নারীস্থানের অসহায় নারী
বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন ছিল একটি আদর্শ নারীস্তান প্রতিষ্ঠা করা । যতদূর মনে পড়ে, তিনি ‘নারীস্থান’ শব্দটি না লিখে সচেতনভাবেই ‘নারীস্তান’ শব্দটি লিখেছিলেন। এদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের বোধ বিশ্বাসকে টিটকারি মেরে যারা ‘বাংলাস্তান’ বলে বিমলানন্দ পান, তারা এই শব্দ চয়নটি লক্ষ করলে একটু ভালো হয়।
অর্থাৎ নিজের সমাজের অবহেলিত নারীদেরকে কোন নারীস্থানে নিয়ে যেতে চান নি, বরং নিজ নিজ নারীস্তানে রেখেই তাদের মুক্তির উপায় খুঁজেছিলেন। তাঁর সেই নারীস্তান থেকে সুলতানা কামাল, তারানা হালিম ও খুশী কবিরদের তৈরি করা নারীস্থান স্পষ্টতই আলাদা।
এদের লালিত স্বপ্নের নারীস্থানটিতে আজ প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী , স্পীকার ও সংসদের উপনেতা- এরা সকলেই নারী। কিছুদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও একই গোত্রের ও একই কিছিমের নারী ছিলেন। সারা দুনিয়ায় এমন মহিমান্বিত নারীস্থানের নমুনা পৃথিবীর ‘ আর কোথাও নেই।
সেই নারীস্থানেরই এক অসহায় নারীর নাম হাসিনা আহমেদ। একই নামের ও একই জেন্ডারের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের কাছে একটি স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করেছেন, ” আমি আশা করি, প্রধানমন্ত্রী আমার অনুভূতি বুঝবেন। আমার স্বামী সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে বের করবেন। “
কয়েক বছর আগে গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রীও সম ধরনের আশা পোষণ করেছিলেন। নারীস্থানের প্রধানমন্ত্রী সেই নারীকেও যথারীতি সাক্ষাৎ দিয়েছিলেন। কান্না বিজড়িত কন্ঠে সমবেদনা জানিয়েছিলেন। আপন বোনের মত অপার মমতায় জড়িয়ে ধরেছিলেন। তার সেই সহমর্মিতা শুধু ইলিয়াস আলীর স্ত্রী কন্যাই নয়- পুরো দেশবাসীই মুগ্ধ নয়নে অবলোকন করেছে। এমন একজন দয়ার্দ্র প্রধানমন্ত্রী পেয়ে সেদিন দেশবাসীর বুকটি গড়ে সোয়া ইঞ্চি ফুলে গিয়েছিল।
ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তখন শুকনো ও ভেজা সকল সহানুভূতিই পেয়েছিলেন- শুধুমাত্র নিজের স্বামীকে ফিরে পান নি। হাসিনা আহমেদ একই পথ ধরে স্বামীকে ফিরে পাবেন – পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে সেটাকে অনেকেই দুরাশা মনে করছেন।
পুরনো অনেক অংকই আজ কেন যেন মিলতে চায় না। মেয়েরা তুলনামূলকভাবে অধিকতর নরম মনের অধিকারী হয়ে থাকে বলে জানতাম । ভালো লাগতো এটা ভেবে যে পৃথিবীতে স্বৈর শাসকদের প্রায় সবাই পুরুষ । মায়ের জাত থেকে কোন হিটলার জন্ম নেয় নি। গ্রহবাসীর সেই ধারনা আজ বদলে যেতে বসেছে। এক জন নারী সরকার প্রধান থাকা অবস্থায় সুলতানা কামালদের নারীস্থানটিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নারী বিধবা হয়েছে। এটা নিয়ে নারীবাদীদের কোন মনোবেদনা নেই। অনুশোচনা নেই। তারানা হালিমদের মানবতা আজ খন্ডিত হয়ে গেছে। পেট্রোল বোমায় আহতদের দেখে কান্না আসে কিন্তু র্যাব বা পুলিশের গুলিতে নিহত বা আহতদের দেখে গ্লিসারিন লাগালেও কান্না আসে না।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শুধু একজন নারীই নন – তিনি একজন সংস্কৃতিমনা মানুষও বটে । প্রতিদিন সকালে উঠে তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনেন। এর আগে ফজরের নামাজ এবং তারও আগে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন। বিবেকের এতগুলি ফিল্টার ব্যবহার করলেও আশ্চর্যভাবে কোন ফিল্টারেই এই ভাবনাটি আটকায় না। মন ও মননের কোথাও এই ধাক্কাটি লাগে না। বিনা কারনে বা বিনা দোষে এক জন নাগরিকের হত্যা বা গুমের দায় সরকার প্রধান কখনই এড়াতে পারেন না।
নারীস্থানের এই নারীরা আজ সত্যিই অসহায়। অথচ তাদের স্বামীরা প্রতিরোধ সৃষ্টি না করলে উত্তর কোরিয়া বা মিয়ানমারের মত এদেশে এক দলীয় শাসন চেপে বসবে। সবাই নিজের স্বামীকে নিয়ে টেনশনে পড়ে গেলে এই নারীস্থানের কোন হাসিনাদের স্বামীরা এই ভয়ংকর কাজটি করবে ? কাজেই অপরাপর সকল স্বামীদের একটু ভাবনা চিন্তার প্রয়োজন রয়েছে বৈকি।