ঢাকা
কেবল যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঢাকায় সিলেট বিভাগ জাতীয়বাদী ছাত্র ফোরাম।
সম্প্রতি ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, বৈঠকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, যার মাধ্যমে বাক্স্বাধীনতাসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ব্যাহত হচ্ছে, সেদিকে কড়া নজর রাখা ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর কথা বলা হয়েছে।
ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বৈঠক প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, ওই বৈঠকে পরিষ্কারভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, সারা বিশ্ব কিন্তু বাংলাদেশে নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য অংশীদারীমূলক নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। তাঁকে (পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে) সে বার্তাটা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে আরও বার্তা দেওয়া হয়েছে, গণমাধ্যমের কর্মীদের ওপর যে নিপীড়ন নির্যাতন করা হচ্ছে, সেটা যাতে অব্যাহত না থাকে। আরও বার্তা দেওয়া হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন; যার মাধ্যমে বাক্স্বাধীনতাসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ব্যাহত হচ্ছে, সেদিকে কড়া নজর রাখার জন্য। মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর কথা বলা হয়েছে।
এটা কেবল যুক্তরাস্ট্র নয়, সব বিশ্ববিবেক আজকে বাংলাদেশের মানুষের পাশে আছে দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সব বিশ্ববিবেক, যত গণতন্ত্রকামী দেশ আছে, স্বাধীনতাকামী দেশ আছে, সবাই বাংলাদেশের নির্বাচন মানবাধিকার, আইনের শাসন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমাদের পাশের দেশ ভারতের নির্বাচন নিয়ে তো সারা বিশ্ব নজরদারি করছে না! নেপালের, ভুটানের, এমনকি শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে বিশ্ব তো নজরদারি করছে না! শুধু বাংলাদেশের ওপর কেন নজরদারি সারা বিশ্বের। আমরা কত ছোট হয়ে গেছি বিশ্বের সামনে আজকে।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘এই দেশটা গর্বিত দেশ, যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছি। যেখানে গণতন্ত্র বহমান ছিল। আমাদের তিন–চারটা নির্বাচন যেগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার হয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশ্বের জন্য একটা উদাহরণ ছিল। সারা বিশ্বে একটা উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আজকে বাংলাদেশকে তারা যে জায়গায় নামিয়ে নিয়ে এসেছে, এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কিছুই হতে পারে না।’
বিএনপির এই নেতার ভাষ্য, গুমের রাজনীতি, খুনের রাজনীতি, মিথ্যাচারের রাজনীতি, মিথ্যা মামলার রাজনীতি, গায়েবি মামলার রাজনীতির মাধ্যমে ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে ক্ষমতায় যাওয়া এবং থাকার আকাঙ্ক্ষা তাদের যদি এখনো অব্যাহত থাকে, তারা বড় ভুল করছে। বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করেছে। রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে তাদের নির্ভরশীলতা গিয়েছে কোথায়? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর। তাদের নির্ভরশীলতা কোথায়? সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর। তাদের নির্ভরশীলতা কোথায়, তাদের দলীয়করণের মাধ্যমে কিছু প্রতিষ্ঠান, তাদের ব্যবহার করে তারা আজকে রাষ্ট্র চালাচ্ছে এবং জনগণের ভোট চুরি করে জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতা দখল করছে। সেই জায়গায় চলে গেছে তাদের নির্ভরশীলতা।
ক্ষমতাসীন দলের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মনে রাখবেন, জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কোনো শক্তি বাংলাদেশে দাঁড়াতে পারেনি। বিশ্বের কোথাও দাঁড়াতে পারেনি। আজকে বাংলাদেশের মানুষ অবস্থান নিয়েছে, সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ফ্যাসিবাদকে বিদায় করার জন্য। বিএনপির নেতা–কর্মীরা জীবনের বিনিময়ে রাস্তায় নেমেছেন। বিএনপির নেতা–কর্মীরা জ্বলে–পুড়ে খাটি সোনায় পরিণত হয়েছেন। বিএনপির নেতা–কর্মীরা যাঁরা জীবন দিয়ে হলেও বাংলাদেশকে মুক্ত করতে রাস্তায় নেমেছেন। এই শক্তির বিরুদ্ধে কোনো অপশক্তির দাড়ানোর সুযোগ নেই। জয় আমাদের নিশ্চয়ই হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হাসান জীবন প্রমুখ।