Three strings in BNP

বিএনপিতে তিন ধারাশেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে রাজি সিনিয়র নেতাদের একাংশ

মাহমুদ আজহার

BNP_53ecad47ce4ee.png

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে বিএনপিতে তিনটি মত রয়েছে। দলের বড় একটি অংশ মনে করছে, ২০১৬ বা ২০১৭ সালে যদি সরকার নির্বাচন দেয় তবে শেখ হাসিনার অধীনেও তাতে অংশ নিতে আপত্তি নেই। এতে সরকার গঠন করতে না পারলেও শক্তিশালী বিরোধী দলে থাকতে পারবে বলে মনে করে এ অংশটি। আরেক পক্ষ বলছে, আর যাই হোক শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। প্রয়োজনে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে তারা। এ জন্য যতদিন প্রয়োজন ততদিনই অপেক্ষা করবে। নইলে আন্দোলনের মাধ্যমেই নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে সে সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় এ পক্ষটি। এ ছাড়া দলের ভিতরে-বাইরে সংস্কারপন্থি একটি অংশ মনে করছে, দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সিনিয়র নেতাদের ‘সাজা’ হয়ে যেতে পারে। এ পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘শহীদ জিয়ার’ আদর্শে নতুন নেতৃত্বের অধীনে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে যে কোনো সময় নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত তারা। তিন পক্ষের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, বিএনপির ব্যবসায়ী ও বিত্তবান শ্রেণির নেতারা শেখ হাসিনার অধীনেও নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের মতে, হাসিনার অধীনে নির্বাচনে গেলে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। এ নিয়ে তারা নানাভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বোঝানোর চেষ্টাও চালাচ্ছেন। তাদের যুক্তি হলো- এভাবে বিএনপির টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। তবে বিএনপি প্রধানের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো সংকেত এখনো তারা পাননি। এ পক্ষটির সরকারের উপরমহলের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে বিএনপি নির্বাচনে গেলে নেতাদের ওপর গ্রেফতার, হামলা-মামলার খড়গ কমে যাবে বলে তারা মনে করেন। এ ছাড়া জিয়া পরিবারকে মামলা থেকে বের করে নিয়ে আসার পক্ষেও তারা সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করে যাবেন। সমঝোতা হলে ২০১৬ বা ২০১৭ সালে নির্বাচন হতে পারে বলে সূত্র জানায়। বিএনপির এ পক্ষের এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে বিএনপি যে অবস্থায় চলছে তাতে শক্তিশালী বিরোধী দলে থাকাও ভালো। শতাধিক এমপি নির্বাচিত হয়ে এলে স্বাভাবিকভাবেই দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে। সংসদের ভিতরে বাইরে বিএনপি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে। দ্বিতীয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলছেন, তাদের বোঝা উচিত, সরকারের পক্ষ থেকে একটি ফাঁদ পাতা হচ্ছে। দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা সেই ফাঁদে পা রাখতে যাচ্ছেন। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তারা নিজেদের ধনসম্পদ তো রক্ষা করতে পারবেন না, বিপরীতে তাদের ওপরও সরকারের আরও বেশি স্টিমরোলার নেমে আসতে পারে। কারণ, বিজয়ের শতভাগ নিশ্চয়তা নিয়েই শেখ হাসিনা নির্বাচন দেবেন। আরেকবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বিএনপির অস্তিত্ব যেটুকুও আছে তাও টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। আজকের প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাওয়া হবে বিএনপির আরেকটি রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত। তাদের মতে, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করতে গিয়ে যে কয়েকশ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে- এর কী হবে। গুম, অপহরণ, জেল, জুলুমসহ নানা খড়গও নেমে এসেছে অসংখ্য মানুষের ওপর। যদি হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে যেতে হয়, তাহলে এত জুলুম- নির্যাতনের শিকার কেন হতে হলো। একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমেই এ ‘অবৈধ’ সরকারকে হটিয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠায় যতদিন প্রয়োজন, অপেক্ষা করতে হবে। এ পক্ষের বিএনপির মধ্যসারির এক নেতা বলেন, ‘যে দাবি নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ ছিলেন, লাখ লাখ নেতা-কর্মী নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন- এখন সেখান থেকে চলে আসলে তাদের ত্যাগের প্রতি যেমন কোনো মূল্য দেওয়া হবে না তেমনি দলের অস্তিত্বও থাকবে না। তা ছাড়া দেশের জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্র“তিও ভঙ্গ করা হবে। এটা কোনোভাবেই সম্ভব হতে পারে না।’ অন্যদিকে দলের ভিতরে-বাইরে সংস্কারপন্থিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা বিএনপিতে নানাভাবে কোণঠাসা। বাইরে থাকা নেতাদেরও দলে নেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন জিয়ার আদর্শের রাজনীতি করে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি তারা আর কখনো হননি। তাদের মতে, বিএনপিতে এখন আর জিয়ার আদর্শ নেই। দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির রাজনীতির ভিড়ে জিয়ার আদর্শ ছিটকে পড়েছে। যারা কিছুটা জিয়ার আদর্শে আছেন তারাও কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এখন বিএনপিতে যারা জিয়ার আদর্শের রাজনীতি করতে চান, তাদের নিয়ে বাইরে থাকা সংস্কারপন্থিদের ওই অংশটি আলাদা একটি প্লাটফর্ম গড়ে তুলতে চান। এ জন্য প্রয়োজনে জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী অন্য দলের নেতাদেরও সম্পৃক্ত করার কথা বলেন তারা। বিএনপির সাবেক কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাও এদের সঙ্গে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে। অবশ্য এই অংশের সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘মাইনাস’ করে এ অংশটি নতুন প্লাটফর্ম গড়ে তুলতে পারলে সরকারের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা পেতে পারেন বলে মনে করেন তারা। এতে বিরোধী দলে থাকলেও বঞ্চিত হওয়ার চেয়ে কদর বাড়বে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি নিয়ে বিএনপি আন্দোলন করছে। এ দাবিতে এখনো বিএনপি অটল। এ দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপি জোটের ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার নেমে এসেছে। তারপরও আমরা এ দাবির পক্ষেই আছি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া বিএনপি এখন আর কিছু ভাবছে না।’ ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে হবে। আমরা একটি নির্বাচন চাই। এটা কীভাবে হবে, কার অধীনে হবে- তা নিয়ে সরকারের উচিত সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসা। এতেই একটি সমাধান বেরিয়ে আসবে। ’

Source: bd-pratidin