ আসনের সাবেক এমপি সেলিমা আহমাদ মেরীর সঙ্গে স্বতন্ত্র এমপি অধ্যক্ষ আবদুল মজিদের বনিবনা নেই। ফলে হোমনা-মেঘনার নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত। নির্বাচনের পর থেকে মেরী ও তাঁর অনুসারীরা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না। মেরীর অভিযোগ, কয়েকটি গ্রামে নতুন এমপির অনুসারীরা হামলা ও নেতাকর্মীকে মারধর করেছে। হোমনায় নতুন এমপির অনুসারীদের চাঁদা দেওয়া ছাড়া কোনো কাজ হচ্ছে না। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ বলেন, নির্বাচনের পর বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও এখন সব শান্ত। চাঁদাবাজিও হচ্ছে না।

স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সরকার কুমিল্লা-৩ আসনে জয় পাওয়ার পর থেকে সাবেক এমপি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে। দেবিদ্বারের স্বতন্ত্র এমপি আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে মিলমিশ নেই সাবেক এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের। এই দুই নেতার বিরোধ ঘিরে সংসদ নির্বাচনের পর অন্তত ২০ থেকে ২৫ গ্রামের নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও মামলার ঘটনা ঘটেছে। দেবিদ্বার থানার ওসি নয়ন মিয়া বলেন, দুই গ্রুপের হামলার ঘটনায় বর্তমান এমপির অনুসারীদের পক্ষে পাঁচটি এবং সাবেক এমপির অনুসারীদের পক্ষে তিনটি মামলা হয়েছে। এদিকে নানা অভিযোগে এরই মধ্যে আবুল কালাম আজাদ এমপিকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

কুমিল্লা-৬ আসনের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি আনজুম সুলতানা সীমার মধ্যে শীতল সম্পর্ক থাকায় নেতাকর্মীরা স্বস্তিতে নেই। সিটি নির্বাচনে সীমার অনুসারীরা এমপি বাহারের মেয়ে তাহসিন বাহার সূচনার পক্ষে মাঠে নামেনি। দুই গ্রুপ দলীয় কর্মসূচি পালন করছে আলাদাভাবে।

একই পরিস্থিতি চান্দিনাতেও। ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে সক্রিয় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু। তিনি বলেন, এখন ত্যাগী নেতাদের ঠাঁই নেই দলে। এমপি ঘোরেন হাইব্রিডদের নিয়ে। তবে প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, আমি দলীয় কোন্দলে বিশ্বাসী নই। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তিতে মেজর জেনারেল (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এমপির সঙ্গে দলের হাজীগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গাজী মাঈনুদ্দিনের মতের মিল নেই। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এমপি মামুনুর রশীদ কিরনের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনহাজ আহমেদ জাবেদের। জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন সংসদের ভোটের স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন।

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে কোন্দলের চিত্রনাট্যও একই। আনোয়ার হোসেন খান এমপির সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবনের। এ ছাড়া রায়পুরে অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি কাজী সেলিনা ইসলাম, সদরে গোলাম ফারুক এমপির সঙ্গে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সাত্তারের রয়েছে মনোমালিন্য। নির্বাচনে তারা ছিলেন পরস্পরের প্রতিপক্ষ।

চট্টগ্রামের পটিয়ায় প্রথমবারের মতো এমপি হয়েছেন মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক এমপি সামশুল হক চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর সখ্য নেই। দলের সাতকানিয়া শাখার সভাপতি আবদুল মোতালেব সংসদের ভোটে সাবেক এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে হারান। নদভী নির্বাচনের পর থেকে মাঠে না থাকলেও দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে অন্তত ১০টি হামলা, ভাঙচুর ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। একই দশা বাঁশখালীতেও। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে দূরত্ব কমছে না মুজিবুর রহমান এমপির।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফেও গৃহদাহে পুড়ছেন নেতাকর্মীরা। এমপি শাহীন আক্তার চৌধুরীর সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে টেকনাফ আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশরের। গত সংসদ নির্বাচনে পরস্পরের প্রতিপক্ষ ছিলেন তারা।

রাজশাহী বিভাগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল এমপির সঙ্গে শিবগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামের বনিবনা নেই। গত নির্বাচনে দু’জন প্রতিপক্ষ ছিলেন। স্বস্তি নেই গোমস্তাপুর, নাচোল, ভোলাহাটেও। এখানকার এমপি ও দলের জেলা শাখার সভাপতি জিয়াউর রহমান আর গোমস্তাপুর উপজেলা শাখার সভাপতি গোলাম মোস্তফার মধ্যে নেই ঐকমত্য। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে মোস্তফার পরাজয়ের পর এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয় পেলেও স্বস্তিতে নেই নওগাঁ-৩ আসনের এমপি সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী। সাবেক এই আমলার সঙ্গে সাবেক এমপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিমের দূরত্ব এখন যোজন যোজন। সৌরেন্দ্রের মতো এস এম ব্রুহানী সুলতান মাহমুদ গামা প্রথমবার নির্বাচনে এসে বাজিমাত করলেও মান্দার নেতাকর্মীরা সুখে নেই। স্বতন্ত্র এই এমপির সঙ্গে দলের নেতাকর্মীর মতবিরোধ কমছে না। নওগাঁ-৫ আসনের এমপি ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জনের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষার দূরত্ব না কমায় অভ্যন্তরীণ বিবাদ মিটছে না।

রাজশাহী আওয়ামী লীগের গৃহদাহ নতুন বাঁক নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রাজশাহী-৪ আসনে এবারই প্রথম এমপি হয়েছেন অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। তবে নির্বাচনী প্রতিপক্ষ সাবেক এমপি প্রকৌশলী এনামুল হকের সঙ্গে তাঁর বনিবনা নেই।

নাটোরের লালপুর ও বাগাতিপাড়ার নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে আছেন শহিদুল ইসলাম বকুল এমপি এবং সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের বলয়ে। গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রামেও অভিন্ন ছবি। সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী এমপি, সাবেক এমপি আবদুল কুদ্দুস ও গুরুদাসপুর পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে বিভক্ত হয়ে আছেন নেতাকর্মীরা।

খুলনা বিভাগ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের নেতাকর্মীরা আছেন বেশ অস্বস্তিতে। স্বতন্ত্র এমপি রেজাউল হক চৌধুরী ও সাবেক এমপি আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশার মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়া-৪ সংসদীয় এলাকা। ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ দলীয় মনোনয়ন পেলেও আবদুর রউফ চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয় পান। এর পর খোকসা ও কুমারখালীতে জর্জ অনুগতদের ওপর হামলা-মামলার খড়্গ বেড়েছে। তিন মাসে দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ ব্যাপারে দলের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, কয়েকটি উপজেলায় সমস্যা বেড়েছে। তবে বিরোধ থেকে যেন কোনো রক্তপাত না হয়, সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থান আছে দলের।

ঝিনাইদহের কোর্টচাদপুর এবং মহেশপুরেও একই চিত্র। সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শফিকুল আজম খান চঞ্চলের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে প্রথমবার নির্বাচিত এমপি সালাহ উদ্দিন মিয়াজীর। কাজী নাবিল আহমেদ এমপি ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথের মধ্যে বনিবনা না থাকায় যশোর সদরে দলীয় রাজনীতি সংকটে পড়েছে। দলের অভয়নগর শাখার সভাপতি এনামুল হক বাবুল এমপি ও বাঘারপাড়ার সভাপতি সাবেক এমপি রণজিৎ রায়কে ঘিরে নেতাকর্মীরা ভাগ হয়ে আছেন।

খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়ার নেতাকর্মীরাও আছেন বিপাকে। ডুমুরিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপির সঙ্গে ফুলতলা শাখার সভাপতি শেখ আকরাম হোসেনের মতের মিল না থাকায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। ঘরোয়া দ্বন্দ্বে বিধ্বস্ত রূপসা আওয়ামী লীগও। দলের উপজেলা শাখার সভাপতি কামাল উদ্দিন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক সরদার আবুল কাশেম ডাবলুর সমর্থক নেতাকর্মীরা সুযোগ পেলেই প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের চেষ্টা করছেন। এ জন্য কামালকে দুষছেন ডাবলু। দলের সাতক্ষীরা কলারোয়া শাখার সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন এমপি এবং তালা শাখার সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম পরস্পরের প্রতিপক্ষ। তাই সেখানেও শান্তি নেই।

বরিশাল বিভাগ

স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার টুকু এমপি বরগুনা-১ আসনে জয় পেলেও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলয়ের নেতাকর্মীরা তাঁকে মেনে নিতে পারছেন না। ফলে ফ্যাসাদ বাড়ছে। বামনা, পাথরঘাটা ও বেতাগীতে তিনটি গ্রুপ দাঁড়িয়ে গেছে। সুলতানা নাদিরা এমপি, সাবেক এমপি শওকত হাসানুর রহমান রিমন ও সুভাষ চন্দ্র হালদারকে ঘিরে গ্রুপগুলো সক্রিয়। জাতীয় নির্বাচনের পর পাথরঘাটায় অন্তত অর্ধশত হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। দলীয় বিরোধে খুনাখুনির জন্য ‘আলোচিত’ পটুয়াখালীর বাউফল। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজ এমপির বিরুদ্ধে একাট্টা আব্দুল মোতালেব হাওলাদার ও জিয়াউল হক জুয়েলের সমর্থকরা। তাদের বিরোধের জেরে এ পর্যন্ত ছয় নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন।

বর্তমান এমপি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিব্বুর রহমান মহিব এবং সাবেক এমপি মাহবুবুর রহমান তালুকদারকে ঘিরে কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীতে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। সংসদ নির্বাচনের পর মাহবুবের অনুসারীদের ওপর হামলা ও নানাভাবে তাদের কোণঠাসা করার অভিযোগ রয়েছে প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে। পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও নেছারাবাদে গৃহদাহ কমছে না। সাবেক এমপি এ কে এম এ আবদুল আউয়াল স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম এমপির কাছে হারলেও তাঁর সমর্থকদের বিরুদ্ধে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ভাগনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ভাই সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের নেতৃত্বে বরিশাল আওয়ামী লীগে নতুন বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে। একই নগরে রাজনীতি করেও চাচা-ভাতিজা মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ। প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সঙ্গেও কথাবার্তা হয় না সাদিক আবদুল্লাহর।

প্রায় চার দশক বরিশালে একক আধিপত্য বিস্তারকারী হাসানাতপন্থিরা প্রথম প্রকাশ্যে বিরোধিতার মুখে পড়েন ২০১৬ সালে হিজলায়। সেই থেকে স্থানীয় এমপি পঙ্কজ দেবনাথ ও হাসানাতপন্থিদের বিরোধের জেরে খুন হন ১২ জন। সর্বশেষ পঙ্কজ সমর্থক জামাল মাঝি হত্যা মামলার আসামি ধুলখোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জামাল ঢালীসহ ৪৯ জনের সবাই হাসানাতপন্থি। এখন বিরোধ পঙ্কজ ও দলের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদের মধ্যে দৃশ্যমান হলেও এর নেপথ্যে রয়েছেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি।

সংসদ নির্বাচনের পর বাকেরগঞ্জে বিরোধ প্রকাশ্যে না হলেও কোণঠাসা হয়েছেন হাসানাতপন্থিরা। নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হারেন উপজেলা শাখার সভাপতি শামসুল আলম চুন্নু। তাঁর পক্ষে ছিলেন হাসানাতপন্থিরা।

ময়মনসিংহ বিভাগ

শেরপুর সদরে আওয়ামী লীগ দুই ধারায় বিভক্ত। এক প্রান্তে আছেন সাবেক এমপি আতিউর রহমান আতিক, আরেক প্রান্তে স্বতন্ত্র এমপি ছানুয়ার হোসেন ছানু। তবে সবচেয়ে বেশি বিরোধের আগুন ময়মনসিংহ সদরে। এখানে মোহিত উর রহমান শান্তর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হারেন আমিনুল হক শামীম। সেই নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট বিরোধ সিটি নির্বাচনেও গড়ায়। ফলে দূরত্ব বাড়ে মেয়র ইকরামুল হক টিটু ও মোহিত উর রহমান শান্ত এমপির মধ্যে। দু’জন একসঙ্গে দলীয় কার্যক্রমেও নেই, মুখ দেখাদেখিও বন্ধ।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিনের শক্ত ভীত থাকলেও তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন বর্তমান এমপি আব্দুল মালেক সরকার।

সাবেক এমপি হাফেজ রুহুল আমীন মাদানীর পরাজয়ে ত্রিশালের রাজনীতিতে মেরূকরণ হয়েছে। গত ৯ মার্চ পৌরসভার উপনির্বাচন উপলক্ষে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া নিয়ে এক ছাত্রকে এবিএম আনিছুজ্জামান এমপির বাসায় নিয়ে মারধরের পর পুলিশে দেওয়া হয়েছে। পরে এ নিয়ে সাবেক ও বর্তমান এমপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে।

ভালুকায় স্বতন্ত্র এমপি আব্দুল ওয়াহেদ ও সাবেক এমপি কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনুর সমর্থকদের বনিবনা নেই। নেত্রকোনার আটপাড়া ও কেন্দুয়ায় দলে দুই ধারা। তাদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। স্বতন্ত্র এমপি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। এখানে সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিলের সমর্থক নেতাকর্মীরা অনেকটাই কোণঠাসা।

সিলেট বিভাগ

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জে দুই বলয়। একাংশ রনজিত চন্দ্র সরকার এমপির সঙ্গে থাকলেও অন্যরা সাবেক এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের পাশে। ছাতক ও দোয়ারাবাজারের এমপি মহিবুর রহমান মানিকের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমদে চৌধুরী। দু’জনই গত নির্বাচনে একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়েন। নির্বাচনের পর দোয়ারাবাজারে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে দুই নেতার সমর্থকদের সংঘর্ষ থামিয়েছে পুলিশ।

হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জের সাবেক এমপি আবদুল মজিদ খান নির্বাচনে হারলেও তাঁর সমর্থকরা এখনও অ্যাডভোকেট ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল এমপিকে মেনে নিতে পারছেন না। মৌলভীবাজার-৩ আসনে জয় পেলেও দলের প্রার্থী জিল্লুর রহমান এমপিকে মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ। বড় কোন্দলের দাগ রয়েছে সিলেট আওয়ামী লীগেও। গত ২ মার্চ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দুই গ্রুপের মধ্যে ভাঙচুর হয়েছে। ১৫ মার্চ জিন্দাবাজারে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিরোধের জেরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, যানবাহন ভাঙচুর এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

রংপুর বিভাগ

পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটের মধ্যে খুব একটা সখ্য নেই। সম্রাট গত নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে সম্রাটের। দিনাজপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয় পাওয়ার পর থেকে সাবেক এমপি মনোরঞ্জন শীল গোপালের সঙ্গে বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছে পীরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকার।

রংপুরের মিঠাপুকুরেও একই হাল। স্বতন্ত্র এমপি জাকির হোসেন সরকারের সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে দলের উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেক রহমানের। রাশেক গত নির্বাচনে দলের প্রার্থী ছিলেন। এই দুই নেতাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে আলাদা বলয়। তবে দলের স্বার্থে দ্বন্দ্ব নিরসন দরকার বলে মনে করেন জাকির হোসেন সরকার।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি কিছুটা নড়বড়ে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এমপির সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে সাবেক এমপি মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর। একই ছবি ফুলছড়ি-সাঘাটাতেও। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন এমপির সঙ্গে ফুলছড়ি শাখার সাধারণ সম্পাদক ফারজানা রাব্বী বুবলির দূরত্ব কমছেই না। গত নির্বাচনে রিপনের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারেননি স্বতন্ত্র প্রার্থী বুবলি।

সমকাল