সারাদেশ আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল

Daily Nayadiganta

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সারাদেশ আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। সরকারি হিসেবেই ইতোমধ্যে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত (২৩ জুন) মারা গেছেন ১৫৪৫ জন। গত ২ সপ্তাহ যাবত প্রতিদিনই গড়ে মারা যাচ্ছেন ৪১ জন মানুষ। অথচ ১ম দেড় মাসে প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিলো ১০ জনের নিচে। সরকারের যথাযথ পরিকল্পনা না থাকায় দিন দিন বাড়ছে লাশের সারি। একইভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। প্রায় প্রতিদিনই শনাক্ত হচ্ছেন সাড়ে ৩ হাজারের মতো মানুষ। যদিও একদিনে পরীক্ষা করা হচ্ছে মাত্র ১৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৭ হাজার নমুনা। যদি পরীক্ষার সংখ্যা বাড়তো তবে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো আক্রান্তের সংখ্যা, সেটি সহজেই অনুমান করা যায়।

তিনি বলেন, করোনায় এ পর্যন্ত ফ্রন্টলাইনার্স (চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মী) বৈশ্বিক হারে আক্রান্ত হয়েছে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। কর্তব্যের আহ্বানে এ পর্যন্ত চিকিৎসক জীবন দিয়েছেন ৫১ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯৩ জন, নার্স এবং টেকনোলজিস্ট ৪ হাজারেরও বেশি আক্রান্ত। দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে মোট পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজারের অধিক। জীবন উৎসর্গ করেছেন ৩২ পুলিশ সদস্য। মাঠের যোদ্ধা সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন ৪২৪ জন (২৩ জুন পর্যন্ত)। আর করোনায় প্রাণ দিয়েছেন ৭ অকুতোভয় সৈনিক। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে ব্যাংক কর্মকর্তা মারা গেছেন কমপক্ষে ৬ জন। এছাড়া দেশের খ্যাতনামা শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ গুনীজন হারানোর অপূরনীয় ক্ষতি কোনোদিন কাটাতে পারবে না দেশ। এখনও করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাজারো নাগরিক। জানি না কতোজন ফিরবেন আমাদের মাঝে? আবার করোনার প্রকৃত তথ্যও গুম করছে গুম-খুনের এই সরকার। জনমনে ধারণা গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে যে মৃত ও আক্রান্তের সঠিক চিত্র লুকিয়ে রাখছে ক্ষমতাসীনরা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার তাদের বিভিন্ন গোঁজামিলের তথ্য গোপন করতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। গত ৮ মার্চ রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের খবর দেওয়া হয়। এরপর কয়েকদিন সংবাদ সম্মেলন করা হলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে পরে তা সংবাদ বুলেটিনে রূপ নেয়। এখন শুধু করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুসহ কিছু তথ্য দেওয়া হয়, কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো সুযোগ নেই। এতেও স্পষ্ট, সরকার মনগড়া তথ্য প্রকাশ করেই শুধু পার পেতে চাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, সরকার হিসাবের সঙ্গে আক্রান্ত ও মৃত্যুর যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। ঢাকা শহরের কিছু কবর স্থানে লাশ দাফনের চিত্র এই বছরের চিত্র ও বিগত বছরের চিত্র তুলনা করলেই বুঝতে পারবেন। রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে ২০১৯ সালের মে মাসে ৭৭৭টি। আর এ বছর মে মাসে দাফন করা হয়েছে ১০৩৪টি। আর চলতি জুনের প্রথম ১৫ দিনে লাশ দাফন করা হয়েছে ৫১৫টি। এর অধিকাংশ করোনা আক্রান্ত রোগীদের লাশ। আজিমপুর কবরস্থানে লাশ দাফনের জায়গাও কমে যাচ্ছে।

ফখরুল বলেন, ত্রাণ চুরির যে চিত্র দেশবাসী গণমাধ্যমে দেখেছে তাতে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায় যে কারো কিন্তুু আওয়ামী লীগারদের যেন কিছুতেই চরিত্রের পরিবর্তন হয়নি। তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান আক্ষেপ করে বলেছিলেন ”সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেলাম চোরের খনি”।

তিনি বলেন, সরকারপন্থী কতিপয় দলবাজ চিকিৎসকের দায়িত্বহীন বক্তব্য ও ভুলবার্তা বর্তমান বিপর্যয়কর পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছেন সাধারণ জনগণসহ অনেক বিশেষজ্ঞরা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারাদেশে করোনা চিকিৎসার করুন দশা ফুটে উঠেছে গণমাধ্যমে। খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী রাজধানী ছাড়া করোনা আক্রান্ত কিডনী রোগীর ডায়ালাইসিসের কোন ব্যবস্থা নেই। ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলায় আইসিইউ বেড আছে মাত্র ৭টি। কতজন রোগী এই মুহুর্তে আইসিইউ সেবা নিচ্ছেন তার তথ্য জনসম্মুখে দিচ্ছে না। অধিদপ্তর বলছে সারাদেশে করোনার জন্য নির্ধারিত ১১০টি হাসপাতালে আইসিইউ বেড আছে ৩৩৯টি যদিও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগ বাদেই কমপক্ষে ৭২০টি আইসিইউ বেড থাকা জরুরী। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ৪৯ টি জেলায় করোনার জন্য আইসিইউ সাপোর্ট নেই। দেশে আইসিইউ নিয়ে চলছে নানা কেচ্ছা কাহিনী।