বৃষ্টির কান্না এবং এক বৃষ্টিভেজা প্রফেসর
“আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে /মনে পড়লো তোমায়/ অশ্রু ভেজা দুটি চোখ/ তুমি ব্যাথার কাজল মেখে/ লুকিয়েছিলে ঐ মুখ…”
নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর কন্ঠের এই …
গানটি শুনলে শুকনো হৃদয়ের মানুষগুলিও কেমন যেন রোমান্টিক বা নস্টালজিক হয়ে পড়ে । নিজের মধ্যে এই বিষয়গুলির খানেকটা ঘাটতি আছে বলেই এগুলি নিয়ে বিশেষ কিছু লেখার সাহস হয় না।
কাজেই শিরোনামের এই বৃষ্টির কান্না তেমন কোন রোমান্টিক ব্যাপার স্যাপার নয়। এটি রূঢ় বাস্তব জগতের
এক বৃষ্টির কান্না। এই বৃষ্টি হলো ছাত্রলীগের কলেজ পর্যায়ের একজন নেত্রী। প্রেম করেছিল একই কলেজের অথবা একই থানার জনৈক ছাত্রলীগ সভাপতির সাথে। প্রণয়ের ফসল হিসাবে এক সময় পেটে বাচ্চা এসে পড়ে। তার পড়েই সটকে পড়ে প্রেমিক পুরুষটি।
এমতাবস্থায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে কারো সহানুভূতি বা সাহায্য পান নি এই বৃষ্টি । পেয়েছেন নষ্টা মেয়ের অপবাদ। কারো মন গলে নি সেই বৃষ্টির কান্নায়। শেষ মেষ নিজ হাতে নিজের এই অভিশপ্ত জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন । আমরাও এই বৃষ্টির কথা ভুলে গিয়েছি। তাকে নিয়ে দেশের কোন ইমদাদুল হক মিলন ‘ নূর জাহান’ এর মত কোন গল্প বা নাটক লিখেন নি। এই বৃষ্টির স্থান হয় নি কোন আনিসুল হকের কোন গদ্য বা পদ্য কার্টুনেও।
সেদিন এক বৃষ্টিকে আমরা রক্ষা করতে পারি নি। এখন স্কুলের পাঠ্য বইয়ে আরো অনেক বৃষ্টি বানানোর মহান উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এবার শেখানো হচ্ছে, উভয়ের সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলা অপরাধের কিছু নয়।
এদের কথামত এই বৃষ্টিরা এগিয়ে গেলে তখন দরকারের সময় আবার পেছনে কেউ থাকে না। এতে লাভ হয় সমাজের সকল লম্পটদের, ক্ষতি হয় শুধু বোকা এই বৃষ্টিদের।
তথাকথিত নারীবাদীরাও এই দুর্বল নারীটির পক্ষে দাঁড়ান নি। অধিকন্তু স্থানীয় এমপি সহ সবাই দাঁড়িয়েছে ঐ সবল পুরুষটির পক্ষে। সেই পুরুষটির নাকি আরো বড় প্রমোশন হয়েছে, তিনি আরো বড় নেতা হয়েছেন । পাপের চিহ্ন লেগেছে এই বৃষ্টির শরীরে, লম্পটের গায়ে তা লাগে নি ।
সমাজটিকে বর্তমান পর্যায়ে ঠেলে
দিতে যাদের বুদ্ধিবৃত্তিক অবদান সবচেয়ে বেশি তাদের মধ্যে প্রফেসর জাফর ইকবাল অন্যতম। পুরো মেকানিজমটি পানির মত স্পষ্ট হলেও উপরের এই বৃষ্টির কান্না অন্যান্যদের মতো তাকেও স্পর্শ করে নি। এই বৃষ্টির কান্না নিয়ে তিনিও দুকলম লিখেন নি।
সেই ছাত্রলীগের কারণেই মন শান্ত করতে তিনি আজ বৃষ্টিতে ভিজেছেন বলে খবর বেরিয়েছে । লজ্জায় আর ক্ষোভে নাকি গলায় দড়ি দিয়ে মরতেও চেয়েছেন। জানি না, এই বৃষ্টি তার অশান্ত মনটিকে কতটুকু শান্ত করতে পেরেছে? কথায় কথায় ‘অসাধারণ’ বিশেষণ বসিয়ে যে তারুণ্যের জয়গান তিনি এতদিন গেয়ে এসেছেন, সেই তারুণ্যের কারণেই আজ তাকে এমনভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। এতদিনে তিনি টের পেয়েছেন যে মহান জয় বাংলা শ্লোগানটি কী কী কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই উপলব্ধির পেছনে আরো বড় কারণটি হলো – ছাত্রলীগের হাতে আজ যে কয়জন প্রফেসর নিগৃহীত হয়েছেন তার মধ্যে একজন ছিলেন তার নিজের স্ত্রী।
বৃষ্টি ভেজা প্রফেসরের এই ছবিটি দেখে মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামক সেই মেয়েটির আত্মা তার পাশে বসে অট্টহাসি হাসছে আর ইশারায় ডাকছে ” এই প্রফেসর, এতদিন বৃষ্টিভেজা নায়িকা দেখেছি। এখন দেখছি বৃষ্টিভেজা প্রফেসর। হা-হা-হা….। তবে ভয় পেয়ো না, এই দিকে আসো। আসো না। এমনভাবে মন খারাপ করে বসে আছো কেন? আসো না কাছে, তোমাকে আরেকটু ভিজিয়ে দেই । তখন আগামীকাল আরো চমৎকার একটা লেখা লিখতে পারবে। লিখবে, বৃষ্টি নামক ‘অসাধারণ’ একটি মেয়ের সাথে তোমার দেখা হয়েছিল।… “