Minar Rashid
একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ বিএনপি নেতা বাবু গয়েশ্বর রায়ের বাড়ির ঠিকানা খুঁজছেন।
কারণ, হাত থাকতে মুখে কী ?
একাত্তরের কিছু শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে গয়েশ্বর বাবুর সাম্প্রতিক বক্তব্যের জবাবে এমনই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন শহীদ বুদ্ধিজীবীর এই কন্যা।
শাওন বলেন, ‘এদের বিরুদ্ধে আর বক্তৃতা বিবৃতি, মানববন্ধন করে লাভ নেই। এবার লড়াইটা করতে হবে সামনা-সামনি। নতুন প্রজন্মকে এ লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘কেউ যদি এ লড়াইয়ে না-ও নামে, আমি একাই লড়বো। কারণ আমি বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছি। প্রয়োজনে আমি একাই এ লড়াই চালিয়ে যেতে চাই।’
শাওন মাহমুদ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘গয়েশ্বরের ঠিকানা চাই। কেউ এ ব্যাপারে সাহায্য করলে বাধিত থাকবো। ওর সাথে সামনা-সামনি কথা হবে। মানববন্ধন আর প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদের নিকুচি করি। কেউ না গেলে আমি একা যাবো।’
কিন্তু ওয়াকেবহাল মহল জানেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও একই বিষয় নিয়ে একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। তার সেই বক্তব্য ফেইস বুক ও ইউ টিউবে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু তখন এই শাওন মাহমুদের মাথায় আজকের মত রক্ত ওঠে যায় নি। বক্তার চেহারা দেখেই তাদের মাথায় চেতনার এই রক্তটি ওঠানামা করে। একই কথা বললেও সেদিন কিন্তু বঙ্গবীরের বাড়ির ঠিকানা এই দিদি খুঁজেন নি।
এ প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়ে গেল। আমাদের এলাকার এক অত্যন্ত প্রতাপশালী ব্যক্তির একটি সিনেমা হল ছিল। সেই প্রতাপশালী ব্যক্তিটি এলাকার বড় মসজিদ কমিটিরও সভাপতি ছিলেন। একদিন সেই সিনেমা হলের ক্যানভাসার নিজের বাড়িতে মিলাদের আয়োজন করে এবং স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম সাহেবকে দাওয়াত করেন। কিন্তু ইমাম সাহেব সেই দাওয়াত গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান । ইমাম সাহেবের কথা, তুমি মাইকের সাহায্যে মানুষকে সিনেমা দেখতে আহ্বান জানাও। কাজেই তোমার বাসায় আমি দাওয়াত খেতে যেতে পারি না। ‘
তখন ঐ লোকটি কাতর স্বরে জবাব দেয়, ‘হুজুর! আমি তো হলাম গিয়ে এই সিনেমা হলের একজন সামান্য কর্মচারী। কিন্তু এই হলের মালিক যদি আজ আপনাকে দাওয়াত করতেন , তখন তো এই ওয়াজ না করে সোজা দৌড়ে যেতেন । আপনার এই ওয়াজ হুজুর আমাগর মত এই গরীব মানুষগর লাগি। ‘
উক্ত হুজুরের জজবার মতই এই শাওন মাহমুদদের চেতনার রঙ । নিজেদের পছন্দের দলটিকে অনৈতিক রাজনৈতিক সুবিধা দিতে গিয়ে শহীদ বাবাদের কতটুকু ক্ষতি করেছেন তা তারা নিজেরাও টের পান নি।
তারা এমন কৌশলে এবং এমন স্পর্শকাতরতায় জড়িয়ে নিজেদের কাজ গুলি করে যেতেন যাতে লোকজন তাদের নিয়ে কোন টু শব্দটিও উচ্চারণ করতে না পারে । তারা কাজ করেন একটি দলের অনুকূলে একজন অন্ধ রাজনৈতিক কর্মীর মত। কিন্তু প্রতিপক্ষ তার জবাব দিতে গেলেই তা একাত্তরের শহীদদের পরিবারের অবমাননা হয়ে পড়ত। ফলে সবাই সব কিছু বুঝতেন, কিন্তু কেউ কিছু উচ্চারণ করতে পারতেন না।
কিন্তু মনে হচ্ছে, সময়ে সেই জটিল ও স্পর্শকাতর গিটগুলিও খুলে পড়ছে। দেশের মানুষের অব্যক্ত কথাগুলি বলার জন্যে কোন না কোনভাবে সেই রাস্তাটি খুলে যাচ্ছে।
প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
মনে হচ্ছে সেই প্রতিক্রিয়ারই সম্মুখীন হচ্ছেন এই শাওন মাহমুদরা।