অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব যেভাবে

Daily Nayadiganta (নয়া দিগন্ত) : Most Popular Bangla Newspaper

সৈয়দ আবদাল আহমদ

১৮ জুলাই ২০২৩

অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব যেভাবে। –

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচ মাস বাকি আছে। আগামী ডিসেম্বর-২০২৩-এর শেষ সপ্তাহে, জানুয়ারি-২০২৪-এর প্রথম সপ্তাহের দিকে এ নির্বাচন হতে পারে। এবারের নির্বাচনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি যাতে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয় সেটিই দেখার বিষয় এবং তা সবাই চাচ্ছেও। কারণ গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে শুধু প্রহসন সংঘটিত হয়েছে, সত্যিকারের নির্বাচন বলতে কোনো কিছু হয়নি। তাই আগামী নির্বাচন নিয়ে সবাই সজাগ। বিশেষ করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন যাতে আর না হয় সেটি যেমন দেশের মানুষ চাচ্ছে, তেমনি এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক বিশ্বও একমত এবং তারা এ ব্যাপারে সোচ্চারও।

একটি গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ৩৬টি দল গত ১২ জুলাই শেখ হাসিনা সরকারের পতনের একদফা ঘোষণা করেছে। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে কোনো অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন একমাত্র নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই সম্ভব। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি রাজধানীর নয়াপল্টনে কয়েক লাখ লোকের সমাবেশ করে শেখ হাসিনারের পদত্যাগের এই এক দফা ঘোষণা করে। এর একদিন পর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি না করাসহ রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ৩১ দফার একটি রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। এতে বলা হয়েছে, সময়মতো সব মত ও পথের সমন্বয়ে একটি সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই এই রূপরেখার মূল লক্ষ্য। শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে দলটি পদযাত্রা কর্মসূচিও পালন করছে।

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয় সে ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও তৎপর। এ ধরনের একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র গত ২৪ মে দিনে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। এতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করার যেকোনো বাংলাদেশী নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। ভোট কারচুপি, ভোটার ও নির্বাচনী এজেন্টদের বাধাদান, নির্বাচনী সমাবেশে হামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন, রাজনৈতিক দল, ভোটার ও সুশীল সমাজ বা সংবাদ মাধ্যমকে মত প্রকাশে বাধাদান ইত্যাদি কার্যকলাপ নির্বাচনে অনিয়ম ও হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতাসীনরা এ কুকর্মগুলোই করে আসছে।

এই ভিসানীতি ঘোষণার পর মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল এবং একই সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদল বাংলাদেশ সফর করে গেছে। এই দুই প্রতিনিধিদল এমনিতেই বাংলাদেশ সফরে আসেনি। তারা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় বার্তা সরকারকে দিয়ে গেছে। উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করেছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে- বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে রাজনৈতিক দলের সংলাপকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিনিধিদলকে শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও নাকি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে এবং সংসদ বহাল রেখে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কি সম্ভব? মোটেও না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সবচেয়ে বড় সমস্যা। নির্বাচন বলতে এখন দেশে কিছু নেই। সত্যিকারের নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে। দেশের সামগ্রিক নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। নির্বাচনের নামে শুধু কলঙ্কজনক প্রহসন হচ্ছে। যেমন জাতীয় নির্বাচনে, তেমনি স্থানীয় নির্বাচনে। সিটি, মেয়র, পৌর, জেলা, উপজেলা পরিষদও, এমনকি ইউপি নির্বাচনেও। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ী সংগঠন, ছাত্র সংগঠন, ক্লাব, ট্রেড ইউনিয়ন, পেশাজীবী সংগঠন কোথাও দেশের মানুষ ভোট দিতে পারছে না। একতরফাভাবে নির্বাচন হয়েছে। ফলে এটি প্রমাণিত, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে সত্যিকারের কোনো নির্বাচন হওয়া অলীক কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়। সত্যিকারের নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সংলাপ হতে পারে, সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে তা নিয়ে সমঝোতা হতে পারে। আওয়ামী লীগ সমাবেশ করে বলেছে, শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। তা হলে প্রশ্ন, শেখ হাসিনাকে রেখে বা তার অধীনে নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনটি অবাধ হবে কিভাবে?

২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদের দু’টি চরম প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন আইন ও সংবিধানে দেয়া ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে কি না তা নির্ভর করে নির্বাচনকালীন সরকার কী হবে তার ওপর। নির্বাচনের সময় এমন একটি সরকার থাকতে হবে, নির্বাচনের ফলাফলের ব্যাপারে যারা থাকবে সম্পূর্ণ নিস্পৃহ (নিরপেক্ষ)। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীনে হওয়া ওই দু’টি নির্বাচন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক কলঙ্কের সৃষ্টি করেছে। এমন ভুয়া নির্বাচনের নজির নেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি ‘বিনাভোটের নির্বাচনী প্রহসন’ এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনটি ‘নিশিরাতের ভোট প্রহসন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। খলনায়ক সিইসি কে এম নুরুল হুদাও স্বীকার করেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায় না। অবসরের পর জুন ২০২২ এক বিতর্ক প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা এক স্পর্শকাতর ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়।’

খলনায়ক সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে করানো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকারকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয়। নির্লজ্জ প্রহসনের অংশ হিসেবে এ নির্বাচনে ভোট ছাড়াই ১৫৪টি আসন অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে চার কোটি ৫৩ লাখ ভোটারকে বঞ্চিত করে বর্তমান ক্ষমতাসীনরা প্রতিদ্বন্দ্বীহীন অবস্থায় বিজয়ী বলে ঘোষণা করে। বাকি ১৪৬টি আসনে গড়ে ৫ শতাংশ ভোটও পড়েনি। নির্বাচনে শাসকদলের আজ্ঞাবহ কয়েকটি দল ছাড়া দেশের আর কোনো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে এবং অর্ধেকের বেশি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বলে ঘোষণা দিয়ে এক বিচিত্র এবং অদ্ভুত সংসদ গঠন করা হয়। অথচ সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে- ‘প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত ৩০০ সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনের ৫০ জন মহিলা সদস্য নিয়ে সংসদ গঠিত হবে।’ অর্ধেকের বেশি আসনে যেখানে প্রত্যক্ষ নির্বাচনই হয়নি, সেখানে সংসদ গঠিত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবুও গায়ের জোরে ক্ষমতাসীনরা সেদিন বিচিত্র সংসদ গঠন করে, যেখানে বিরোধী দলের সদস্যরা একসাথে বিরোধী দলেও ছিল, আবার সরকারের মন্ত্রিসভায়ও ছিল। এভাবেই তারা পাঁচ বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। এরপর আসে আরেক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের নজির। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচন।

৩০ ডিসেম্বরের সেই নির্বাচনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। নির্বাচনের আগের রাতেই ভোট প্রহসন সম্পন্ন করে এক নির্লজ্জ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ক্ষমতাসীনরা। এটি নিশিরাতের বা নৈশভোট প্রহসন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আরেক খলনায়ক সিইসি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন এ নির্বাচনটি করে।
এ নির্বাচনের সময় দেশব্যাপী নির্বাচন পূর্ববর্তী সহিংসতা ও বিরোধী দলের অগণিত নেতাকর্মী সমর্থককে গ্রেফতার ও গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানির মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারকাজ থেকে আগেই দূরে রাখা হয়েছে। নির্বাচনের আগের রাতে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সিলমারা ব্যালট দিয়ে ভোটের বাক্স অগ্রিম ভরে রাখা হয়। নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র দখল করে বিরোধী প্রার্থীদের এবং তাদের মনোনীত পোলিং এজেন্টদের বিতাড়িত করা হয়েছে। সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ এমন কোনো কুকর্ম নেই যা করা হয়নি। নিশিরাতের এ প্রহসনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক দিয়েই বেশির ভাগ বাক্স সিলমারা ব্যালটে পূর্ণ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশের সাথে ক্যাডাররাও এ কাজে অংশ নিয়েছে। বিবিসি এ নিয়ে সেদিন অনুসন্ধানী সচিত্র প্রতিবেদন করেছে।

২০১৮ সালের নির্বাচনের ছয় মাস পর নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রভিত্তিক যে ফলাফল প্রকাশ করে তাতে ভোট পড়ার অস্বাভাবিক চিত্র বেরিয়ে আসে। এতে দেখা যায়, ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। এক হাজার ২০৫টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৯৬ থেকে ৯৯ শতাংশ। ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে ছয় হাজার ৪৮৪টি কেন্দ্রে। আর ৮০ থেকে ৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছে এমন কেন্দ্রের সংখ্যা ১৫ হাজার ৭১৯টি। বিদেশী পর্যবেক্ষকরা এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত ছিল। দেশের বেসরকারি সংস্থা ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান বলেন, বিষয়টি উদ্বেগের। এটি একটি হাস্যকর ব্যাপার। যেটি হয় না পৃথিবীর কোথাও, সেটিই হয়েছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলেছে, কেমন তামাশার নির্বাচন হয়েছে, এ পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়। ২১৩ কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়া অবিশ্বাস্য ঘটনা।

নির্বাচনের ওই পরিসংখ্যানে দেখানো হয়, অনেক আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তুলনায় বিএনপির প্রার্থী মাত্র ১০ ভাগের এক ভাগ ভোট পেয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল টিআইবি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে ৫০টি আসন পর্যবেক্ষণ করে জানায়, ৪৭টি বুথ দখল করে, জাল ভোট প্রদান ও ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সভর্তি করার মতো অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে তারা।

এ নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশনারদের একজন মরহুম মাহবুব তালুকদার ইসির দায়িত্ব শেষ হওয়ার আগে ডেইলি স্টারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আগের রাতে ভোট দেয়া হয়েছে এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। রাতের ভোটের বিষয়টি তদন্ত করলে নিজেদের ওপরই দায় এসে পড়বে বলে ইসি তদন্তে যায়নি। এর দায় আমারও আছে। তিনি বলেন, ওই নির্বাচনে ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে যা কেউই বিশ্বাস করবে না। কারণ নির্বাচনের আগের রাতে বাক্সভর্তি ব্যালটের ছবি বিবিসি তুলে ধরেছে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে। তেমনি নির্বাচনের আগে গায়েবি মামলার হিড়িক পড়ে যায়। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, এতেই বোঝা যায় নির্বাচন কেমন হয়েছে। আর এভাবে না-অবাধ, না-সুষ্ঠু, না নিরপেক্ষ, না-আইনানুগ, না-গ্রহণযোগ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাতের ভোট যে প্রতিষ্ঠিত সত্য, এর বড় উদাহরণ হচ্ছে ইসি এর কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। ‘নির্বাচননামা’ বইতেও মাহবুব তালুকদার বিষয়গুলো লিখে গেছেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের নির্বাচনী প্রহসনে মোট ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৯১টি আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জোট ও তাদের সহযোগীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। শুধু সংসদ নির্বাচনই নয়; এই নির্বাচন কমিশন পাঁচ বছরে ছয় হাজার ৬৯০টি বিভিন্ন নির্বাচন করেছে, সবগুলোই ছিল বিতর্কিত। ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির নির্বাচন। এভাবে নির্বাচনী ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়া হয়। এভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা গত ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা কব্জা করে রেখেছে। এর বিরুদ্ধে যাতে জোরালো প্রতিবাদ না হয় এ জন্য তারা দমন-নির্যাতনের পথে গেছে। শুধু বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেই দেড় লক্ষাধিক মামলা দেয়া হয়েছে। ৪০ লক্ষাধিক নেতাকর্মী এর শিকার। এ পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতায় থেকে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেবে, তা হাস্যকর নয় কি?

বর্তমানে প্রাক্তন সচিব হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে যে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে তারাও সরকারের পুতুল বা আজ্ঞাবাহী হিসেবেই কাজ করছেন। একমাত্র গাইবান্ধা উপনির্বাচন ছাড়া আর কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ তারা নিতে পারেনি; বরং নানা ধরনের আইন করে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা সরকার আরো হ্রাস করতে সরকারকে তারা সহায়তা করেছে। তাই নির্বাচনী ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে হলে সব দলের অংশগ্রহণে দেশে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে হবে এবং এটি একমাত্র নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই করা সম্ভব হতে পারে।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক,
জাতীয় প্রেস ক্লাব
ইমেইল : [email protected]