সরকারি দখলে রওয়া ক্লাব
নিজস্ব প্রতিনিধি
হঠাৎ করেই কোনো ঘোষণা না দিয়েছে ভেঙে দেয়া হয়েছে রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন (রাওয়া) এর কার্য নির্বাহী পরিষদ। হঠাৎ করে কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন ক্লাব সদস্যরা। গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়ে আসা এ ক্লাবে অতীতে কখনো এরকম ঘটনা ঘটেনি।
রাওয়া ক্লাবের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কমিটি ভেঙে দেয়ার পর এর সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মঙ্গলবার চার সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক মন্ডলি গঠন করা হয়েছে। সেনা সদরের এসটি পরিদপ্তর এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান জাহাঙ্গীর পিএসসি-কে এর আহ্বায়ক করা হয়েছে।
তিনি জানান, আগামী ১৯শে ডিসেম্বর রাওয়ার এজিএম ও নির্বাচনের দিন ধার্য ছিলো। এর আগেই সমাজসেবা অধিদপ্তরের আদেশবলে এ উদ্যোগ নেয়া হলো। কমিটি ভেঙে দেয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৫ হাজার সদস্যকে নোটিশের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
রাওয়া চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে বলা হয়েছে-সম্মানিত সদস্যবৃন্দ,আপনাদের সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, ১৪ই ডিসেম্বর মহাপরিচালক, সমাজ সেবা অধিদপ্তর, ঢাকা কর্তৃক স্বাক্ষরিত পত্রবলে রাওয়ার বর্তমান কার্য নির্বাহী পরিষদকে অবিলম্বে (অদ্য ১৫ই ডিসেম্বর ২০২০ হতে) সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান জাহাঙ্গির, পিএসসি, পরিচালক, এসটি পরিদপ্তর, সেনা সদরকে আহবায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক মন্ডলী গঠন করা হয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের জন্য গঠিত এই ওয়েলফেয়ারে অতীতে কখনও কর্মরত কোনো সামরিক কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেননি। হঠাৎ করেই কমিটি ভেঙে একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলকে এর দায়িত্ব দেয়ায় সদস্যদের মধ্যে অনেক গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা নিহত হওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল রাওয়া ক্লাব কর্তৃপক্ষ। সেই সংবাদ সম্মেলনে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। তখন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের ভূমিকা ভালো চোখে দেখে নি সরকার। পাশাপাশি পুলিশও এই সংবাদ সম্মেলন তাদের বিরুদ্ধে বলে মনে করেছিলো। ফলে রাওয়া ক্লাবের পূর্ণ কর্তৃত্ব সরকারের হাতে নিতে চাকরীরত একজন সেনা কর্মকর্তাকে সেখানে বসানো হয়েছে বলেন মনে করছেন একাধিক সদস্য।
রাওয়া ক্লাবের এক সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদন নিয়ে সেনা সদর এ চিঠি ইস্যু করে। ওই চিঠির আলোকে তত্ত্বাবধায়ক মন্ডলি গঠন করা হয়েছে।
চার সদস্যের কমিটির অপর তিন সদস্য হলেন সেনাসদরে কর্মরত একজন মেজর, সামরিক ভূমি অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা (সিভিলিয়ান) ও সদ্য বরখাস্ত করা কার্যনির্বাহী পরিষদের মেম্বার-এন্টারটেনমেন্ট মেজর (অব) ইমতিয়াজ ইসলাম।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তে অনেক সদস্যই তাদের হতাশা প্রকাশ করেন।
কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য(গেইম এন্ড স্পোর্টস) ফ্লাইট লে.(অব:) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ ভুঁইয়া বলেন, এজিএম ও নির্বাচনের আগেভাগে এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হলো। যেটা হয়েছে সেটা আমাদেরকে হতাশ করেছে। কিছু ভূল বোঝাবুঝি থেকে রাওয়ার মতো প্রতিষ্ঠান নিয়ে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলো।
ক্লাব সংশ্লিষ্টরা জানান, কার্যনির্বাহী পরিষদের যে ১৫ জন অবসরপ্রাপ্ত সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন-চেয়ারম্যান মেজর খোন্দকার নুরুল আফসার, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমডি মাহবুবুল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান লে. কর্নেল খ মুস্তাফিজুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল লে. কর্নেল এ এম মোশারফ হোসেন, কোষাধ্যাক্ষ মেজর আব্দুস সালাম, যুগ্ম-সম্পাদক মেজর মাশরুর এইচ সিদ্দিকী, সদস্য(ডেভেলপমেন্ট) লে. কর্নেল আতিকুল হক চৌধুরী, সদস্য (গেম এন্ড স্পোর্টস) ফ্লাইট লে.মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ ভুঁইয়া, সদস্য (এন্টারটেইনমেন্ট) মেজর ইমতিয়াজ ইসলাম, সদস্য (ক্যাটারিং) মেজর ইকবাল শাহরিয়ার, সদস্য(বেভারেজ) মেজর এমডি শামীম হাসান, সদস্য(লাইব্রেরী এন্ড পাবলিকেশন্স) কর্নেল খালেদা খানম, সদস্য (ওয়েলফেয়ার) লে. কর্নেল এমডি মোয়াজ্জেম হোসেন, সদস্য(জেনারেল-১) মেজর একে এম মুসা ও সদস্য ( জেনারেল-২) লে. কর্নেল এসকে আকরাম আলী।
রাওয়া ক্লাবের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, এটি সম্পূর্ণরূপে একটি অরাজনৈতিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, যা সশস্ত্র বাহিনী অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কল্যাণার্থে প্রতিষ্ঠিত।
ক্লাব সংশ্লিষ্টরা জানান, সিনহা হত্যাকাণ্ড সহ বিভিন্ন ইস্যুতে সেনাবাহিনীর মধ্যে বেশ কয়েক মাস ধরেই এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর মধ্যে সিনহা হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাওয়া ক্লাবের কঠোর অবস্থানও সরকারকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছিলো। ফলে নানা আশঙ্কায় ক্লাবটির পূর্ণ কর্তৃত্ব নিল সরকার।
শেখ হাসিনার শাসন আমলে পুলিশ যে সেনাবাহিনীর চেয়েও বেশি শক্তিশালী সেটা এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমানিত হল।