Shaheed Noor Hossain Day being observed
Shaheed Noor Hossain Day, commemorating the martyrdom of a young pro-democracy activist during the movement against autocractic Ershad regime in the late 1980s, is being observed in the country on Saturday.
Different socio-cultural and professional organisations have chalked out elaborate programmes to observe the day in a befitting manner, reports UNB.
Leaders and activists of different political parties, including ruling Bangladesh Awami League and opposition Bangladesh Nationalist Party, their associate bodies, paid tributes to the martyr by placing wreaths at Noor Hossain Square, in the morning.
Capital’s ‘Zero Point’ in Gulistan area was renamed as ‘Noor Hossain Chattar’ (square) after the young man was gunned down in the area by police on 10 November 1987.
President Abdul Hamid and prime minister Sheikh Hasina issued separate messages on the eve of the day.
President Abdul Hamid, in his message, said 10 November is an important day in the history of movement for democracy in the country.
In her message, prime minister Sheikh Hasina said the country’s democracy was restored through the sacrifice of the lives of many. She prayed for eternal peace of the departed souls of all martyrs, including Noor Hossain, and conveyed deep sympathy to the bereaved family members.
On 10 November 1987 Noor Hossain, an activist of Awami Juba League, was killed in police firing during staging protest against the autocratic rule of then lieutenant general HM Ershad at the capital’s zero point, painting the historic slogan ‘Gonotantra Mukti Pak, Swairachar Nipat Jak’ (Let democracy be freed, down with autocracy) on his back and chest.
নূর হোসেনের অপমান এভাবে মেনে নেব!
এবারের নূর হোসেন দিবসটিকে একটি প্রহসন দিবসে পরিণত করার কোনো চেষ্টাই বাকি রাখেনি পতিত স্বৈরশাসক এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। তারা নূর হোসেনকে একজন অল্পশিক্ষিত, মূর্খ ও দরিদ্র টাইপের লোক বলেছে। দাবি করেছে, তাঁকে বলির পাঁঠা করা হয়েছিল। আর সেই এরশাদকে তারা বলেছে, গণতন্ত্রের মানসপুত্র।
তবে নূর হোসেনকে তাদের মুখে মূর্খ বলে উপহাস করাটা যতটা না পরিহাসমূলক, তার থেকে বেশি পরিহাসের হলো, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তরফে তাদের ‘‘খামোশ’ বলতে না পারার অপারগতা।
শামসুর রাহমানের অমর কবিতার তিন দশক পুরো না হতেই স্পর্ধিত জাতীয় পার্টি ১০ নভেম্বর তাদের দাবি অনুযায়ী ‘গণতন্ত্র দিবসে’ কতিপয় বিদ্রূপাত্মক নির্দয় শব্দ প্রসব করেছে।
শামসুর রাহমান লিখেছিলেন:
‘উদোম শরীরে নেমে আসে রাজপথে, বুকে-পিঠে
রৌদ্রের অক্ষরে লেখা অনন্য স্লোগান,
বীরের মুদ্রায় হাঁটে মিছিলের পুরোভাগে এবং হঠাৎ
শহরে টহলদার ঝাঁক ঝাঁক বন্দুকের সীসা
নূর হোসেনের বুক নয় বাংলাদেশের হৃদয়
ফুটো করে দেয়; বাংলাদেশ
বনপোড়া হরিণীর মতো আর্তনাদ করে, তার
বুক থেকে অবিরল রক্ত ঝরতে থাকে, ঝরতে থাকে।’
নূর হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্ণনায়, ‘বীরপ্রসূ বাংলার বীর সন্তান। জীবন্ত গণতন্ত্রপ্রেমিক পোস্টার।’
বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম শীর্ষক বইয়ে (আগামী প্রকাশনী, ১৯৯৩) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা লিখেছেন, আমরা তাতে বিশ্বস্ত জীবন্ত কবিতা খুঁজে পাই।
প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন,
‘ময়েজ উদ্দিন, তিতাস, রমিজ, বসুনিয়া, চুন্নু এমনি হাজারো আত্মাহুতির প্রয়োজন হলো গণতন্ত্রের জন্য, অধিকার লড়াইয়ে। উদাম নূর হোসেন যেদিন বুকে-পিঠে “স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক” লিখে জীবন্ত পোস্টার আর সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ হয়ে আমাকে সালাম করে বলল, “আপা, আমাকে দোয়া করবেন” ভীষণভাবে আঁতকে উঠেছিলাম আমি। আতঙ্কে চিৎকার করে বলেছিলাম, “শার্ট পরো এই ছেলে, শার্ট পরো।” বারণ মানেনি সেদিন বীরপ্রসূ বাংলার বীর সন্তান নূর হোসেন। এগিয়ে গিয়েছিল সামনের দিকে। তার এ অগ্রযাত্রা ছিল হয়তো গণতন্ত্রের দিকে। কিন্তু সামরিক স্বৈরাচারের বন্দুকের গর্জনে ঢলে পড়েছিল নূর হোসেন। ঘাতক বুলেট নিথর, নিস্পন্দ, স্তব্ধ করে দিয়েছিল সেই সচল প্রতিবাদকে। সেই জীবন্ত গণতন্ত্র প্রেমিক পোস্টারকে। ডা. মিলন, শিশুকে স্তনদানরত গৃহবধূ হাসিনা বেগম। আরও কত নাম বলব! মৃত্যুর ফিরিস্তি সৃষ্টি করতে করতে এখন ক্লান্ত আমি। আর পারি না। অ্যাতো মৃত্যু, অ্যাতো রক্ত!’ (পৃ.৮৫-৮৬)
ওই বইটি আরও বলেছে, ‘জেনারেল জিয়ার কাছে জেনারেল এরশাদ ছিলেন প্রভুভক্ত জীবের মতো।’…‘এক জেনারেলের পরে আরেক জেনারেল ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতি লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে।’ এরপর শেখ হাসিনা যখন লেখেন, ‘জেনারেল এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন কিন্তু আর এক জেনারেলের স্ত্রী ক্ষমতায় বসেছেন। বলতে গেলে শুধু লিঙ্গের পরিবর্তন ঘটেছে, পদ্ধতি বা ব্যবস্থাপনার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন ঘটেনি।’ তখনো আমরা তাঁর সঙ্গে একমত হতে পারি। কিন্তু আজ সময় বদলেছে, জাপাকে আওয়ামী লীগের কৌশলগত মিত্র মানতে হয়েছে রাতকে দিন আর দিনকে রাত আমরা মানতে পারি না। কারণ পরিস্থিতি পাল্টালেই কতিপয় মৌলিক সত্য অসত্য হতে পারে না।
আমরা ‘অ্যাতো রক্ত’ দিয়ে গড়া ইতিহাসের এমন বিকৃতি ঘটতে দিতে পারি না। আমরা তাই একমত হতে পারি না, যখন সেখানে বলা হয়, ‘তাঁকে (এরশাদকে) স্বৈরাচার বলা একটা কালো কৌতুক, একটি মিথ্যাচার। এটা আর হতে দেওয়া যায় না।’ এরপরের ‘গণতন্ত্র দিবস’-এ আমাদের আর কী শুনতে হবে।
জাতীয় পার্টির ‘গণতন্ত্র দিবস’-এর অনুষ্ঠানে দুজন মন্ত্রী ছিলেন। ১১ নভেম্বর প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে কিছু উদ্ধৃতি চয়ন করেছি। জাপা মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘ক্ষমতার পালাবদলে আজকে যাঁরা দেশ পরিচালনা করছেন, তাঁদের বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন, কে নূর হোসেনের হত্যাকারী তা কেন খুঁজে বের করছেন না? ইনভেস্টিগেশন কেন করছেন না? আসামি তো আপনাদের বলয়ের মধ্যেই রয়েছে।’ এ সময় তিনি নূর হোসেনকে নিয়ে রাজনীতি না করতে অনুরোধ জানিয়ে প্রতিপক্ষের উদ্দেশে বলেন, ‘নূর হোসেনকে নিয়ে খেলাধুলা বন্ধ করুন।’ সূচনা বক্তব্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় নূর হোসেনের মৃত্যু নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। ‘নূর হোসেন আত্মাহুতি দিছে, নাকি তাকে দেওয়াইছেন? পুলিশ গুলি করছে সামনে থেকে, তাইলে তো তার বুকে লাগার কথা, কিন্তু লাগছে পিঠে। নূর হোসেনকে বানানো হয়েছিল বলির পাঁঠা। নূর হোসেন দিবস একটা কল্পনাবিলাসী সাজানো নাটক।’ (বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর)
নূর হোসেন আমাদের অনন্য জাতীয় বীর। তাঁকে তারা এভাবে অমর্যাদা করল, তার প্রতিবাদে কাউকে আমরা সোচ্চার হতে দেখলাম না। অবশ্য সময় অতিক্রান্ত হয়নি। আমরা বিশ্বাস করি, সরকারি দলের কাছে এরশাদের কদর ধরে রাখতে হবে, কিন্তু সেটা অতটা অপরিহার্য নয় যে তারা নূর হোসেনের অন্যায্য অযথাযথ ও গর্হিত কটাক্ষের প্রতিবাদ করতে পারবে না। বুঝতে পারি আওয়ামী লীগের এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলে নিশ্চয় এমন অনেক বিবেকবান অবশিষ্ট আছেন, যাঁরা জাতীয় বীরের মানহানির প্রতিবাদ করবেন।
নূর হোসেনের নামে আমরা স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছি। জনগণের অনুভূতি তীব্র বলেই এরশাদ সংসদে দাঁড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু ১০ নভেম্বর গণতন্ত্র দিবস পালন যে লোকদেখানো, এবারে তার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটল।
জাপার ওই সভায় বলা হয়েছে: ‘আর্টিস্ট দিয়ে তার বুকে-পিঠে স্লোগান লিখে, সাজিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে আসা হয়। আমাদের পূজার সময় পাঁঠাকে গোসল করিয়ে, তেল-সিঁদুর মেখে, ঠাকুরের সামনে এনে বলি দেই, ঠিক তেমনি। প্রাণ যায় পাঁঠার, আর পুণ্য হয় আমার। তেমনি নূর হোসেনকে বলির পাঁঠা করা হয়েছিল। আর ফল ভোগ করে অন্যরা। নূর হোসেন গণতন্ত্রের জন্য আত্মাহুতি দেননি। তাঁকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।’
অবশ্য জাতীয় পার্টির সভার বক্তারা নূর হোসেনকে ‘অল্পশিক্ষিত’ বলে সম্ভবত ভুল করেননি। কারণ শিক্ষিত হলে এভাবে কেউ জীবন্ত পোস্টার হতো কিনা সন্দেহ!
নূর হোসেনের বুকে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লেখায় গণতন্ত্র বানানটিতে ভুল ছিল। মূর্ধন্য-ণ-এর স্থলে লেখা হয়েছিল দন্ত্য-ন। সহকর্মী ইফতেখার মাহমুদের মতে, ভুলটা অবশ্য পুরান ঢাকার বনগ্রামের ছেলে নূর হোসেনের ছিল না। বুকে-পিঠে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ওই ‘এপিটাফটি’লেখার দায়িত্ব নিয়েছিলেন পুরান ঢাকার টিকাটুলীর আর্ট হেভেন দোকানের এক চিত্রশিল্পী। কবি শামসুর রাহমান ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের লেখা শহীদ নূর হোসেন (প্রথমা প্রকাশন, ২০১৩) বইটির ভূমিকায় মতিউর রহমান লিখেছেন, ‘নূর হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাঁর বুকে-পিঠের স্লোগানে বানান ভুল থাকা সত্ত্বেও তা অবিকৃত রাখা হলো।’
একটি সাংবিধানিক রেওয়াজের কথা বলে শেষ করব। সংসদীয় গণতন্ত্রে কোয়ালিশন সরকারের ধারণা প্রাচীন। তবে জোট মন্ত্রিসভায় থাকার অর্থ এই নয় যে, দলগুলো তাদের নিজেদের মধ্যকার দলীয় আদর্শ আলাদা আলাদাভাবে প্রচার করতে পারবে। কারণ সকল পরিস্থিতিতে মন্ত্রিসভাকে তার ঐতিহ্যগত কালেকটিভ রেসপনসিবিলিটি বা যৌথ জবাবদিহি বজায় রাখতে হবে।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান সবাইকে টেক্কা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই অগণতান্ত্রিকভাবে র্যাব, পুলিশ, অন্যরা মাদক প্রতিরোধের নামে, সন্ত্রাস দমনের নামে মানুষ মারছে। তাতে গণতন্ত্রের কিছু হচ্ছে না। অথচ এক নূর হোসেনে গণতন্ত্র চলে গেল!’ তাঁদের তুলনা অসার নয়, কিন্তু একটি ভুল তো আরেকটি ভুলের বর্ম নয়।
উন্নত সংসদীয় গণতন্ত্র হলে এতক্ষণে হইচই পড়ে যেত। মন্ত্রী ক্ষমা চাইতেন নচেৎ পদত্যাগ করতেন। দেশটি বাংলাদেশ হওয়ার কারণে হয়তো জাতীয় পার্টিকে দুঃখ প্রকাশ করতেও বাধ্য করা হবে না।
কারও স্মরণ করানো উচিত যে, মন্ত্রী রাঙা কী বলেছেন। নূর হোসেনকে জাতীয় বীর স্বীকার করা যদি কোনো মন্ত্রীর মেনে নেওয়া নৈতিক কারণে অসম্ভব বলে প্রতীয়মান হয়, তাহলে তাঁর উচিত হবে পদত্যাগ করা। কেবিনেট একটি সমন্বিত বডি হিসেবে কাজ করে। বর্তমান কেবিনেট নিশ্চয় নূর হোসেনের প্রতি কটাক্ষ করাকে নীতি হিসেবে মানে না। আর সেটা রাঙা সাহেবদের বিলক্ষণ জানতে হবে।
আমরা বিশ্বাস করি, কেবিনেট তাঁর কটাক্ষ গ্রহণযোগ্য মনে করে না। অনেক সময় কেবিনেট কোনো মন্ত্রীর ব্যক্তিগত আচরণকে সমর্থন করতে পারে। কিন্তু যদি আজ মন্ত্রীরা সমস্বরে প্রকাশ্যে বলেন যে তাঁরা রাঙার ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলেন, তখন তাঁকে সংসদীয় রেওয়াজ অনুযায়ী অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। ১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের পরে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী কৃষ্ণ মেননের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটে। অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন এই নেতা তখন পদত্যাগ করেছিলেন।
আমাদের গণতন্ত্র এখনো শৈশবে। তাই অতটা আশা করি না। কিন্তু তাদের উচিত হবে দুঃখ প্রকাশ করা। সাড়ে ৯ বছরের দীর্ঘ এক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কত সাদামনের মানুষ শুধু গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন। তাঁদের প্রতীক নূর হোসেন। জাতীয় পার্টি নেতাদের ভুলটি হলো, তারা শুধুই ক্ষমতার রাজনীতির কুশীলবদের জায়গা থেকে নূর হোসেনের আত্মদানকে মূল্যায়ন করেছেন। মানুষ নূর হোসেনের অন্তর দেখেননি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ নভেম্বরের স্মৃতিচারণা করে বলেছিলেন, ‘সেদিন আমরা যখন মিছিল শুরু করছিলাম, তখন নূর হোসেন আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি তাকে কাছে ডাকলাম এবং বললাম তার গায়ের এই লেখাগুলোর কারণে তাকে পুলিশ গুলি করবে। তখন সে তার মাথা আমার গাড়ির জানালার কাছে এনে বলল, “আপা আপনি আমাকে দোয়া করুন, আমি গণতন্ত্র রক্ষায় আমার জীবন দিতে প্রস্তুত।”’
আজও কেন নূর হোসেন হত্যার বিচার হয়নি, কেন তদন্ত বন্ধ, সেই প্রশ্ন জাপা তুলেছে বলেই আমরা তাকে নিশ্চয় দুর্বল দাবি বলব না। সেই জিজ্ঞাসা জনমনে থাকাটাই তো স্বাভাবিক।
মিজানুর রহমান খান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক
[email protected]