৫ ডিসেম্বর ২০২২
নিজস্ব প্রতিনিধি
আগামী ১০ই ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ বানচাল করতে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ নিষ্ঠুরতার সাথে দমন-পীড়ন শুরু করেছে আওয়ামী পুলিশ। দেশব্যাপী অভিযান চালিয়ে মাত্র এক দিনে (৪ ডিসেম্বর) ৩৫৮টি সাজানো মামলায় ১৩৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বিএনপির নেতা-কর্মী।
দেশব্যাপী বিভাগীয় শহর গুলোতে বিএনপি’র সমাবেশে মানুষের ঢল দেখে বিচলিত ফ্যাসিবাদী সরকার। তাই ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশে যাতে গণঅভ্যূত্থানে রূপ না নিতে পারে সেই লক্ষ্যে পুলিশকে আগাম মাঠে নামানো হয়েছে। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী পুলিশ যে কোনও মূল্যে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ব্যর্থ করার জন্য অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে তারা বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাঁটাতারের বেড়ার সীমানার পিছনে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে আওয়ামী পুলিশ। যদিও বিএনপি নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে অনড় রয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তাদের দলের ১০৩১ জন নেতা-কর্মী রয়েছেন। এছাড়া বিএনপির নেতা ও কর্মীদের দমন করতে তাঁদের বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজনদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে।
দমনের অংশ হিসেবে বিএনপির তরুণ জনপ্রিয় নেতা ইশরাক হোসেনকে লোহার লাঠি ও ইট দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তরুণ এই প্রকৌশলীর ওপর ভয়াবহ কায়দায় আক্রমণ করেছে। মূলত, এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ছাড়ানো এবং আসন্ন সমাবেশে যারা যোগ দেবেন তাদের পরিণতিও এমন হতে পারে এমন বার্তা দেয়ার উদ্দেশ্যেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নামানো হয়েছে। ন্যাক্কারজনক এই ঘটনায় আওয়ামী পুলিশ হামলাকারীদের দেখেনি। বরং উল্টো ইশরাকের অনুগত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়া, গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উল্টো এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে বিএনপির ৭৫ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। যদিও বাংলাদেশের জনগণের কাছে এটা স্পষ্ট যে, বিএনপির মহাসমাবেশ বানচালের জন্যই আওয়ামী ফ্যাসিবাদেও অনুগত রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে বিএনপিকে ফাঁসানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
একদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে, অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য একটি মানববন্ধনে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। সেই হামলায় আহত হয়েছেন দুইজন সাংবাদিক ও বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী।
রাজধানীর পাশাপাশি এর আশপাশের জেলাতেও সাজানো ও মিথ্যা মামলায় পহেলা ডিসেম্বর থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় শুরু করেছে পুলিশ। কিশোরগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত এলাকা কুলিয়ারচরে একটি ভুয়া মামলায় বিএনপির ২০ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
এছাড়া, মুন্সীগঞ্জে বিএনপি সমর্থকদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ভাঙচুর চালানোর পর ১৩ জন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
যশোরে গত দুই দিনে বিএনপির ৯১ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাত কয়েক শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। বানোয়াট এই মামলায় স্থানীয় জামাতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা-কর্মীকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলাগুলো এতটাই কাল্পনিক ছিল যে, একটি মামলার প্রধান সাক্ষী কেশবপুর উপজেলা থেকে আসা নিরাপত্তা প্রহরী ওমর গণমাধ্যমকে বলেছেন, পুলিশের হাবিলদার রেজাউল তাকে এই বলে হুমকি দিয়েছেন যে তিনি যদি চাকরিটি চালিয়ে যেতে চান তাহলে তাকে পুলিশের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে এবং বিএনপির কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে হবে।
উপরে উল্লিখিত ঘটনাগুলি বিএনপির সমাবেশের আগে মিথ্যা অভিযোগের মধ্যে মাত্র কয়েকটি। মামলাগুলোতে যেসব অজ্ঞাত আসামি রাখা হয়েছে সেই শূন্যস্থান বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে পূরণ করার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে পুলিশ।
আওয়ামী পুলিশ সহিষ্ণুতার সব সীমা অতিক্রম করেছে এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলকে বারবার উসকানি দিচ্ছে। পুলিশ এতোটা উন্মত্ত হয়ে উঠেছে যে বিএনপিকে দমন করতে সব ধরণের বর্বরতা তারা করতে প্রস্তুত।
জানা গেছে, বিএনপির মধ্যম ও জুনিয়র পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের গণ গ্রেপ্তারের ঘটনা দলের মধ্যে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। বিএনপির বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে গত আগস্ট মাস থেকে এ পর্যন্ত ১৬৯টি কাল্পনিক মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখানে ৬,২৭৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ১৫,০০০ অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকেও বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের উপরোক্ত পরিসংখ্যানগুলি তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শকের নজরে আনা হয়েছিল। কিন্তু, এসব উপেক্ষা করেই বিএনপির মহাসমাবেশ বানচাল করতে পহেলা ডিসেম্বর থেকে গণ গ্রেফতার, দমন-পীড়ন, ককটেল বিস্ফোরণ ও মিথ্যা মামলা করে যাচ্ছে পুলিশ।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবরের মধ্যে পুলিশ বিএনপির ৮৫ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪১২৬টি মামলা দায়ের করেছে এবং আরও তিন লাখ অজ্ঞাত ব্যক্তির নাম রয়েছে। বিশাল এই পরিসংখ্যান একটি সূক্ষ্ম কিন্তু হাড় হিম করা বার্তা বহন করে। কারণ এর মাধ্যমে আওয়ামী পুলিশ বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়।
পুলিশের এমন নির্মমতায় বিএনপির প্রতি জনগণের সমর্থন দিন দিন বেড়ে চলেছে। সারা দেশে বিএনপির মহাসমাবেশগুলোতে সর্বস্তরের মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে দলটি আগের চেয়ে আরো সংগঠিত ও শক্তিশালী হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল যে বিএনপির দেশব্যাপী আন্দোলন একটি একক কর্মসূচি ছিল। তবে সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত প্রথম বিভাগীয় সমাবেশের পর থেকে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।