আইনজীবীর হত্যাকারী ‘বঙ্গবন্ধু সৈনিক’ শুভ কান্তি দাস কে?

‘যে ব্যক্তি রামের না, সে বক্তি কোনো কাজের না। জয় শ্রীরাম’ ফেসবুক আইডিতে ঢুকতেই ‘বায়ো’তে এই লেখা দেখে চোখ আটকে যায়। আবার নিকনেমে (ডাকনাম) লেখা ‘বঙ্গবন্ধু সৈনিক’। ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর লিখেছে, ‘হনুমানের লেজে আগুন দিতে নেই। জয় শ্রীরাম।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় এভাবে উসকানি ও হুমকি দিয়ে আইনজীবী হত্যায় সশস্ত্র অংশ নেয়া কে এই শুভ কান্তি দাস?

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে জবাই করে খুনে অংশ নেয়া শুভ কান্তি দাসের বাড়ি পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের আলামপুর পূর্ব পাড়া কালীবাড়ি এলাকায়। বর্তমানে তার পরিবার চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার বাদুরতলা বড় গ্যারেজের মোড়ে তালেব ভবনের ৪র্থ তলায় বাস করেন। বাবার নাম সাগর কান্তি দাস, পেশায় ব্যবসায়ী।

শুভ কান্তি দাস চট্টগ্রাম নগরের কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি ও সরকারি সিটি কলেজ থেকে ২০২১ সালে এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ৩৬তম ব্যাচের ৪র্থ সেমিস্টারে (আইডি নাম্বার-২৩০৫৩৬০৩২) পড়ছে। বুধবার নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে বহিষ্কার করে। ডেপুটি রেজিস্ট্রার সালাউদ্দিন শাহরিয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অভিযুক্ত শুভ কান্তি দাস কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত কি না জানতে চাইলে আইন বিভাগের সিআর (ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ) তারেকুল ইসলাম ফাহিম বলেন, শুভ ও তার ফ্যামিলি ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত বলে জানি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার অ্যাক্টিভিটিস দেখেও সেটা অনুমান করা যায়। সে নিয়মিত ক্লাসে না আসায় আমাদের সাথে তার সখ্য নেই। ফলে তার বিষয়ে বিস্তারিত জানি না।

এদিকে সরকারি কৌঁসুলি সাইফুল ইসলাম আলিফ খুনে জড়িত সাতজনকে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই আইনজীবীকে ১০-১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল আক্রমণ চালিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তাদের মধ্যে সনাতন জাগরণ মঞ্চের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারী, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী, ইসকন সমর্থক আইনজীবী ও ক্লার্কও রয়েছেন।

একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ২৬ নভেম্বর বিকেলে সাইফুল ইসলাম আলিফসহ আরো ১০-১২ জন আইনজীবীকে ধাওয়া দেয় সশস্ত্র দলটি। এ সময় সাইফুল পা পিছলে পড়ে গেলে তাকে ধারালো অস্ত্রধারী ১০-১৫ জন যুবক রঙ্গম কমিউনিটি সেন্টারের সামনে প্রথমে পিটায়। এরপর মাথা থেঁতলে দেয়া হয়। পরে আরেক দল কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

ভিডিও ও ছবি বিশ্লেষণ করে হত্যার সাথে জড়িত সাতজনের পরিচয় বের করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এর মধ্যে বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির এলএলবি পড়ুয়া ছাত্র শুভ কান্তি দাসকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ ছাড়া চট্টগ্রামের মেথরপট্টি এলাকার একজন, কোতোয়ালির হাজারীগলি এলাকার একজন, কোতোয়ালির জলসা মার্কেট এলাকার একজন এবং বন্দরের নিমতলা এলাকার একজনকে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের প্রত্যেকর পরিচয় শনাক্ত করেছে গোয়েন্দা সংস্থাটি। তাদের আসামি করে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।

এ ঘটনায় সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী মো: তারেক আজিজ বলেন, এখন পর্যন্ত ৩৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যা ও সংঘর্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

উল্লেখ্য, ইসকন সমর্থিত সন্ত্রাসীরা চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করলে হামলাকারীদের সাথে শ্রী শুভ কান্তি দাসের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

উৎসঃ   নয়া দিগন্ত