আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিলম্ব ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ সোমবার এসব কথা জানিয়ে তারা।
গণমাধ্যমে বিবৃতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পুনর্গঠনের দায়িত্বে আছে। তবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এই সরকার থাকার পরও আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিলম্ব হচ্ছে, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সরকারকে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অভাব দেখা যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন মাজারে একশ্রেণির উগ্রবাদী মানুষ হামলা করছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও পীর-ফকিরদের সংগ্রাম বাংলার মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। এখন একশ্রেণির উগ্রপন্থী সাধারণ মানুষের ধর্মীয় পুঁজিকে সহায় করে মাজারে আঘাত হানছে। এই অতি উৎসাহী জনতাকে অতিদ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, বাংলাদেশ যেমন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর সংখ্যালঘুদের জন্য আবাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে, শান্তিপূর্ণ করে তুলতে হবে, তেমনি এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম ইসলামের মধ্যে যে সংখ্যালঘু মুসলিম কমিউনিটিগুলো আছে, তাদেরও এই সরকারকেই সুরক্ষা দিতে হবে। অন্যথায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠায় এই সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, একশ্রেণির মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিলম্বের সুযোগ নিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে হয়রানি, বিভ্রান্ত করছে; ক্ষেত্রবিশেষে হেনস্তা করছে। স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের পতনের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা এই সরকারের কাছে প্রত্যাশা, দেশের কাঠামোগত পরিবর্তন আনা, আইনের সুশাসন আনা এবং বিচার ব্যবস্থায় সবার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, দেশে গত পনেরো বছরে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসন সব ধরনের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ যেভাবে ‘মোরাল পুলিশিংয়ের’ মাধ্যমে দেশের আইন-বিচার ব্যবস্থাকে মগের মুল্লুক বানিয়েছিল, সেই নিপীড়নের–জুলুমের বাংলাদেশে কেউ ফিরে যেতে চায় না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার যেন জনগণের সরকার হয়ে উঠতে পারে। এই সরকার যেন রাষ্ট্রে ন্যায়বিচারের একটি সর্বজনীন এবং মৌলিক কাঠামো প্রণয়ন করতে পারে। যার মাধ্যমে আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নেবে না এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করতে সক্ষম হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, দ্রুত দেশে আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং একটি গণতান্ত্রিক, সাম্য ও মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে তুলে ধরতে হবে। তবেই জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্ত এবং আত্মত্যাগ প্রকৃত মর্যাদা পাবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে এই বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার।
samakal