অন্যকে দমন করা বিশেষত ভিন্ন চিন্তা তো বটেই একই সঙ্গে ভিন্ন চিন্তার ধারকদের ‘নির্মূল’ করা এই দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির বৃহৎ অংশেরই শ্রেণি চরিত্র।

 

ফরহাদ মজহার     30 April 2020

Extracted from his Facebook entry

ব্যক্তিকে আক্রমণ না করে এবং ভিন্ন চিন্তার মানুষের প্রতি ঘৃণা চর্চা পরিহার করে নীতিগত মতাদর্শিক লড়াই বাংলাদেশে নাই বললেই চলে। অন্যকে দমন করা বিশেষত ভিন্ন চিন্তা তো বটেই একই সঙ্গে ভিন্ন চিন্তার ধারকদের ‘নির্মূল’ করা এই দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির বৃহৎ অংশেরই শ্রেণি চরিত্র। ঘৃণাজীবিরা যে কোন দলেরই হতে পারে। অবশ্য পুঁজিতান্ত্রিক সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি ও গোষ্ঠির মধ্যে যে তীব্র প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে তার ফলে এই খাসিলত ভয়ংকর রূপ পরিগ্রহণ করে। বাংলাদেশের মতো পুঁজির প্রান্তের দেশে সেটা আরও আত্মঘাতী রূপ নেয়। যার কুফল আমরা ভোগ করছি।

ফলে ইনবক্সে আমাকে যারা এখন বলছেন, শাহবাগের সময় আপনাকে ‘ভুল’ বুঝেছি ভাই, ক্ষমা করে দিয়েন। তাদের আমি অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু আপনি যে এই কথাটা আমাকে সরাসরি লিখে জানাবার মহত্ত্ব দেখিয়েছেন তাতে আপনি অনেক উপরে নিজেকে স্থাপন করলেন। আপনাকে আমি সালাম করি। আমি মানুষ, তাই আমারও আবেগ ভালবাসা আছে। নিজের উপলব্ধির কথা লিখেছেন, লিখে জানাবার কষ্টটুকু করেছেন, তাই ভাল লেগেছে।

তবে বলি, যারা আমাকে নোংরা ভাষায় গালি দিয়েছেন, কুৎসিত ব্যঙ্গ করেছেন, তাদের নিয়ে আমার আসলেই কোন মাথাব্যথা নাই। আমার জীবনে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। ধরুন নতুন জাতের বেগুন গাছ লাগানো, প্রায় লুপ্ত হয়ে যাওয়া ধানের জাত সংগ্রহ এবং ধানের জাতের জমির আগাছা নিড়ানো কিম্বা আমাদের বীজ ও খাদ্য ব্যবস্থার সুরক্ষার জন্য মনসান্টো কম্পানির বিরুদ্ধে লড়া।

আমি ‘মানুষ’কে কেন্দ্রে রেখে চিন্তা করি না, গাছ পশু পাখি কীটপতঙ্গ জীব অণুজীব সাপ জোঁক ব্যাঙ — সব কিছুই আমার ভাবনার বিষয়। আরে, এমনকি আরশোলা ও চামচিকাও বটে। সকলেই বিশ্বব্যাপী প্রাণ ব্যবস্থার অন্তর্গত। আমি তাদের ভুলি না। অথচ কী আশ্চর্য! আপনাদের নাম আমি ভুলে গিয়েছি।

এমনকি গণ মাধ্যমের সেই সকল ব্যাক্তিদের নামও কি আমার মনে রাখতে হবে! যারা আমাকে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের জন্য হেন কোন কুকর্ম নাই করেন নি। তাদের? তাদের নাম জানি, কিন্তু মনে রাখতে চাই না। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে আমাকে গ্রেফতার ও উচিত শিক্ষা দেবার দাবি আপনারা করতে পেরেছেন, নিজের বিবেকের কাছে নিজেই প্রশ্ন করুন, আপনারা সাংবাদিক কি? আপনারা তিনদিন ক্যামেরা নিয়ে আমার বাড়ীর সামনে বসেছিলেন, আমাকে কিভাবে ধরা হয় সেটা লাইভ প্রচার করার জন্য।

ওহহো! ভুলে যাচ্ছি এমনকি সেই সকল বুদ্ধিজীবিদেরও যারা আমাকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে ফাঁসির মঞ্চে ওঠাতে তৎপর ছিলেন। হয়তো এখনও আছেন। একজন এখন হঠাৎ হেফাজতি হবার সাধনা শুরু করেছেন, কিম্বা শেখ হাসিনা হেফাজতের দাবি মেনে নিয়ে ঠিক করেছেন বলে নতুন কেচ্ছা গাইছেন। আপনার নতুন গান গাইবারও আমি কোন প্রয়োজন দেখি না।

আল্লাহ আপনাদের হেদায়েত করুক!