আওয়ামী লীগকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস : ১০ বছরের সাজা খাটছে কিশোর

mzamin
whatsapp sharing button

‘আওয়ামী লীগ’ শব্দ নিয়ে ‘তিরিশ বছরের পরের গল্প শিরোনামে’ বাবা-ছেলের কথোপকথনের কৌতুক ফেসবুকে পোস্ট করার অভিযোগ করেন দলটির এক স্থানীয় নেতা। ২০১৭ সালের ২৭শে মে। তখন আব্দুল মুকিত রাজু ১৭ বছর বয়সের কিশোর। এ অভিযোগের পরদিন আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় রাজশাহীর পবা থানায় মামলা হয়। এ মামলায় ২০২২ সালের ২৪শে জানুয়ারি তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. জিয়াউর রহমান। স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সাইদুর রহমান বাদল আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় ২০১৭ সালের ২৮মে রাজশাহীর পবা থানায় মুকিতের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিলেন। বাদীর অভিযোগ ছিল, আসামি নিজের ফেসবুক আইডির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ব্যঙ্গ করেছেন। মামলা হওয়ার পর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান মুকিত। পরে জামিনে মুক্ত হন। তবে ২০২২ সালে রায় হওয়ার পর থেকে এখনো তিনি কারাগারে আছেন।

মুকিত কোরআনের হাফেজ। জেলে অবস্থানকালে সেখান থেকে ফাজিল (স্নাতক) ও কামিল (স্নাতকোত্তর) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছেন। গত ৩রা অক্টোবর তার কামিল পরীক্ষার ফল বের হয়েছে। তিনি জিপিএ-৩.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। মুকিত রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর গ্রামের মো. রিয়াজুল ইসলামের ছেলে। তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
তার আইনজীবী এডভোকেট হাসানুল বান্না সোহাগ জানান, ফেসবুকে আওয়ামী লীগ নিয়ে একটি গল্প লেখা স্ক্রিনশটের অভিযোগে তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। হাইকোর্ট জামিন দিলেও চেম্বার আদালত তা স্থগিত করে। যা নজিরবিহীন। হাফেজ মুকিত একজন ফ্যাসিবাদ পতনের স্বপ্নদ্রষ্টা। ফ্যাসিবাদের পতনের পরও কেনো তাকে কারাগারে থাকতে হবে। তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে।

মুকিতের দিনমজুর বাবা আক্ষেপ করে বলেন, আওয়ামী লীগের পতনের পরে অনেকের মুক্তি হলেও আমার ছেলের মুক্তি হচ্ছে না।
মুকিতের আরেক আইনজীবী এডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘মুকিতের ১০ বছরের সাজা হওয়ার পর এটি নিয়ে ওই সময় ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। এই রায়ের বিপক্ষে উচ্চ আদালতে আপিল করলে ২০২৩ সালের ১২ই জানুয়ারি তিনি জামিনও পান। কিন্তু ওই বছরের ২০শে জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন মামলা স্টে করে দেন। চলতি বছরের ৩ই জানুয়ারি আপিল বিভাগ সেই স্টে বহাল রাখেন এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে বলেন। কিন্তু পরে আপিল নিষ্পত্তি না করেই গত ২রা সেপ্টেম্বর ফের তার জামিন দেয়া হয়। তবে আপিল বিভাগ ফের তার সেই জামিন বাতিল করেন। ফলে এখনো তিনি কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
তার মা আশরাফুন্নেছা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের মিথ্যা মামলায় ছেলের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। ফ্যাসিবাদী সরকার পালিয়েছে। তবে আমার ছেলে এখনো জেলে। মিথ্যা মামলা থেকে আমার ছেলে যেন দ্রুত মুক্তি পায়, তার জন্য এই সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি সিফাত আলম বলেন, তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যখন মামলা দেয়া হয় তখন এইচএসসি পরীক্ষার্থী তার বয়স বিবেচনায় মামলা শিশুকোর্টের হলেও তাকে সাইবার ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয়। মামলার সাক্ষ্য প্রমাণে গুরুত্ব না দিয়ে সরকারকে খুশি করতে এ রায় দেয়া হয়।

manabzamin