today-is-a-good-day
Friday, April 19, 2024

ফরহাদ মজহার – শাহবাগী বন্ধুরা, দয়া করে ভেবে দেখবেন।   কার্টুনিস্ট…

March 4, 2021 Taken from his Facebook account

 

শাহবাগী বন্ধুরা, দয়া করে ভেবে দেখবেন।

কার্টুনিস্ট কিশোর জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়েছেন। পু্লিশী হেফাজতে মুশতাক আহমদের মৃত্যু এবং কিশোরকে কারাগারে নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঢাকা শহরের আন্দোলনের এটা নগদ ফল। এটা ভালো।

কিন্তু শহর কেন্দ্রিক মানবাধিকার আন্দোলনের স্ববিরোধিতা এবং সীমাবদ্ধতা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। এই স্ববিরোধিতা বাংলাদেশের সেকুলার চিন্তার পরিমণ্ডল এবং ‘বিচার’ সম্পর্কে শাহবাগী চিন্তার জের। প্রাক্তন শাহবাগীদের অনেকের পোস্ট দেখছি এখন। তাঁরা দাবি করছেন তাঁরা শাহবাগে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ‘বিচার’ সমর্থন করেছেন। শাহবাগ সমর্থনের পেছনে তারা এই বাহানা খাড়া করেন। কিন্তু শাহবাগ ‘বিচার’ চায় নি, বিচার প্রক্রিয়াকে তার নিজের গতিতে চলতেও দেয় নি। বিদ্যমান আইনে কাদের মোল্লার রায় শাহবাগ মেনে নেয় নি। তাকে ‘ফাঁসি’ দেবার দাবি তুলেছে। আইন বদলিয়ে তা কার্যকর করাও হয়েছে।

মোমবাতি জ্বালিয়ে শাহবাগীরা অভিযুক্তদের দিনরাত ‘ফাঁসী’ চেয়েছে। শাহবাগ ছিল বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের চূড়ান্ত একটি রূপ, যা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আরও দৃঢ় ও মজবুত করেছে । যার শিকার এখন স্বয়ং শাহবাগীরা।

আজ ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের বিচার ও নির্বাহী ক্ষমতার যে রূপ, তা শাহবাগীদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পোক্ত হয়েছে। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার যা কিছু অবশিষ্ট ছিল, তা বিনাশের জন্য শাহবাগীরাই দায়ী। মুশতাক আহমদের মৃত্যু, কিম্বা কিশোরের ওপর অকথ্য নির্যাতনের বিরুদ্ধে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা এখনও সেকুলার বনাম নন-সেকুলার বাইনারি থেকে মুক্ত নন। মুশতাক যদি শাহবাগী না হোত তাহলে তার মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য শাহবাগীরা রাস্তায় নামত কিনা সন্দেহ।
ধরুন একজন ইসলামপন্থীর মত প্রকাশের স্বাধীনতা সেকুলার শাহবাগীরা কতোটা স্বীকার করে?

মানিবাধিকারের ক্ষেত্রেও আমরা অসমতা দেখি। আমরা সেকুলারদের মানবাধিকার নিয়ে যতোটা সোচ্চার, একজন ইসলামপন্থীর মানবাধিকার নিয়ে ততোটাই নীরব। ইসলামপন্থীদেরও চিন্তা, বিবেক এবং মত আছে এবং তা প্রকাশের অধিকারও আছে। শহুরে সেকুলার মানবাধিকারবাদীদের স্ববিরোধিতা কাটিয়ে উঠতে হবে।

একটা কথা আগেও বলেছি, আবারও বলি। ‘শাহবাগ’ সারা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে ফ্যাসিবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছে। তাই শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলন করে সাধারণ জনগণের সমর্থন আদায় করা কঠিন।

অথচ ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়তে হলে জনগণের সমর্থন আদায়ই আসল। নিদেন পক্ষে এখনই দরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট বাতিলের পক্ষে বিপুল গণসমর্থন গড়ে তোলা। যদি শুধু শাহবাগীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আমরা চাই, আর অন্যদের মত প্রকাশের অধিকার অস্বীকার করি, বা যাদের মত আমরা সমর্থন করি না তার অধিকারের প্রতি মুখ ফিরিয়ে থাকি– তাহলে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা অর্জনের ন্যূনতম লিবারেল অধিকার আদায় অসম্ভব হবে।