প্রকৃতির সাংবাদিক বাতাসীর মা ও এক জন সিজারের গল্প
বাতাসী নামে তার কোন মেয়ে ছিল না। তারপরেও তাকে ডাকা হতো বাতাসীর মা। গ্রামে কার বাচ্চা হবে, কাকে দেখার জন্যে বরপক্ষ এসেছে ইত্যাদি সহ আরো আরো শরমের খবর বাতাসের আগে ছড়িয়ে দিত বলে তার নাম হয়েছিল বাতাসীর মা।
সেই বাতাসীর মা একদিন গ্রামের যাকে দেখে তাকেই থামিয়ে বলে, ” আচ্ছা, রহিমের বউ করিমের বউয়ের মুরগীর বাচ্চাটা মেরে ফেলেছে। আমি দেখে ফেলেছি বলে বেচারি আমাকে একটি ডিম ও চার চার মুঠ চাল দিয়েছে। আমি যা দেখেছি তা কাউকে জানাতে নিষেধ করেছে। এখন বলুন তো দেখি, আমি কোন দুঃখে এই খবরটি অন্য কাউকে বলতে যাবো? ‘
এই বাতাসীর মার গল্প শুনে যতই হাসি আসুক না কেন – সে কিন্তু ভবিষ্যতের সাংবাদিকদের জন্যে একটি চমৎকার লেসন রেখে গেছে। প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেয়া এই সাংবাদিক মাঝে মাঝে তার চরিত্রের স্খলন ঘটিয়েছে ( রহিমের বউরা বেকায়দায় পড়ে খুদকুড়া দিতে চাইলে নিয়েছে, মানা করে নি ) কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে প্রকৃতি আরোপিত তার এই পেশার প্রতি অবিশ্বস্ততা দেখায় নি । সে যা দেখেছে, বুঝেছে কিংবা যা অনুভব করেছে – যে কোন পরিস্থিতিতে বা যে কোন অবস্থায় তা পাবলিককে জানিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশে সাংবাদিক জগতে এই ধরনের বাতাসীর মার অভাব প্রচন্ড রকমে অনুভূত হচ্ছে । সারা বিশ্বে কোন কোন ঘটনা তোলপাড় সৃষ্টি করলেও সেই ঘটনা বলার কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশের মূল ধারার মিডিয়ার নীরবতা এবং সামাজিক মিডিয়ার সরবতা এখানে বাতাসীর মার চেয়েও করুণ রসাত্মক সিনড্রোমের জন্ম দিচ্ছে।
সিজার নামক একজন বাংলাদেশী নাগরিকের আমেরিকায় জেলদন্ড হয়েছে। সেই ঘটনাটি এদেশের মিডিয়া দেশবাসীকে জানাতে একটুও বিলম্ব করে নি। মজার ব্যাপার হলো, এই সিজার এবং তার কর্মকান্ড সম্পর্কে জনগণের আগ্রহ এই মিডিয়াই সৃষ্টি করেছে। জনগণের আগ্রহ তুঙ্গে তুলে দিয়ে এখন আচমকা নীরব হয়ে পড়েছে। সেই সিজারকে নিয়ে আমেরিকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলেও আমাদের মিডিয়া মুখে কুলুপ এঁটেছে।
সেই সিজার তার কিছু বক্তব্য তুলে ধরার জন্যে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখা দেশীয় স্টাইলে সেই সাংবাদিক সম্মেলন পন্ড করে দিয়েছে। সিজার কোন রকমে দৌড়ে নিজের জীবন রক্ষা করেছে। ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও যেমন ধান ভানে, তেমনি আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও একই কাজ করবে – এটাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তার বক্তব্য ভুল কিংবা মিথ্যে হলে পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করে সেই কথার প্রতিবাদ জানানো যেতো। কিন্তু হাত থাকতে আওয়ামী লীগ যুক্তির ভাষায় কথা বলবে কেন ? হোক না জায়গাটি মুক্ত বিশ্বের আমেরিকা!
কিন্তু যে কথা বন্ধ করার জন্যে এই আক্রমণটি চালানো হয়েছিল সেই খবরটি আরো গরম মসলা( আক্রমনের ছবি)যুক্ত হয়ে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
সিজারের সেই বক্তব্য এবং তার উপর আক্রমনের পুরো ঘটনার ভিডিওচিত্রটি এখন ইউ টিউব ও ফেইস বুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
কোন কারনে আমাদের মতি, মাহফুজ আনামরা চুপ মেরে গেলেও প্রকৃতি তার বাতাসীর মাকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।