অগ্নি সন্ত্রাসের হোতা আওয়ামী লীগ: মির্জা ফখরুল

Transparent Newspaper Clipping Clipart - Prothom Alo Logo ...

বিশেষ প্রতিনিধি

ঢাকা

সরকারি দলের নেতারা বিএনপির বিরুদ্ধে আবার আগুনসন্ত্রাসের কথা নতুন করে বলছেন, এর কারণ কী, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এটা হচ্ছে চলমান আন্দোলনের যে ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে এবং তার যে গতি প্রতিদিন বাড়ছে, তাতে ভীত হয়ে তারা আগের বিষয়গুলোকে নিয়ে আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো যেটা সত্য কথা, এই অগ্নিসন্ত্রাসের মূল হোতা কিন্তু আওয়ামী লীগ নিজে, সরকার নিজে। যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, প্রতিটি ঘটনা দেখা যাচ্ছে যে আওয়ামী লীগের লোকেরাই এর সঙ্গে জড়িত। বাসের ব্যাপারটা মনে আছে নিশ্চয়ই আপনাদের।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘যেটার মালিক হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রধান (সাধারণ সম্পাদক)। চৌদ্দগ্রামে যে ঘটনা ঘটেছে, আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে আসামি করে যে মামলাগুলো দেওয়া হয়েছে, সবকিছুর মূলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের লোকরাই এর সঙ্গে জড়িত।’

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে সারা দেশে বিএনপি-জামায়াত জ্বালাও-পোড়াও চালিয়েছিল। ওই বছরের ২ ডিসেম্বর রাতে রাজধানী ঢাকায় বিহঙ্গ পরিবহনে আগুন দিয়ে ১১ যাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। বিহঙ্গ পরিবহনের চেয়ারম্যান পঙ্কজ দেবনাথ। তিনি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।

২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ নেতা ও বরিশাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মইদুল ইসলাম বরিশালে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতি আদায় করে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য বিহঙ্গ পরিবহনের চেয়ারম্যান পঙ্কজের নির্দেশেই এগারোজনকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এমন বিস্ফোরক বক্তব্যে তখন মইদুল ইসলাম ও পঙ্কজ দেবনাথের তীব্র বাদানুবাদ হয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করা দল। আমরা কখনোই অগ্নিসন্ত্রাস বা সন্ত্রাস করে ক্ষমতায় যাইনি, এখনো যেতে চাই না।’

বিএনপির সাম্প্রতিক বিভাগীয় গণসমাবেশে নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনার উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এগুলো সমাবেশ হয়েছে, প্রতিটি সমাবেশে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর কী রকম অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে। কিন্তু আমাদের দল থেকে কোনো রকম সন্ত্রাস বা উসকানি দেওয়া হয়নি। তারাই উসকানি দিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইছে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তারাই চলমান আন্দোলনকে নস্যাৎ করার এই পদ্ধতিটা (নতুন করে অগ্নিসন্ত্রাসের অভিযোগ) বেছে নিয়েছে, কিন্তু সেটি কাজ করবে না। কারণ, জনগণ প্রতি মুহূর্তে দেখছে কে কী করছে না করছে। এখন তাদের টিকে থাকার জন্য তারা যেটাই করুক না কেন, কোনো কাজ দেবে না। এখন জনগণের একটাই দাবি—এই সরকারকে পদত্যাগ করে চলে যেতে হবে।

এই সরকার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামো দুটিই নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান অনির্বাচিত সরকার গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো এবং অর্থনৈতিক কাঠামো দুটিকেই নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। তারা এমন একটা কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে, যার মাধ্যমে তারা মূলত একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। একদিকে তারা মধ্যম আয়ের দেশের কথা বলছে, অন্যদিকে শতকরা ৪২ জন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। আজ দেশ সত্যিকার অর্থেই একটা বড় সংকটের মধ্যে পড়েছে। এই সরকার বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করেছে, শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না।

মাইনরিটি জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সঙ্গে পৃথক সংলাপের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান কর্তৃত্ববাদী ও একনায়কতান্ত্রিক  সরকারকে সরিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে মুক্ত করতে চাই। আমরা একমত হয়েছি, এই অবৈধ ও লুটেরা সরকারকে অবশ্যই অপসারণ করতে হবে এবং এর জন্য জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে।’

বিএনপির মহাসচিব জানান, তিনটি দলের সঙ্গে পৃথক সংলাপে তারা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘মিথ্যা’ মামলাগুলো প্রত্যাহারের বিষয়ে একমত হয়েছেন। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের দুর্নীতির তদন্তে কমিশন গঠন, বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজাতে বিচারবিভাগীয় কমিশন, হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়, বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নির্বাচনের পরে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করার বিষয়েও তারা একমত হয়েছে।

পরে মাইনরিটি জনতা পার্টির সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল, বাংলাদেশ ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদেকি ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল ইসলামও সাংবাদিকদের সামনে সংলাপের বিষয়ে কথা বলেন।

সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে আমরা একমত পোষণ করেছি। যুগপৎ আন্দোলনে আমরা থাকব।’

বাংলাদেশ ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদেকি বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেবে না জনগণ।
বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে তিনটি দলের সংলাপে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও উপস্থিত ছিলেন।