নিজস্ব প্রতিবেদক: চলমান ডলার সংকটের মধ্যে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমেছে। গতকাল এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দুই মাসের (জুলাই-আগস্ট) আমদানি বিল বাবদ ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। এতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত (নিট) রিজার্ভ কমে সাড়ে ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
যদিও আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে প্রকৃত রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার রাখার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ব্যর্থ হয়েছে। যদিও সেপ্টেম্বরের এখনও ২০ দিন সময় বাকি রয়েছে, তবে এর মধ্যে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নতি করার কোনো সম্ভাবনা নেই। এতে নভেম্বরে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ায় ঝুঁকি তৈরি হলো।
এর আগে জুনে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার থাকার কথা ছিল। তবে ওই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি ছিল বাংলাদেশের নেট রিজার্ভ।
সূত্রমতে, আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদর দপ্তর। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। তবে এখন আকুর সদস্যপদ নেই শ্রীলঙ্কার। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ আমদানি ব্যয় পরিশোধের বিভিন্ন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির আকু সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। জাতিসংঘের এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতি ও সামাজিক কমিশনের (এসক্যাপ) ভৌগোলিক সীমারেখায় অবস্থিত সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য আকুর সদস্যপদ উš§ুক্ত।
তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দিন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে মোট রিজার্ভ ছিল ২৭ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী বিপিএম-৬ অনুসরণে গতকাল প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকৃত রিজার্ভ হিসাব করতে ৬ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হয়।
গত জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন, জুলাইতে ছিল ২৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন, আগস্ট শেষে ২৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। দুই মাসে দেশের নিট রিজার্ভ ৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার কমেছে। বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে তিন মাসের মতো আমদানি ব্যয় মেটাতে পারবে বাংলাদেশ, যা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন প্রতি মাসে দেশের আমদানির পেছনে ছয় বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে যে রিজার্ভ রয়েছে, তা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ০২ বিলিয়ন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ৩০ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩.৬৭ বিলিয়ন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কমে ৩২.৯৪ বিলিয়ন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আরও কমে ৩২.৭১ বিলিয়ন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আবার বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ দশমিক ০৩ বিলিয়ন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে রিজার্ভ বেড়ে হয় ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
তবে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে রিজার্ভ কমতে শুরু করে। ওই অর্থবছর মোট রিজার্ভ কমে ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার নেমে আসে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক লাফে ১০ বিলিয়ন ডলার কমে ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এ সময় সরকারের ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি দায় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে। গত অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বেশি বিক্রি করে। তার আগের অর্থবছর সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে। আর চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে।
দেশে গত বছরের এপ্রিল থেকে ডলারের সংকট শুরু হয়। ফলে ডলারের দাম ৮৮ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে। তবে রিজার্ভ কমতে শুরু করলে সরকারের নানা উদ্যোগের পর তুলনামূলক আমদানি কমায় বর্তমানে ডলার সংকট কিছুটা কমেছে। ব্যাংকগুলো এখন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে প্রবাসী আয় কিনছে। একই দরে রপ্তানি আয় নগদায়নে দাম দিচ্ছে।