‘অভিজ্ঞতার মূল্য আলাদা, অভাব পূরণে সময় লাগবে’

তাসকিন আহমেদ

সাড়ে ১০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে টেস্ট ক্যারিয়ারও হয়ে গেছে প্রায় ৮ বছরের। অথচ তাসকিন আহমেদ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেললেন এবারের সিরিজেই, সেটাও তাদের মাটিতে। উপলক্ষটা তাঁর জন্য আরও বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবে; কারণ, অ্যান্টিগায় টেস্টে নিজের প্রথম ৫ উইকেটসহ ভালো বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে তাসকিন হয়েছেন সিরিজ সেরা। কাল সেন্ট কিটস থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ দলের এই পেসার কথা বলেছেন তাঁর এই অর্জন এবং আরও অনেক কিছু নিয়েই

প্রথম আলো:ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাংলাদেশ টেস্ট জিতল, সিরিজ ড্র করল। আপনি ম্যান অব দ্য সিরিজ হলেন। সব মিলিয়ে কেমন লাগছে?

তাসকিন আহমেদ: টেস্ট সিরিজটা ড্র করতে পেরেছি, এটা খুবই আনন্দের। ওদের হোম কন্ডিশনে ডিউক বলে খেলা আমাদের জন্য সহজ ছিল না। হয়ত আমরা একটা টেস্ট হেরেছি, কিন্তু সব মিলিয়ে অসাধারণ দলীয় প্রচেষ্টা ছিল।

প্রথম আলো:এর আগে টেস্টে কখনো ম্যান অব দ্য ম্যাচও হননি। এবার একেবারে ম্যান অব দ্য সিরিজ…

তাসকিন: হ্যাঁ, টেস্টে এই প্রথম ম্যান অব দ্য সিরিজ হলাম; দারুন অভিজ্ঞতা। খুব উপভোগ্য ছিল। টেস্ট ক্রিকেটে ৫ উইকেট (৬/৬৪) পাওয়াটাও অনেক আনন্দের। ইচ্ছা ছিল অনেক দিনের, টেস্ট থেকে কবে ৫টা উইকেট আসবে? এবার এল। আশা করি সামনে এমন অনেক হবে… ইনশাল্লাহ।

প্রথম আলো:ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই প্রথম টেস্ট খেললেন। অভিজ্ঞতা কেমন?

তাসকিন: হ্যাঁ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট, সেটাও তাদের মাটিতে। ওদের বিপক্ষে প্রথম সিরিজেই ম্যান অব দ্য সিরিজ হতে পারাটা দারুণ ব্যাপার। সে কারণেও টেস্টের প্রথম ৫ উইকেটটা সবসময় বিশেষ হয়ে থাকবে ।

স্বীকৃতির স্মারক হাতে তাসকিন আহমেদ। ক্যারিয়ারে এই প্রথম টেস্টে সিরিজ-সেরা হয়েছেন। স্মরণীয় করে তুলতে একটা ছবি তো চাই-ই চাই
স্বীকৃতির স্মারক হাতে তাসকিন আহমেদ। ক্যারিয়ারে এই প্রথম টেস্টে সিরিজ-সেরা হয়েছেন। স্মরণীয় করে তুলতে একটা ছবি তো চাই-ই চাইতাসকিন আহমেদের ইনস্টাগ্রাম পোস্ট থেকে

প্রথম আলো:চোট প্রবণতার কারণে আপনাকে অনেক কিছু ‘ম্যানেজ’ করে খেলতে হয়। তার মধ্যেও অ্যান্টিগায় ক্যারিয়ার সেরা বোলিং, কিংস্টনেও ভালো করলেন। কিভাবে সামলাচ্ছেন নিজেকে?

তাসকিন: ফাস্ট বোলারদের সবসময় কিছু না কিছু ছোটখাট চোট–আঘাত থাকেই। বোলিংয়ের চাপসহ আরও কিছু বিষয় মিলিয়ে এগুলো ম্যানেজ করে খেলতে হয়। চোটে যে কোনো সময় যে কেউ পড়তে পারে, বিশেষ করে বোলাররা। যতটুকু নিজের হাতে আছে, চেষ্টা করে যাচ্ছি। টিম ম্যানেজমেন্ট এবং বোর্ড সাহায্য করছে।

প্রথম আলো:কাঁধের চোটের এখন কী অবস্থা?

তাসকিন: ব্যথা মাঝে–মধ্যে একটু বাড়ে, আবার ঠিক হয়ে যায়। এক্সারসাইজ, রিহ্যাব—এসব ভালোভাবে করতে চেষ্টা করছি।

প্রথম আলো:গত সাড়ে তিন মাসে বাংলাদেশ আটটি টেস্ট খেলল। আপনি যদিও বিরতি দিয়ে খেলছেন, তারপরও এরকম টানা টেস্ট খেলতে কেমন লাগে?

টেস্ট ক্রিকেট আমি উপভোগ করি। শরীরে সমস্যা না থাকলে, চাপ ম্যানেজ করার ব্যবস্থা থাকলে নিয়মিত টেস্ট খেলতে চাই।

তাসকিন আহমেদ

তাসকিন: টেস্ট ক্রিকেট আমি সবসময়ই অনেক উপভোগ করি। চ্যালেঞ্জ থাকে। ভালো উইকেটেও ভালো ভালো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে উইকেট বের করতে কষ্ট হয়। অবশ্য টেস্ট ক্রিকেটে চ্যালেঞ্জ থাকবেই, এটা বোলার–ব্যাটসম্যান সবার জন্যই। ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে যায়, একেকবার একেকভাবে বোলিং করতে হয়। শরীরের ওপর হয়ত অনেক সময় চাপ বেশি পড়ে। তবে সব মিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেট উপভোগই করি।

প্রথম আলো:আপনি পেস বোলার, চোটপ্রবণও। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে টেস্ট ক্রিকেটটা কি বিশ্রাম নিয়ে বা বিরতি দিয়ে খেলতে চাইবেন?

তাসকিন: এটা আসলে নির্ভর করে ফিটনেস কেমন থাকছে তার ওপর। আগেই বলেছি টেস্ট ক্রিকেট আমি উপভোগ করি। শরীরে সমস্যা না থাকলে, চাপ ম্যানেজ করার ব্যবস্থা থাকলে নিয়মিত টেস্ট খেলতে চাই। আর পরবর্তি টেস্ট ক্রিকেট আসতে এখনও তিন–সাড়ে তিন মাস। আপাতত সামনের খেলাগুলো ঠিকভাবে খেলতে চাই। তবে যেটা বললাম… টেস্ট ক্রিকেট আমি নিয়মিতই খেলতে চাই।

প্রথম আলো:দলের অন্য বোলারদের এবার কেমন দেখলেন?

সিনিয়র–জুনিয়র কোনো বিষয় নয়। একজন খেলোয়াড় যখন খেলতে নামে তখন তাকে দায়িত্ব নিতেই হবে। তবে এটা সত্যি, অভিজ্ঞতার মূল্য আলাদা। এই অভাব পূরণে কিছুটা সময় তো লাগবেই।

তাসকিন আহমেদ

তাসকিন: আমাদের বোলিং ইউনিটের উন্নতির ধারা মাশাল্লাহ গত কয়েক বছর ধরেই ভালো। সবাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি। অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, ফিটনেস বিবেচনায় সবাই ভালো করছে। দুই–একটা বাজে ম্যাচ সবারই যায়। সার্বিকভাবে উন্নতির ধারাটা ভালো।

প্রথম আলো:নাহিদ রানা আসার পর তার গতি নিয়েই বেশি আলোচনা। আপনি বা দলের অন্য পেসাররা এটাকে কিভাবে দেখেন?

তাসকিন: খুবই প্রতিশ্রুতিশীল বোলার নাহিদ রানা। ও যদি সুস্থ থাকে আর নিজের পরিচর্যা করে, উন্নতির ধারাটা ঠিক রাখে, অনেক ভালো করবে। ভালো করছে, সবাই খুব প্রশংসা করছে—এই স্রোতে যেন ভেসে না যায়। অনেক পরিশ্রম করে সে। উন্নতি করার ইচ্ছা থাকলে আমার বিশ্বাস বিশ্ব ক্রিকেটেই একজন ভালো বোলার হয়ে উঠবে ও।

প্রথম আলো:মিরাজের অধিনায়কত্ব কেমন লেগেছে?

তাসকিন: এখন বলাটা একটু আগেভাগে হয়ে যাবে। দুইটা টেস্টে ভালো অধিনায়কত্ব করেছে। মাঠে অনেক ইনভলব ছিল, সবাইকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছে। মাঠের বাইরেও দেখেছি ব্যক্তিগতভাবে সবাইকে উজ্জীবিত রাখছে। সব মিলিয়ে ভালোই বলব, দলের সবাই খুশি।

প্রথম আলো:মুশফিক, নাজমুল ছিলেন না। তবে জাকের আলী দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন। অভিজ্ঞদের অভাব কতটা মেটাতে পারলেন তিনি?

তাসকিন: জাকেরের ইনিংসটা স্পেশাল ছিল। ওর ইনিংস থেকে একটা আলাদা মোমেন্টামও পাই আমরা। যেভাবে সে খেলেছে, অসাধারণ ছিল। হ্যাঁ, মুশফিক ভাই আর শান্তকে (নাজমুল হোসেন) মিস করেছি। বিশেষ করে প্রথম টেস্টে মনে হচ্ছিল ওনারা থাকলে একটু ভালো হতো।

অন্য সিনিয়ররা তো এখন টেস্ট খেলেনই না। নতুন বাংলাদেশ দলের একটা ছবি কি ফুটে উঠল এই সিরিজে?

তাসকিন: দেখুন, একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় তৈরি হতে অনেক সময় লাগে। ১০–১৫ বছর খেলার পর একজন খেলোয়াড় যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে সেটার পেছনে ওই ক্রিকেটারের শ্রম, বোর্ডের বিনিয়োগ—অনেক কিছু থাকে। এরকম খেলোয়াড়দের অভাব সহজে পূরণ হয় না। এখন যারা নতুন, তারা যখন আরও কিছু বছর খেলে নিজেদেরকে ধারাবাহিকভাবে মেলে ধরতে পারবে, তখন এটা পূরণ হবে।

প্রথম আলো:বাংলাদেশের এই দলটার ভবিষ্যৎ কেমন দেখেন?

তাসকিন: বাংলাদেশ দলের জন্য এখন একটা ট্রানজিশন পিরিয়ড যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস কয়েক বছরের মধ্যে এই দলটা অনেক ভালো দল হয়ে উঠবে। আর কারও সঙ্গে কারও তুলনা করার প্রয়োজন নেই। যারা আমাদের দেশের জন্য এত কিছু করেছেন তারা কিংবদন্তী খেলোয়াড়। নতুনদের সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত উন্নতি করে দলে ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলেই আস্তে আস্তে অভাবগুলো পূরণ হবে। সিনিয়র–জুনিয়র কোনো বিষয় নয়। একজন খেলোয়াড় যখন খেলতে নামে তখন তাকে দায়িত্ব নিতেই হবে। তবে এটা সত্যি, অভিজ্ঞতার মূল্য আলাদা। এই অভাব পূরণে কিছুটা সময় তো লাগবেই।

৬ উইকেট নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন তাসকিন আহমেদ। অ্যান্টিগা টেস্টে।
৬ উইকেট নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন তাসকিন আহমেদ। অ্যান্টিগা টেস্টে।ছবি: বিসিবি

প্রথম আলো:ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিয়ে কতটা আশাবাদী? ব্যক্তিগত কোনো লক্ষ্য কি থাকবে আপনার?

তাসকিন: ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতেও সিরিজ জয়ের লক্ষ্যেই খেলব। ব্যক্তিগত লক্ষ্য আর কী…প্রতিটা ম্যাচেই ভালো করতে চাই। কন্ডিশন বুঝে, পরিস্থিতি বুঝে বল করার চেষ্টা করব। উইকেট এক সিরিজে বেশি হবে, এক সিরিজে কম হবে; তবে প্রক্রিয়াটা সব সময় একই হওয়া চাই। সেভাবেই এগোব, পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলে নিজের সেরাটা দিতে চেষ্টা করব।

prothom alo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here