Minar Rashid
যতক্ষণ খাড়া আছেন ততক্ষণই দাম আছে
‘এক সেকেন্ডের নাই ভরসা’ গানটি গাইতে গাইতেই মঞ্চে ঢলে পড়েছিলেন শিল্পী ফিরোজ সাঁই । গানের এই কথাটি শিল্পীর জীবনে এমন করুণভাবে ফলে যাবে এই ঘটনার এক সেকেন্ড আগেও তা কেউ ভাবতে পারেন নি।
স্পিরিচুয়েল ওয়ার্ল্ড বা আত্মার জগত এ রকম দুয়েকটি ঘটনার মাধ্যমে বস্তু জগতে কিছু সংকেত বা ম্যাসেজ পাঠাতে চেষ্টা করে । যাদের জন্যে এই সংকেতটি পাঠানো হয় তারা সেই সংকেতটি ধরতে পারেন না।
অাত্মা বা রুহের জগতের এই ধরনের নির্মম কৌতুকের সর্বশেষ শিকার হয়েছেন শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী। জীবনের শেষ মুহুর্তে উপস্থিত হয়ে সঙ্গীত পিয়াসু দর্শক শ্রোতাদেরকে তিনি সঙ্গীতের কোন অজানা কথা শোনাতে চাননি।
তার পরিবর্তে একটি রাজনৈতিক ছবক দিতে চেয়েছিলেন । পরম রহস্যময় স্রষ্টা কেন যেন তাঁকে সেই কথাটি বলার সুযোগ দিলেন না। এখানেও জামায়াত লবিং শুরু করে দিলো কি না?
কাইয়ূম চৌধুরীর মৃত্যুকে ঘিরে আরেকটি বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে গেছে । যাদের সাথে জীবনভর খেলেছেন সেই সঙ্গী সাথীরা তার এই নিদানের কালেও খেলাটি ( গানের আসরটি) বন্ধ করেন নি। অথচ কয়েকদিন আগে অষ্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ফিলিপ হিউজের মৃত্যুতে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ ভারতের সাথে অনুষ্ঠেয় টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটি স্থগিত করে দিয়েছিল।
এই সব দেশের মানুষ খেলা কিংবা বিনোদনকে নেহায়েত খেলা বা বিনোদনের জায়গাটিতেই রেখেছে। আর আমাদের দেশে এর প্রবক্তারা তাকে ধর্মের আসনে বসিয়ে দিয়েছে । জলজ্যান্ত একজন মানুষ সোজা খাড়া থেকে পড়ে মারা গেলেন – তারপরেও আসরের ইমাম সাব তার নিয়্যাতটি ছাড়লেন না ! এ আচার ধর্মীয় আচারের চেয়েও কঠিন হয়ে পড়েছে !
কাইয়ূম চৌধুরীরা যে মানব ধর্মের সৃষ্টি করে গেছেন সেই মানব ধর্মই তার অাত্মার সাথে এমন অমানবিক আচরনটি করেছে। এদের তথাকথিত মানব ধর্মে একজন মানুষের স্পিরিট বা আত্মার কোন দাম নেই। যতক্ষণ খাড়া আছেন ততক্ষণ দাম আছে -পইড়া গেলেই শেষ।
এই গোষ্ঠীর আরেক ইমাম দেশবাসীকে ভরসা দিয়েছেন যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চুমুর ঘটনায় ভীত হওয়ার কিছু নেই (১ ডিসেম্বর, দৈনিক যুগান্তর) । বিষয়টি নিয়ে জাতির সঙ্গে খানেকটা মশকরা করেছেন । উদ্বিগ্ন জাতিকে কপট ভরসা দিলেও তার আশি বছরের মনটা জানা কারনেই দারুন উৎফুল্ল।
তিনি মনে করেন এর মাধ্যমে মৌলবাদ উথ্থানের সম্ভাবনা এই উপমহাদেশ থেকে সম্পূর্ণ রূপে তিরোহিত হয়ে পড়েছে। অথচ যে জমিনে এই গণ চুমুর ঘটনা ঘটেছে স্বয়ং সেই দেশেই একটি মৌলবাদী দল ক্ষমতায় এসে গেছে ।
কাজেই এই অথর্ব বৃদ্ধদের ঠোঁটে আর দিলে সবুজের তাড়নাটি থাকলেও মগজে থাকে অন্য খেয়াল।
বলা যায় এই ইমামদের প্রচেষ্টা অনেকটাই সফল হয়েছে ।
‘ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়াবার ছোবলে চরিত্র হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা’ উক্ত শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কালের কন্ঠ ।
নয়াদিগন্তের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেেছ যে শতকরা সত্তর ভাগ কিশোর পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে।
কোন সন্দেহ নেই এই সবই এই সব ইমামসাব বা গুরুদেবদের প্রচেষ্টার ফসল। এরা (কুসংস্কার বা মৌলবাদ উৎপাটনের নামে) আগাছা বাছাই করতে গিয়ে আমাদের বোধ বিশ্বাসের মূল গাছগুলিই কেটে ফেলেছে।
কাজেই মিষ্টার আজাজিল কিংবা চৌধুরীদের কাজটি এখন খুবই সহজ হয়ে গেছে। এখন টেনশন হলো যাদের মাথার নিচে গলাটি এখনও আস্ত আছে এবং ঐশীর মতো কোন সন্তান রয়েছে ।
চায়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে কখন গলাটি কেটে নেয়, তার কোন গ্যারান্টি নেই।’কাজেই চুমুতে ভয় নেই, ভয় শুধু নিজের গলাটি নিয়ে।